পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন। উভয়পক্ষই প্রায় ‘প্রস্তুত’। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তুরস্ক। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেন, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে ন্যাটোর সদস্য হিসেবে মানবেন না তিনি। তবে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, তাদের কিছু শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো মানলেই দুই দেশকে ন্যাটোর সদস্য করতে আপত্তি জানাবে না তুরস্ক।
রোববার (১৫ মে) তুর্কি জার্মানির বার্লিনে ন্যাটো দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের শীর্ষ বৈঠকে যোগ দেন তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলু। সেখানেই নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন এই তুর্কি নেতা। এদিন তিনি সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করেন।
চালুসোগলু মূলত দুটি শর্ত দিয়েছেন, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে অবশ্যই কুর্দি সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সমর্থন ও সহযোগিতা বন্ধ করতে হবে এবং তুরস্কের ওপর কিছু অস্ত্র রফতানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে।
চাভুসোগলু বলেন, তুরস্ক কাউকে হুমকি দিচ্ছে না বা পরিস্থিতির সুবিধা আদায় করছে না। কিন্তু কুর্দি জঙ্গিগোষ্ঠী পিকেকের প্রতি সুইডেনের সমর্থনের বিষয়ে কথা বলছে। এই গোষ্ঠীটিকে তুরস্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
এদিনের ন্যাটোর শীর্ষ বৈঠকে ফিনল্যান্ড নিশ্চিত করেছে, তারা ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করবে। সুইডেনও একই পথ অনুসরণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মূলত ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর এই পথে হাঁটছে নরডিক দেশ দুটো। তবে তুরস্কের উদ্বেগ এ ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ, ন্যাটোর সম্প্রসারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে জোটের ৩০ সদস্যের সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই বিষয়ে অবশ্যই নিরাপত্তা নিশ্চয়তা থাকতে হবে। তাদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সমর্থন বন্ধ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের প্রতিরক্ষা খাতে তুর্কি পণ্যের ওপর রফতানি নিষেধাজ্ঞারও অবসান হতে হবে।
চাভুসোগলু বলেন, আমাদের অবস্থান একেবারে উন্মুক্ত ও স্পষ্ট। এটি কোনো হুমকি নয়, একটি কোনো দর-কষাকষি নয়, যেখানে আমাদের সুবিধা আদায় করছি। এটি পপুলিজম না। এটি দুই সম্ভাব্য সদস্য রাষ্ট্রের সন্ত্রাসকে সমর্থনের বিষয়। এটি আমাদের দৃঢ় পর্যালোচনা। আমরা এই তথ্য বিনিময় করেছি।
শুক্রবার সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের জোটে যোগদানের বিপক্ষে অবস্থানের কথা জানিয়ে ন্যাটো মিত্র ও নরডিক দেশ দুটিকে অবাক করে দেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান। তবে শনিবার তার মুখপাত্র জানিয়েছেন, তুরস্ক দেশ দুটির যোগদানের দরজা বন্ধ করে দেয়নি।
চাভুসোগলু বলেছেন, ৭০ বছর আগে ন্যাটোতে যোগ দেওয়া তুরস্ক জোটটির মুক্তদ্বার নীতির বিরোধিতা করে না। তিনি জানান, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠক ভালো ছিল এবং তারা আঙ্কারার বৈধ উদ্বেগ নিরসনে পরামর্শ দিয়েছেন, যা তুরস্ক বিবেচনা করবে।
তুর্কি মন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন, তুরস্কের অবস্থানের শ্রদ্ধাশীল নয় সুইডেন। সপ্তাহান্তে সুইডেনের স্টকহোমে পিকেকে জঙ্গিরা বৈঠক করেছে।