থাইল্যান্ডের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন

আন্তর্জাতিক স্লাইড

আগস্ট ১৭, ২০২৪ ৫:৫৯ অপরাহ্ণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।

থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ধনকুবের থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেছে দেশটির পার্লামেন্ট। ৩৭ বছর বয়সী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা হবেন দেশটির সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। এর আগে তার ফুফু ইংলাক সিনাওয়াত্রা থাইল্যান্ডের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

গত বুধবার থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্রেথা থাভিসিনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার দু’দিন পর তাকে নিয়োগ দেওয়া হল। তাদের দু’জনেই ফেউ থাই পার্টির নেতা। ২০২৩ সালের নির্বাচনে ফেউ থাই পার্টি দ্বিতীয় হয়েছিলো এবং একটি ক্ষমতাসীন জোট গঠন করেছিলো।

মিজ পেতংতার্ন এখন থাইল্যান্ডের স্থবির অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার মতো কঠিন কাজের মুখোমুখি হয়েছেন। সামরিক অভ্যুত্থান সামাল দেওয়া এবং আদালতের হস্তক্ষেপ এড়িয়ে টিকে থাকাটাও তার জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জের বিষয়। আদালতের হস্তক্ষেপের কারণে তার দলের নেতৃত্বে পূর্ববর্তী চারটি প্রশাসন ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে।

“আমি সত্যিই আশা করি যে আমি মানুষের মাঝে আত্মবিশ্বাস পুনঃস্থাপন করে দিতে পারবো– সকল থাই জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে আমরা সুযোগ তৈরি করতে পারি,” শুক্রবার নির্বাচনের পর তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন।

“কিন্তু আমি সবসময় মনে করি আমার একটি দৃঢ় ইচ্ছা আছে এবং আমার একটি ভালো দল আছে। আমার দল মজবুত, অভিজ্ঞ, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং আমরা সকলে একই ধারণা পোষণ করি। এগুলো আসলে এমন কিছু, যা আমার কাছে খুব মূল্যবান,” তিনি বলেন।

পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে তার পক্ষে ৩১৯টি ভোট পড়েছে। আর বিপক্ষে ভোট পড়েছে ১৪৫টি। মিজ পেতংতার্ন হলেন গত দুই দশকে সিনাওয়াত্রা পরিবার থেকে প্রধানমন্ত্রী হতে যাওয়া চতুর্থ ব্যক্তি।

তার বাবা থাকসিন সিনাওয়াত্রা ও ফুপু ইংলাক সিনাওয়াত্রাসহ অপর তিনজন সামরিক অভ্যুত্থান বা সাংবিধানিক আদালতের রায়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন। দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত হয়ে একবার কারাগারে যাওয়া একজন প্রাক্তন আইনজীবীকে মন্ত্রিসভায় নিয়োগ দেওয়ার কারণে ওই একই আদালত বুধবার মি. থাভিসিনকে বরখাস্ত করেছে।

শুক্রবার মিজ পেতংতার্ন বলেছিলেন যে তিনি মি. থাভিসিনের বরখাস্তের বিষয়টি জানতে “দ্বিধান্বিত” এবং “খুব মর্মাহত” হয়েছিলেন। মি. থাভিসিন ও নিজের পরিবারের সাথে কথা বলার পর মিজ পেতংতার্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে ”দল ও দেশের জন্য কিছু করার এখনই সময়”, তিনি বলেন।

তিনি আরও বলেন যে তার বাবা মি. থাকসিন তাকে “নিজের সেরাটা দিয়ে” কাজ করার উৎসাহ দিতে ফোন করে বলেছিলেন যে, তিনি তার বৃদ্ধ বয়সে এসে মেয়েকে এই দায়িত্ব পেতে দেখে উৎফুল্ল।

থাইল্যান্ডের স্কুল এবং যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন মিজ পেতংতার্ন। সিনাওয়াত্রা পরিবারের মালিকানাধীন রেন্ডে হোটেল শিল্প গোষ্ঠীতে কয়েক বছর কাজ করেছেন তিনি। তার স্বামী ওই শিল্প গোষ্ঠীর উপ-প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত। ২০২১ সালে তিনি ফেউ থাই-এ যোগ দেন এবং ২০২৩ সালের অক্টোবরে দলের নেতা হিসাবে নিযুক্ত হন। তার নিয়োগ থাইল্যান্ডের শীর্ষ নেতৃত্বে নতুন শক্তি এনেছে। ফেউ থাই-এর সদস্যরাও হয়তো আশা করছেন যে তিনি দলের রাজনৈতিক ভাগ্য পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করতে পারেন।

মি. থাকসিন ২০০১ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু ২০০৬ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তার দ্বিতীয় মেয়াদের কার্যকাল হঠাৎ শেষ হয়ে যায়। দীর্ঘ ১৫ বছর নির্বাসিত থাকার পর তিনি গত অক্টোবরে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনকে নির্বাচিত করার কয়েক ঘণ্টা আগে থাইল্যান্ডে ফিরে আসেন। তার পুরাতন রক্ষণশীল শত্রুদের সাথে দর কষাকষি করার শর্তেই তাকে ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া হয়। তারা এখন ফেউ থাইয়ের সাথে জোটে রয়েছে।

গত জুন মাসে তার বিরুদ্ধে রাজতন্ত্রের অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। তিনি থাইল্যান্ডের সবচেয়ে হাই-প্রোফাইল ব্যক্তিত্ব, যিনি দেশটির র সবচেয়ে কঠোর ‘লেস ম্যাজেস্ট’ আইনের মুখোমুখি হয়েছেন। রাজনৈতিক ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে এই আইন ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে।

বুধবারের রায়ে মি. থাভিসিনকে বরখাস্ত করাটা মি. থাকসিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষার উপর লাগাম টানার জন্য একটি সতর্কবার্তা, বিষয়টি এখন অনেকে এভাবেও ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। কারণ এখনও ফেউ থাইয়ের উপর তার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। মি. থাকসিনের বোন মিজ ইংলাক ২০১১ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু পরে তাকেও অযোগ্য ঘোষণা করেছিলো আদালত। তার সরকার দ্বিতীয় অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলো। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী এখনও নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন।

মিজ পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা গত বছরের নির্বাচনে ফেউ থাইয়ের প্রচারণায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, যা তার অনেক ভক্তদের মুগ্ধ করেছিলো।

“আমি মনে করি, আট বছর পর জনগণ অভ্যুত্থানের চেয়ে ভালো রাজনীতি, দেশের জন্য ভালো সমাধান চায়,” সে সময় তিনি বিবিসিকে বলেছিলেন। “তারা এমন নীতি চায় যা তাদের জীবনকে উন্নত করবে।”

নির্বাচনে জয়ী মুভ ফরোয়ার্ডকে সামরিক বাহিনী নিযুক্ত সেনেট দ্বারা সরকার গঠনে বাধা দেওয়া হয়েছিলো। এটি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মি. থাভিসিনকে ফেউ থাই-নেতৃত্বাধীন জোট গড়ার সুযোগ করে দিয়েছিলো।

এই মাসের শুরুর দিকে সাংবিধানিক আদালত মুভ ফরোয়ার্ডকে অযোগ্য ঘোষণা করেছে এবং এর ১১ জন নেতাকে এক দশকের জন্য রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *