‘এপ্রিল ফুল’ ডে কেন পালন করা হয় জানেন?

ফিচার স্পেশাল

এপ্রিল ১, ২০২২ ২:৫৮ অপরাহ্ণ

আজ ১ এপ্রিল। প্রত্যেক বছর ১ এপ্রিল এপ্রিল ফুলস ডে বা বোকা দিবস হিসেবে পালন করা হয় পুরো বিশ্ব জুড়ে। মাঝে মাঝে একে সবাইকে বোকা বানানোর দিন বলে উদযাপন করা হয়। এদিনটি তাকে ধোঁকা দেয়ার দিন। এদিনটিতে মিথ্যে বলে কষ্ট দিয়ে কিংবা প্রতারণা করে হাস্যরস সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়।

অন্যকে বোকা বানানোর ছক কষার ফাঁকে ফাঁকে নিশ্চয় আপনি নিজেও কয়েক বার বোকা বনে গিয়েছেন বন্ধুবান্ধবের কাছে! নিশ্চয় আপনার ফোনে ভেসে এসেছে এমন কোনো বার্তা , যা খুলেই বোকা হয়েছেন আপনি? মজা পেয়েছেন নিশ্চয়, মজা দিয়েওছেন অন্যকে। কিন্তু এত বোকামির আয়োজন করতে এই দিনটাকেই বেছে নেয়া হয় কেন জানেন কি? জানেন কি, এপ্রিলের প্রথম দিনটাই কেন সারা বিশ্বের বোকা হওয়ার দিন?

একটি সূত্র বলে, আনুমানিক ১৭০০ সাল থেকে ১ এপ্রিল ইংরেজি কৌতুক শিল্পীরা বাস্তবে ঘতা নানা রকম সামাজিক বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে চূড়ান্ত মজা করা শুরু করলেন। সেই সময় থেকেই ব্যাপারটা প্রায় বার্ষিক উদযাপনের মাত্রায় পৌঁছতে থাকল। সে না হয় জানা গেল। কিন্তু হঠাৎ এই দিনটাই কেন ?

সত্যি কথা বলতে, বোকা দিবসের ইতিহাস ঘেঁটে নানা রকম ভাবে বোকা হওয়া এবং বোকা বানানোর বহু গল্প পাওয়া গেলেও, এই দিনটাই কেন, তার কোনো নির্দিষ্ট উত্তর মেলেনি। তবে বিশ্ব জুড়ে এপ্রিল ফুল’স ডে-র মাহাত্ম্য নিয়ে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়।

তারই মধ্যে একটা হলো ১৫৮২ সালে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার থেকে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার মেনে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ফ্রান্স। দেশে এত কাল চালু থাকা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, নববর্ষ উদযাপিত হতো মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে ১লা এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে। ১ এপ্রিল থেকেই শুরু হতো নতুন বছর। কিন্তু নতুন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে আবার ১ লা জানুয়ারি শুরু হল বছরের প্রথম দিন।

সরকারি ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও, সারা দেশের মানুষের কাছে এই বিরাট বদলের খবর পৌঁছেছিল বেশ দেরিতে। এই বদলের কথা জেনেও অনেক ফরাসি নাগরিক আবার ঠিক মতো বুঝে উঠতে পারছিলেন না গোটা বিষয়টা। আর এই বিভ্রান্তি থেকেই তারা অনেকে নববর্ষ হিসেবে ১লা এপ্রিলে বর্ষ বরণের উদযাপন করে ফেলতেন। এ দিকে ১লা এপ্রিলের নতুন বছর পালন তো তখন ইতিহাস! তাই এই সব বোকাদের নিয়ে রসিকতা করতেই এপ্রিল ফুল’স ডে বা অল ফুল’স ডে-র সূচনা হয় বলে মনে করেন এক দল ঐতিহাসিক।

আবার অন্য একটি তত্ত্ব অনুযায়ী, এপ্রিল ফুল’স ডে-কে প্রাচীন রোমের হিলারিয়া উৎসবের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। ওই উৎসবে স্থানীয় রীতি মেনে, সকলে উদ্ভট ছদ্মবেশ ধারণ করতেন। এর ফলে, তুমুল হাসাহাসি হতো নিজেদের মধ্যে। এই অঞ্চলে আবার অনেকে মনে করতেন, ১ লা এপ্রিল হলো বসন্তের প্রথম দিন। প্রকৃতি তাই এই দিন আসন্ন এবং অনিশ্চিত আবহাওয়ার ইঙ্গিত দিতে প্রকৃতির সন্তানদের বোকা বানাতেন বলে মনে করেন অনেকে।

আবার ইউরোপের মধ্যযুগের ইতিহাসে ১ জানুয়ারি ফ্রান্সে ‘ফিস্ট অফ ফুলস’ নামে একটি উৎসব পালিত হতো বলে জানা যাচ্ছে ইতিহাস থেকে। এই অনুষ্ঠানে খ্রীষ্টান ধর্ম রীতি অনুসারে গির্জার এক জন পোপ নির্বাচিত হতেন। এই উপলক্ষে এই দিন গির্জার বিভিন্ন আধিকারিকেরাও নিজেদের কাজ অদল-বদল করে নিতেন।

তবে ষোড়শ শতকের পর ফ্রান্সে এই উৎসবের পরিবর্তে জায়গা করে নেয় ১ এপ্রিলে পালিত হওয়া ‘পয়জন দি’এভরিল ’ নামের অন্য একটি উৎসব। পয়জন দি’এভরিল ’ – এর মানে হলো এপ্রিল ফিশ এই দিনে বন্ধুদের পিঠে কাগজের তৈরি মাছ আটকে মজা করা হতো। স্কটল্যান্ডে এই অনুষ্ঠানকে বলা হতো ‘গকি ডে’।

সেখানে আবার ১ এপ্রিল নয়, ২ এপ্রিল পালিত হত এই ‘গকি ডে’। পরবর্তী কালে এই দিনই, সুযোগ বুঝে বন্ধুদের পিঠে মাছের বদলে ‘কিক মি’ লেখা কাগজ আটকে দেয়া হতো। আর তার ফলাফল যা হতো, তাতে যে নিরীহ মানুষেরা খুব খারাপ রকমের বোকা বনতেন, তা তো আন্দাজ করাই যাচ্ছে!

তবে সময় গড়িয়েছে দ্রুতগতিতে। দুনিয়া অনেক স্মার্ট হয়েছে গত কয়েক বছরে। আজকের এই চরম ব্যস্ত এবং আধুনিক দুনিয়ায় কেউ যেচে বোকা বনতে চায় না। কিন্তু সারা বছর ধরেই একে অপরকে বোকা বানিয়ে বহু উদ্দেশ্য হাসিল করে নেয় অনেকে। এই ‘বোকা’ হওয়া বা বানানোর মধ্যে রয়েছে শঠতা। রয়েছে আঘাত করার চেষ্টাও।

কিন্তু ‘এপ্রিল ফুল’ বানানো অবশ্যই নিখাদ হাসির খোরাক ছাড়া কিছুই নয়। তাই এই সারা বছরের বোকা বনা এবং বানানোর একঘেয়ে জীবনে ১ লা এপ্রিল যেন বলে কয়ে আসা ক্ষণিকের আনন্দ! মেতে উঠুন আনন্দে। কাউকে আঘাত না করে, মজা করুন। মজার মানুষ হিসেবে খানিক বোকা হয়ে যান নিজেও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *