বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দুই দিনের দশম প্রতিরক্ষা সংলাপ আজ থেকে ঢাকায় শুরু হচ্ছে। এএফডি কার্যালয়ে সকাল ১০টায় শুরু হওয়া এ সংলাপ দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেবে বাংলাদেশ।
এছাড়া আলোচনায় গুরুত্ব পাবে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা, সামরিক বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা ও সফর বিনিময়, দুর্যোগ মোকাবিলা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন।
১০ম প্রতিরক্ষা সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দিতে মঙ্গলবার বাংলাদেশে এসেছেন ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডের কৌশলগত পরিকল্পনা ও নীতিবিষয়ক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল টমাস জে জেমস।
এতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের (এএফডি) অপারেশন ও পরিকল্পনা অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুসাইন মুহাম্মাদ মাসীহুর রাহমান।
এ সংলাপে ইন্দো-প্যাসিফিক বা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল (আইপিএস) এবং ওয়াশিংটন প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তির অংশ হিসাবে জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (জিসোমিয়া) ও দ্য অ্যাকুইজেশন অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট (আকসা) গুরুত্ব পাবে।
দুদেশই সংলাপে এই বিষয়গুলোতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করবে বলে সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে সমরাস্ত্র ক্রয়সংক্রান্ত বিষয়ও আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইন্দো-প্যাসিফিকে চীনের আধিপত্য ঠেকাতে চায় বাইডেন প্রশাসন। এজন্য ভারতসহ এ অঞ্চলের বন্ধু দেশগুলোকে নিজেদের পাশে রাখতে মরিয়া যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণেই তারা আইপিএসেও গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এছাড়া অবাধ, মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক চায় যুক্তরাষ্ট্র।
এবারের প্রতিরক্ষা সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বের বিষয়ে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেন, ‘অবাধ, মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মনোভাব অভিন্ন।
পারস্পরিক লক্ষ্য অনুসরণে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড ঢাকায় ২৩-২৪ আগস্ট দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সংলাপে বসবে। এতে দুদেশের সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বেসামরিক ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন।
তারা সামরিক শিক্ষা, প্রতিরক্ষা এবং আগামী বছর অনুষ্ঠেয় দুর্যোগ মোকাবিলা অনুশীলনসহ আসন্ন সামরিক অনুশীলন নিয়ে আলোচনা করবেন। ওয়াশিংটন সূত্র জানিয়েছে, সংলাপে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশ কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে সে ব্যাপারে জানতে চাইবে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে জিসোমিয়া ও আকসা নিয়েও কথা বলবেন মার্কিন প্রতিনিধি।
সূত্র জানায়, ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়নে সরকার সামরিক বাহিনীকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে চায়। একই সঙ্গে নিজেদের সক্ষমতা, যুগোপযোগী হওয়া ও ভূরাজনৈতিক কৌশলগত বিবেচনায় সমরাস্ত্র ক্রয়ে রাশিয়া নির্ভরতা কমিয়ে অন্য দেশের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকেও অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র কেনার কথা ভাবছে বাংলাদেশ। গত বছরের মে মাসে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত নবম প্রতিরক্ষা সংলাপে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল।
আর চুক্তি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সমরাস্ত্র বিক্রি করতে পারে না বলে জিসোমিয়া স্বাক্ষরে জোর দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রস্তাবিত চুক্তির ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। এবারের প্রতিরক্ষা সংলাপে স্পষ্ট অবস্থান জানানো হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দুই প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে ধীরে চলার পক্ষে সরকার। সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।