বুচা শহরে মরদেহের ছড়াছড়ি

আন্তর্জাতিক স্লাইড

এপ্রিল ৪, ২০২২ ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ

কিয়েভ অবরুদ্ধ করে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সরকারকে উৎখাতের যে স্বপ্ন রাশিয়া দেখছিল, তার প্রথম কবর রচিত হয়েছে ইউক্রেনের শহর বুচার একটি সরু রাস্তায়। ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর থেকে রুশ বাহিনী সরে যাওয়ার পর সেখানে বেসামরিক নাগরিক হত্যার আলামত ক্রমেই বাড়ছে। সম্প্রতি সাংবাদিকরা বুচা শহরের রাস্তায় বেশ কিছু লাশ খুঁজে পেয়েছেন। এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে জাতিসংঘ প্রধান এর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

ইউক্রেনের শীর্ষ প্রসিকিউটর জানিয়েছেন, রুশ বাহিনী সরে যাওয়ার পর কিয়েভের কাছের শহরগুলোতে ৪১০টি মরদেহ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার বিভিন্ন ছবি ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মহল থেকে এর তদন্তের দাবি আসে। বুচা শহরের রাস্তায় রাস্তায় লাশের স্তূপ দেখা গেছে। এ ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিন্দা জানানো হচ্ছে। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বুচা শহরে একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।

এক টুইটবার্তায় গুতেরেস বলেন, ‘বুচা শহরের রাস্তায় বেসামরিক নাগরিকদের মরদেহের ছবি দেখে আমি স্তম্ভিত। এটি অপরিহার্য যে, এ ঘটনায় একটি স্বাধীন তদন্তের প্রয়োজন আছে।’

রুশ সৈন্যরা কিন্তু বুচা ছেড়ে যাওয়ার সময় মোটেও মায়াদয়া দেখায়নি। ইউক্রেনীয় বাহিনীর সৈন্যরা যখন শহরটিতে প্রবেশ করে, তখন সেখানকার সড়কে অন্তত ২০ জনের মরদেহ পড়ে ছিল। অনেক মরদেহের হাত ছিল পেছন দিকে বাঁধা। শহরটির মেয়র জানান, তারা ২৮০ জনের লাশ জড়ো করে গণকবর দিয়েছেন।

ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে কিয়েভের কাছে বুচা শহরে পৌঁছে গিয়েছিল রুশ বাহিনী। সেখানে রাশিয়ার একটি ট্যাংক ও সাঁজোয়া বহর ইউক্রেনীয় বাহিনীর অ্যামবুশে পড়ে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। পাঁচ সপ্তাহ ধরে তুমুল লড়াইয়ের পর ওই এলাকা থেকে সরে যায় রুশ বাহিনী। বিভিন্ন দেশ বুচায় রাশিয়ার সেনাদের ওই হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানাচ্ছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বুচা থেকে আসা ছবি অসহনীয় বলে বর্ণনা করেছেন। ন্যাটোর মহাসচিব জেনারেল ইয়েন্স স্টলটেনবার্গও বুচায় বেসামরিক নাগরিক হত্যা ‘মেনে নেওয়া যায় না’ বলে মন্তব্য করেছেন। সিএনএন-কে তিনি বলেন, ইউরোপ এমন বর্বরতা অনেক দশক ধরে দেখেনি। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনাই যুদ্ধ বন্ধের প্রয়োজনীয়তা সামনে নিয়ে এসেছে।

রুশ বহরের ওপর ইউক্রেনীয় বাহিনী তুরস্ক থেকে আনা বেরাকতার অ্যাটাক ড্রোন দিয়ে হামলা চালায় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ইউক্রেনের আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরাও সে সময় ওই এলাকায় তৎপর ছিল।

এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও। দেশটির এক মুখপাত্র বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান নৃশংসতায় প্রতিটি দিন কী ঘটেছে তার বাস্তব চিত্র এটি। জার্মানি বুচায় রাশিয়ার হত্যাযজ্ঞকে ‘ভয়াবহ যুদ্ধাপরাধ’ আখ্যা দিয়েছে এবং যুক্তরাজ্য এই বেপরোয়া হত্যাযজ্ঞের তদন্ত আহ্বান করেছে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের নামে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করেছে রুশ বাহিনী। সেই সত্য আড়াল করতে ক্রেমলিন বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগও করেন তিনি।

তবে বরাবরের মতো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অস্বীকার করেছে রাশিয়া। এক বিবৃতিতে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করে, এ ঘটনায় তাদের কোনো হাত নেই। ইউক্রেনের প্ররোচনাতেই এমনটি হয়েছে। শহরটি দখলের সময় কোনো বেসামরিক নিহত হয়নি বলে জানায় তারা। এসব তথ্য ইউক্রেনীয় বাহিনীর সৃষ্টি বলেও উল্লেখ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *