অধিনায়ক বাবর আজম ও ওপেনার ইমাম উল হকের জোড়া সেঞ্চুরিতে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়াকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে পাকিস্তান। ৩৪৯ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়লো পাকিস্তান। ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ৩৪৮ রান করে অস্ট্রেলিয়া। রেকর্ড জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা আনলো পাকিস্তান। বাবর ১১৪ ও ইমাম ১০৬ রান করেন।
লাহোরে টস জিতে প্রথমে বোলিং করতে নামে পাকিস্তান। ইনিংসের তৃতীয় বলেই পাকিস্তানকে সাফল্য এনে দেন পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চকে খালি হাতে বোল্ড করেন আফ্রিদি।
শুরুতে উইকেট হারালেও, সেটি অস্ট্রেলিয়ার জন্য বড় সমস্যা হয়নি। কারন দ্বিতীয় উইকেটে পাকিস্তানের বোলারদের উপর ছড়ি ঘুড়িয়েছেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ট্রাভিস হেড ও বেন ম্যাকডারমট। ১৪৪ বল খেলে ১৬২ রান যোগ করেন তারা।
সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে ৮৯ রানে আউট হন হেড। হেডকে শিকার করে পাকিস্তানকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন স্পিনার জাহিদ মাহমুদ। ৭০ বল খেলে ৬টি চার ও ৫টি ছক্কা মারেন হেড।
হেড না পারলেও সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়েছেন ম্যাকডারমট। নিজের চতুর্থ ওয়ানডেতে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান ম্যাকডারমট।
৩৫তম ওভারে দলীয় ২৩৭ রানে বিদায় নেন ম্যাকডারমট। পেসার মোহাম্মদ ওয়াসিমের প্রথম শিকার হওয়ার আগে ১০৮ বল খেলে ১০টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১০৪ রান করেন ম্যাকডারমট।
মিডল-অর্ডারে মার্নাস লাবুশেন ৪৯ বলে ৫৯ রানের ইনিংস খেলে অস্ট্রেলিয়াকে বড় সংগ্রহের পথে রাখেন। তবে অস্ট্রেলিয়াকে রানের পাহাড়ে বসিয়েছেন মার্কাস স্টয়নিস ও সিন অ্যাবট।
সপ্তম উইকেটে ২৩ বলে ৪২ রানের জুটি গড়েন স্টয়নিস ও অ্যাবট। দু’জনই শিকার হয়েছেন আফ্রিতির । ৪৯ রানে স্টয়নিস ও ২৮ রানে অ্যাবটকে থামান আফ্রিদি। ৩৩ বল খেলে ৫টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন স্টয়নিস। আর ১৬ বলে ৪টি চারে ২৮ রান করেন অ্যাবট। ফলে ৩৪৮ রানের সংগ্রহ পায় অস্ট্রেলিয়া। পাকিস্তানের মাটিতে এটিই সর্বোচ্চ দলীয় রান অস্ট্রেলিয়ার।
বল হাতে পাকিস্তানের আফ্রিদি ৬৩ রানে ৪টি ও ওয়াসিম ৫৬ রানে ২ উইকেট নেন।
জয়ের ৩৪৯ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে দারুন সূচনা করেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার ফখর জামান ও ইমাম উল হক। ১৮ দশমিক ৫ ওভারে ১১৮ রান তুলেন তারা। এরমধ্যে ৬৭ রান অবদান রেখে ফিরেন ফখর। ৬৪ বল খেলে ৭টি চার ও ২টি ছক্কা মেরে অস্ট্রেলিয়ার স্টয়নিসের শিকার হন তিনি।
ফখরের সঙ্গেদুর্দান্ত শুরুর পর, অধিনায়কের বাবরের সাথেও শতরানের জুটি গড়েন ইমাম। এই জুটি গড়ার পথে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৯০ বলে নবম সেঞ্চুরি তুলে নেন ইমাম। প্রথম ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করেও দলকে জেতাতে না পারা ইমাম থামেন ১০৬ রানে। অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার এডাম জাম্পার বলে আউট হন ৯৭ বল খেলে ৬টি চার ও ৩টি ছক্কা মারা ইমাম।
৩৫তম ওভারে দলীয় ২২৯ রানে ইমামের বিদায়ের পর ক্রিজে বাবরের সঙ্গী হন উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ান। দলের রানের চাকা ঘুড়ানোর সাথে-সঙ্গে৭৩ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৫তম সেঞ্চুরি তুলে নেন বাবর। এতে ওয়ানডেতে দ্রুততম ১৫তম সেঞ্চুরির নয়া রেকর্ড গড়েন বাবর। ৮৩ ইনিংসে ১৫তম সেঞ্চুরি তুলে দক্ষিণ আফ্রিকার হাশিম আমলার রেকর্ড ভাঙ্গেন বাবর। ৮৬ ইনিংসে ১৫তম সেঞ্চুরি করেছিলেন আমলা।
তৃতীয় উইকেটে রিজওয়ানের সঙ্গে৬১ বলে ৮০ রান তুলে ফিরেন বাবর। অস্ট্রেলিয়ার পেসার নাথান এলিসের শিকার হন তিনি। ৮৩ বল খেলে ১১টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন বাবর।
বাবরের পর রিজওয়ানকেও হারায় পাকিস্তান। পাকিস্তানের জয়ের পথটা সহজ করে দিয়ে ৮ রানের ব্যবধানে ফিরেন বাবর-রিজওয়ান। এমন অবস্থায় জয়ের জন্য শেষ ২৫ বলে ৩২ রান দরকার ছিলো পাকিস্তানের। এক ওভার বাকী রেখে ৩৪৯ রানের টার্গেট স্পর্শ করে ফেলেন খুশদিল শাহ ও ইফতেখার আহমেদ।
নিজেদের ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে ম্যাচ জয়ের নয়া রেকর্ড গড়লো পাকিস্তান। এর আগে ২০১৪ সালে মিরপুরে বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেয়া ৩২৭ রানের টার্গেট টপকে গিয়েছিলো পাকরা।
শেষ পর্যন্ত খুশদিল ১৭ বলে অপরাজিত ২৭ ও ইফতেখার ৮ রানে অপরাজিত থাকেন। ২৩ রান করেন রিজওয়ান। অস্ট্রেলিয়ার জাম্পা ৭১ রানে ২ উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন পাকিস্তানের বাবর।
আগামীকাল লাহোরেই সিরিজ নির্ধারণী ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া।