বিশ্বের যেসব দেশে সেনাবাহিনী নেই

বিশ্বের যেসব দেশে সেনাবাহিনী নেই

ফিচার স্পেশাল

অক্টোবর ১০, ২০২৪ ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ

কোনো দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ। অথচ বিশ্বে এমন কিছু দেশ আছে, যাদের সেনাবাহিনীই নেই। তাহলে বাইরের কোনো আক্রমণ থেকে এই দেশগুলোর প্রতিরক্ষা নিশ্চিত হচ্ছে কিভাবে? জানা যাক-

সামোয়া

ওশেনিয়া মহাদেশের একটি দেশ সামোয়া। ২ হাজার ৮৪২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশের জনসংখ্যা সোয়া ২ লাখের মতো। দেশটির জন্মের পর থেকেই কোনো সামরিক বাহিনী গড়ে ওঠেনি। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য একটি ছোট পুলিশ বাহিনী ও একটি মেরিটাইম সার্ভিল্যান্স ইউনিট রয়েছে। তাও এই বাহিনীগুলো ছোটখাটো ও হালকা অস্ত্র বহন করে। সাগরে পেট্রলবোটে টহল আছে সামোয়ার এই বাহিনীর। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ১৯৬২ সালের একটি চুক্তির কারণে যেকোনো নিরাপত্তা হুমকিতে পড়লে সামোয়াকে সাহায্য করবে তারা।

মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ

কম জনসংখ্যার দেশের তালিকায় ৮ নম্বরে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ। জাতিসংঘের হিসাবে এখানে বাস করা মানুষের সংখ্যা ৪২ হাজারেরও কম। ওশেনিয়ায় অবস্থিত মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ পাঁচটি তুলনামূলক বড় দ্বীপ ও ২৯টি অ্যাটোল (প্রবাল প্রাচীরবেষ্টিত উপহ্রদ) নিয়ে গঠিত। দেশটিতে ছোট-বড় মিলিয়ে ১ হাজার ২২৯টি দ্বীপ আছে। সবগুলো দ্বীপ মিলিয়ে এর আয়তন মাত্র ১৮১ বর্গকিলোমিটার। ছোট্ট এই দেশে জন্মের পর থেকেই কোনো সামরিক বাহিনী নেই। তবে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও সাগরে টহলের জন্য মেরিটাইম সার্ভিল্যান্স ইউনিট আছে। অবশ্য সামরিক বাহিনী না থাকা নিয়ে ছোট্ট এই দেশের কোনো মাথাব্যথা থাকার কথা নয়। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী তাদের নিরাপত্তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

অ্যান্ডোরা

৪৬৮ বর্গকিলোমিটারের দেশটির অবস্থান ইউরোপে। জনসংখ্যা ৮০ হাজারের আশপাশে। গোটা দেশটিই পর্বতময়। ফ্রান্স আর স্পেনের মাঝখানে অবস্থিত অ্যান্ডোরাকে ঘিরে আছে পিরেনিজ পর্বতমালা। ইউরোপের এই দেশে রেলপথের পাশাপাশি কোনো বিমানবন্দরও নেই। তবে সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয়, এখানে কোনো স্থায়ী সেনাবাহিনীও নেই।

স্বাভাবিকভাবেই জন্মের পর থেকে দেশটি কোনো যুদ্ধেও জড়ায়নি। প্রতিবেশী ফ্রান্স ও স্পেনের সঙ্গে বিপদে পড়লে সাহায্য করার চুক্তি আছে অ্যান্ডোরার। তবে ছোট একটি স্বেচ্ছাসেবক সেনা দল রয়েছে, যারা কেবল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কাজ করে। পুলিশের আধা সামরিক জিআইপিএ স্পেশাল ফোর্স ইউনিট সন্ত্রাস দমন ও জিম্মি উদ্ধারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

ডোমিনিকা

৭৫৪ বর্গকিলোমিটার দেশটির জনসংখ্যা ৭৩ হাজারের কিছু বেশি। ১৯৮১ সাল থেকে কোনো সেনাবাহিনী নেই দেশটির। এত অল্প জনসংখ্যার একটি দেশে এটা খুব অস্বাভাবিক বিষয় যে তা নয়। তবে পুলিশ ফোর্স ও কোস্টগার্ড আছে। যুদ্ধ বা অন্যান্য জরুরি পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুলিশ বাহিনী সামরিক বাহিনী হিসেবে কাজ করতে পারে।

 নাউরু

মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণে অবস্থিত নউরু পড়েছে ওশেনিয়ায়। জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য বলছে, নউরুর জনসংখ্যা ১২ হাজার ৭৬৯। ২১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশটি জাপান থেকে স্বাধীনতা পায় ১৯৬৮ সালে। তারপর থেকেই তাদের কোনো সেনা বা সামরিক বাহিনী নেই। তবে অস্ত্রধারী পুলিশ বাহিনী আছে তাদের। অবশ্য যে দেশে সড়ক আছে মোটে ১৮ কিলোমিটার, সেখানে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ খুব কঠিন কিছু নয়। তারপরও কোনো বিপদে পড়লে চুক্তি অনুসারে অস্ট্রেলিয়া নউরুকে নিরাপত্তা দেবে।

লিচেনস্টাইন

জাতিসংঘের হিসাবে লিচেনস্টাইনের জনসংখ্যা ৪০ হাজারের কাছাকাছি। ছোট্ট এই দেশের মোট আয়তন ১৬০ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে তিন ভাগের দুই ভাগ দখল করে আছে ছোট-বড় পাহাড়। এমনিতে ছোট্ট দেশ, তারপর পার্বত্য এলাকা, পূবে রাইন নদী, পশ্চিমে অস্ট্রিয়ার পর্বতমালা- সব মিলিয়ে লিচেনস্টাইনের ভাগ্যে কোনো বিমানবন্দর জোটেনি। তেমনি দেশটিতে নেই কোনো সেনাবাহিনী। ১৮৬৮ সালে খরচ কমাতে সেনাবাহিনী বাদ দেয় দেশটি। তবে যুদ্ধের সময় সেনাবাহিনী গঠনের অনুমতি থাকলেও যুদ্ধ না হওয়ায় এটির প্রয়োজন পড়েনি।

ট্যুভ্যালু

দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের ৯টি প্রবাল দ্বীপ নিয়ে ট্যুভ্যালু গঠিত হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশটির আয়তন ২৬ বর্গ কিলোমিটারের মতো। জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ট্যুভ্যালুর জনসংখ্যা ১১ হাজার ৩৮৭।

১৯৭৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করে ওশেনিয়ার দেশটি। কমনওয়েলথভুক্ত ছোট্ট এই দেশে জন্মের পর থেকেই কোনো সামরিক বাহিনী নেই। অবশ্য দেশটির সামরিক বাহিনী থাকার তেমন কোনো প্রয়োজনও নেই। একে তো জনসংখ্যা এবং আয়তন দুটিই কম, তার ওপর তেমন কোনো প্রাকৃতিক সম্পদ নেই এখানে।

এদিকে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়ও পড়েনি ট্যুভ্যালু। তবে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও সাগরে টহলের জন্য মেরিটাইম সার্ভিল্যান্স ইউনিট আছে। তারপরও কোনো বিপদে পড়লে চুক্তি অনুসারে অস্ট্রেলিয়া তাদের রক্ষা করবে।

পালাউ

জনসংখ্যার দিক থেকে পৃথিবীর চতুর্থ ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র পালাউ। ১৮ হাজারের মতো মানুষের বাস এখানে। যতদূর জানা গেছে, ছোট এই দেশটিতে প্রথম বসতি স্থাপিত হয় খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ সালে। এর আয়তন ৪৫৯ বর্গকিলোমিটার হওয়ায় এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব কম। ১৯৯৪ সালে স্বাধীনতা পাওয়া দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরে ৩৪০টি দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে।

স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকেই পালাউয়ে সেনাবাহিনী নেই। পুলিশ বাহিনীর মধ্যে সাগরে টহলের জন্য একটি ৩০ সদস্যের মেরিটাইম সার্ভেইল্যান্স ইউনিট সংযুক্ত আছে। অবশ্য সামরিক বাহিনী না থাকা নিয়ে ছোট্ট এই দেশের কোনো ঝামেলায় পড়ার কথা নয়। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী তাদের নিরাপত্তা দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

ওপরের তালিকায় নাম নেই কিন্তু সামরিক বাহিনী নেই এমন দেশের তালিকায় আরও আছে গ্রেনাডা, কিরিবাতি, ফেডারেল স্টেটস অব মাইক্রোনেশিয়া, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্র্যানাডিয়েনস ও সলোমান দ্বীপপুঞ্জ।

এদিকে ভ্যাটিকান সিটিতেও সেই অর্থে সামরিক বাহিনী নেই। তবে এখানে পোপের নিরাপত্তায় সুইস গার্ড নামের একটি সশস্ত্র বাহিনী আছে। তবে তাদের নিয়ন্ত্রণভার ভ্যাটিকান রাজ্যের নয়।

এছাড়া আরও কয়েকটি দেশ আছে, যাদের স্থায়ী বা পেশাদার সেনাবাহিনী নেই। এই দেশগুলোর মধ্যে আছে কোস্টারিকা, মোনাকো, আইসল্যান্ড, মরিশাস, পানামা ও ভানুয়াতু।

সূত্র: টেলিগ্রাফ, উইকিপিডিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *