ভিনি, ভিডি, ভিসি- পন্টুস রাজ্য দখলের পর রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার এই তিন শব্দে নিজের জয়ের কথা বলেছিলেন। তারপর বহুল চর্চিত বাক্য ব্যবহৃত হয়েছে অনেকবার। এবার আরও একবার ব্যবহার করা চলে বাংলাদেশ ক্রিকেটে নিজের আগমনেই সবার মন জয় করে নেওয়া মাহমুদুল হাসান জয়ের বেলাতে। তিনি যে এসেই নিজের ব্যাটে জয় করে নিয়েছেন ক্রিকেট ভক্তদের। ২২ গজে ব্যাট হাতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করছেন জুলিয়াস সিজারের মতোই প্রবল পরাক্রমে। জয় এবার প্রশংসা পেলেন বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্সের কাছ থেকে।
আসলেন, দেখলেন আর জয় করলেন। মাহমুদুল হাসান জয়ের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের যাত্রাটা এমন বললে ভুল হওয়ার কথা নয়। নামের সাথে কাজের যেন দারুণ সন্ধি গড়েছেন এই ডানহাতি। বিশেষ করে সাদা পোশাকেতো হয়ে উঠছেন আস্থার প্রতীক।
মাত্র চার মাসের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। তিন টেস্টের ক্যারিয়ারে এরই মাঝে খেলে ফেলেছেন সাড়ে পাঁচশোর বেশি বল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টেই পেলেন সেঞ্চুরির দেখা। আর সেই সেঞ্চুরি যেনতেন সেঞ্চুরি নয়, ব্যাট হাতে জয় যে ধৈর্য আর প্রভাব বিস্তারকারী খেলা দেখিয়েছেন তাতেই তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ক্রিকেটবোদ্ধারা।
বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স আজ প্রশংসায় ভাসিয়েছেন জয়কে। তিনি বলছেন, বাংলাদেশের ব্যাটারদের এমন ইনিংস খেলতে খুব কমই দেখেছেন তিনি। জয়ের মতো নিখুঁত ব্যাট করতে তিনি খুবই কম বাংলাদেশিকেই দেখেছেন।
ডারবান থেকে অনলাইনে এক বার্তায় সিডন্স বলেন, জয়ের সঙ্গে দুই মাসের মতন কাজ করেছি। এর মধ্যেই সে তার প্রতিভা দিয়ে নজর কেড়েছে। তার ইনিংসটি গড়া ধৈর্য আর পরিকল্পনায়। বাড়তি কিছুর চেষ্টা করেনি সে। বাজে কোন শটও খেলেনি সে। জয় যেভাবে ব্যাট করেছে তাতে আমরা সবাই গর্বিত। ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাট করাটা বাংলাদেশের জন্য বিশেষ কিছু।
ডারবান টেস্টের তৃতীয় দিনে বাংলাদেশ উইকেট হারিয়েছে নিয়মিত বিরতিতে। তবে একদিকে অবিচল থেকেছেন জয়। ২৬৭ রানে যখন মেহেদী হাসান মিরাজ আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন তখনও বাংলাদেশ পিছিয়ে ১০০ রানে। সেখান থেকে টেলএন্ডার নিয়ে শুরু হয় জয়ের সংগ্রাম। বাংলাদেশের ইনিংসে এর পর আরও ৩১ রান যোগ হয় যাতে শেষ দুই ব্যাটার খালেদ ও এবাদতের অবদান শূন্য রান। শেষ উইকেট হিসেবে জয় যখন আউট হয়ে যান বাংলাদেশ তখন প্রায় ৩০০ ছুঁইছুঁই।
১৩৭ রানের ইনিংস খেলার পথে জয় ক্রিজে ছিলেন ৪৪২ মিনিট। বল মোকাবেলা করেছেন ৩২৬টি। দক্ষিণ আফ্রিকায় গত ১৫ বছরে মাত্র ৪ জন এশিয়ান ওপেনিং ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করেছে। ওয়াসিম জাফর, করুনারাত্নে , কেএল রাহুল এবং সর্বশেষ জয়।
এশিয়ান ব্যাটারদের মধ্যে মধ্যে মাত্র তিনজনই ইনিংসে ৩০০ এর অধিক বল খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। সবার উপরে রাহুল দ্রাবিড়। ‘দ্য ওয়াল’ দ্রাবিড়ের ৩৬২ বলের ইনিংসের পরই জয়ের ৩২৬ বলের এই ইনিংস। তৃতীয় স্থানে থাকা শচীন খেলছিলেন ৩১৪ বল!
মূলত জয়ের এই ইনিংসটাই এখনও বাংলাদেশকে টিকিয়ে রেখেছে এই টেস্টে। সিডন্সেরও একই মত। তিনি মনে করেন, এই টেস্টে এখনও ভালো সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের।
সিডন্স বলেন, আমার মনে হয়, এই ম্যাচে এখনও বাংলাদেশের সম্ভাবনা আছে। তার জন্য চতুর্থ দিনে প্রথম সেশনে অন্তত তিন উইকেট তুলে নিতে হবে। এই উইকেটে ২৮০ থেকে ৩০০ রান করা সম্ভব। এর বেশি রান হলে সেটা খুব কঠিন হয়ে যাবে।
ডারবান টেস্টের আগে বাংলাদেশি ব্যাটারদের ১৬ অর্ধশতক আছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। শতক পায়নি কোন ব্যাটার। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে মুমিনুল হকের ৭৭ রানের ইনিংসটি ছিল এর আগে বাংলাদেশি হিসেবে সর্বোচ্চ।
অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি আছে বাংলাদেশি চার ব্যাটারের। আর ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে শতকের মাইল ফলক স্পর্শ করেছেন মাহমুদুল হাসান জয়।