এপ্রিল ২১, ২০২২ ৮:৪২ পূর্বাহ্ণ
আপনার বয়স কত? খুবই সাধারণ একটি প্রশ্ন। এর উত্তরটাও সহজ। কিন্তু দক্ষিণ কোরীয়দের জন্য এমন প্রশ্নের সোজাসাপ্টা উত্তর দেওয়াটা একটু কঠিনই। বয়স গণনার কিছু অদ্ভূত রীতিই এর কারণ।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় যখন একটি শিশু জন্মগ্রহণ করে তখন তার বয়স ধরা হয় এক বছর। এরপর প্রথম নববর্ষের দিনে তার বয়স আরেক বছর বেড়ে যায়। এর মানে কোনো শিশু যদি ডিসেম্বর মাসে জন্ম নেয় কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাকে দুই বছর বয়সী বলে হিসাব করা হয়।
বয়স গণনার এই শতাব্দীপ্রাচীন ‘কোরীয় পদ্ধতি’ শিগগিরই বদলাতে যাচ্ছে। অন্তত দক্ষিণ কোরিয়ার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইওন সুক-ইওল তেমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন। বয়স গণনার প্রাচীন এ পদ্ধতি বিলোপ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা হস্তান্তর কমিটির প্রধান লি ইয়ং-হো বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়াকে বর্তমানে যেসব পদ্ধতিতে বয়স গণনা করা হচ্ছে তা আরও মানসম্মত করার চেষ্টা করবে নতুন সরকার। তিনি আরও বলেন, বয়স গণনার বিভিন্ন পদ্ধতির ফলে ‘বিভ্রান্তি ও অপ্রয়োজনীয় সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। নতুন প্রস্তাবটি অনেকে গ্রহণ করলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটি সত্যিই বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে চরম সন্দেহ রয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় বয়স গণনা করার অন্তত তিনটি পদ্ধতি রয়েছে। সরকারিভাবে দেশটি আন্তর্জাতিক গণনা পদ্ধতি ব্যবহার করে আসছে। যা সাধারণত একজন ব্যক্তির জন্ম তারিখ ব্যবহার করে নির্ণয় করা হয়। এই প্রক্রিয়া ১৯৬২ সাল থেকে প্রশাসনিক কার্যক্রমে ব্যবহার হচ্ছে।
বয়স গণনার আরও অন্য একটি সরকারি সূত্র রয়েছে। একটি শিশুর জন্ম হয় শূন্য বছর বয়সে। এরপর প্রতি বছরের জানুয়ারির ১ তারিখে তার বয়স এক বছর পূর্ণ হয়। সেই অনুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে জন্ম নেওয়া একটি শিশু ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ২ বছর বয়সী হবে। কিন্তু সেই বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সত্যিকারের শিশুটির দুই বছর পূর্ণ হয় না।
এই পদ্ধতিটি প্রাথমিকভাবে আইরি বিধান অনুযায়ী বয়স নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয় যা জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে প্রভাবিত করে।
এরপর প্রাচীন ‘কোরীয়’ বয়স গণনা পদ্ধতি, যা সাধারণত সমাজের সবাই ব্যবহার করে। এই পদ্ধতিতে কারও বয়স তার জন্মদিনেই এক বছর ধরা হয়। জন্মের পর প্রথম নববর্ষের দিনে তার বয়স আরও এক বেড়ে দুই বছর হয়ে যায়।
এই তিন পদ্ধতিতে বয়স গণনার দৃষ্টান্ত হিসাবে কোরিয়ার জনপ্রিয় ব্যান্ড দল বিটিএস’র ভি কিম তাইহ্যুংয়ের বয়সের কথা ধরা যেতে পারে। ভি কিমের জন্ম ৩০ ডিসেম্বর, ১৯৯৫। আন্তর্তাজিক পদ্ধতিতে এখন তার বয়স ২৬। কোরিয়ার আরেক সরকারি পদ্ধতি অনুসারে তার বয়স এখন ২৭। আর প্রাচীন কোরীয় পদ্ধতিতে তার বয়স দাঁড়ায় ২৮। কারও কাছে এটি কেবল একটি সংখ্যা হতে পারে। কিন্তু কোরিয়াতে বয়স খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দক্ষিণ কোরীয়দের কাছে কারও নাম খুঁজে বের করার চেয়ে কেউ তার থেকে বড় কি না তা খুঁজে বের করাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেই ব্যক্তিকে কীভাবে সম্বোধন করতে হবে তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
হ্যানসুং ইউনিভার্সিটির আইন ও নীতি বিভাগের অধ্যাপক কিম ইউন-জু’র মতে, ‘বিশ্বায়ন কোরীয়দের আন্তর্জাতিক বয়স সম্পর্কে আরও সচেতন করেছে। এটি তরুণদের উপর প্রভাব ফেলে কারণ তারা মনে করে যে এই গণনা পদ্ধতির মাধ্যমে কোরিয়ানদের উপহাস করা হচ্ছে।’
পিপল পাওয়ার পার্টির রক্ষণশীল প্রার্থী ইউন সিওক-ইওল প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণার দিন থেকেই বয়স গণনার প্রাচীন পদ্ধতি বাতিল করার চেষ্টা করছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত সফল হবেন কিনা তা সময়ই বলে দেবে।
তবে আরও আগে থেকেই দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা সম্মিলিত বয়স গণনা করার চেষ্টা করেছেন। এ জন্য ২০১৯ ও ২০২২ সালে দুজন আইনপ্রণেতা একটি বিলের প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু এটি দক্ষিণ কোরিয়ার আইনসভা পাস করেনি।