মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় সংঘাতপূর্ণ রাজ্য রাখাইনে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ক্ষুধাকে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে দেশটির বিতর্কিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। জানা গেছে, চেকপয়েন্ট বসিয়ে, রাস্তা ও জলপথ বন্ধ করে এবং মানবিক সংগঠনগুলোকে প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে ত্রাণ সাহায্য পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে জান্তা সরকার।
জাতিসংঘের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, রাখাইনের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সহায়তা কর্মীরা সংবাদমাধ্যমকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য জানান।
মিয়ানমারের জাতিগত বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর প্রবল প্রতিরোধের মুখে এখন মিয়ানমার জান্তা। সংঘাতের কেন্দ্রে অবস্থান রাখাইনের। গত নভেম্বরে জান্তার সঙ্গে এক বছরের যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে রাখাইন রাজ্যের অন্তত ১০টি শহরতলীর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে অঞ্চলটির শক্তিশালী জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মি (এএ)।
মিয়ানমারের অন্যান্য অঞ্চলের মতো রাখাইনেও একের পর এক সেনাঘাঁটির দখল হারিয়ে জান্তা সরকার এখন ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। রাখাইনের একটি মঠে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেওয়া খিন মার চো তার চার বছর বয়সী ছেলের জন্য উদ্বিগ্ন। কারণ মঠে অস্থায়ী বাস্তুচ্যুত শিবিরে ছেলেকে খাওয়ানোর মতো যথেষ্ট খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। আর এটাই এখন অসংখ্য রাখাইনবাসীর বাস্তবতা।
খিন মার চো জানান, রাখাইন রাজ্যের বাইনে ফিউ গ্রামে আক্রমণ চালিয়ে সব পুরুষকে আটক করে জান্তা সেনারা। খিনের ভাই ও অন্য প্রতিবেশীদের গুলি করে হত্যা করে তারা। খিন মার চোর মতো জীবিতরা আঞ্চলিক রাজধানী সিত্তের ঠিক বাইরে একটি মঠে পালিয়ে গেছেন। সেখানে এক ভিক্ষু প্রায় ৩০০ মানুষকে খাওয়ানোর জন্য সংগ্রাম করছেন।
মানবিক সহায়তা দানকারী কর্মকর্তারা বলেছেন, আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে বেসামরিক মানুষকে ক্ষুধায় কাতর করতে চাচ্ছে জান্তা। তারা এমন সব কৌশল ব্যবহার করছে যেগুলোকে জাতিসংঘের কর্মকর্তা ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বারবার যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে বর্ণনা করেছে। একজন জ্যেষ্ঠ সহায়তা কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা পরিষ্কার যে জান্তা খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।’
এ ব্যাপারে সামরিক জান্তা বলেছে, তারা আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সহায়তা গোষ্ঠীগুলোর প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নেই এমন এলাকায় সাহায্য কর্মীরা নিরাপদে চলাচল করতে পারবে না।
জান্তার মন্তব্যকে অজুহাত হিসেবে আখ্যা দিয়ে একজন জ্যেষ্ঠ সাহায্য কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তার জন্য জান্তার প্রয়োজন নেই।’
সহায়তা কর্মীরা বলছেন, টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট বন্ধের পাশাপাশি রাখাইনে প্রবেশের ওপর বিধিনিষেধের কারণে তারা ভোগান্তির পুরো মাত্রা জানেন না। তবে তারা বলছেন, সংকট গুরুতর। জাতিসংঘের তথ্যমতে, রাজ্যটির ৮ লাখ ৭৩ হাজার মানুষের খাদ্যসহায়তা প্রয়োজন। কিন্তু তাদের এক-চতুর্থাংশেরও কম এ সহায়তা পেয়েছে।
গত জুনে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছিল, সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় থাকা মানুষ যদি সহায়তা না পায় তবে জোরালো আশঙ্কা তারা মারা যেতে পারে। এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
সূত্র: সিএনএন