চাঁদাবাজি সিন্ডিকেট নেই, সবজির দাম নাগালে

সিন্ডিকেটহীন বাজার, সবজির দাম নাগালে

জাতীয় স্পেশাল স্লাইড

আগস্ট ১২, ২০২৪ ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

ছাত্র আন্দোলনের মুখে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বাজারের আশপাশে নেই চাঁদাবাজ কিংবা সিন্ডিকেট। কৃষক জমিতে পাচ্ছেন উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য। হাটে ধাপে ধাপে কমিশন খাওয়া দালাল চক্রও নেই। ফলে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা কমে গেছে সব সবজির দাম।

এদিকে ছাত্ররা বিভিন্ন খুচরা বাজারে তদারকি শুরু করায় সেখানেও মিলেছে সুফল। ভোক্তার ঘরে আগের চেয়ে কম দামে ঢুকছে বিভিন্ন পণ্য। গতকাল রোববার বগুড়ার বিভিন্ন এলাকার কৃষক, সবজিহাট ও পাইকারি মোকামে খোঁজ নিয়ে মিলেছে এসব তথ্য।

উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ সবজিহাট মহাস্থান ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে কৃষক সরাসরি নির্ধারিত দরে তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারছেন। আগে হাটে ঢোকামাত্রই সিন্ডিকেট কম দামে তাঁর সবজি বিক্রি করতে বাধ্য করত। গতকাল হাটে সেই চিত্র ছিল না।

ইতোমধ্যে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে পরিবহন ব্যবস্থা। ফলে এই অঞ্চল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পণ্য সরবরাহ বেড়েছে। সাধারণ ব্যবসায়ী ও কৃষকরা জানান, আন্দোলনের মধ্যে সরবরাহ কমে যাওয়ার প্রভাবে যেসব সবজির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল, তা আবার কমতে শুরু করেছে। এখন পণ্য নিয়ে সিন্ডিকেট কিংবা পরিবহনে চাঁদাবাজিও নেই। ফলে দাম কমিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে। তারা বলেন, পণ্যের দাম বাড়ার পেছনে মূলত ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দায়ী ছিল। এখন সেটা ভেঙে পড়ায় আগের চেয়ে দাম অনেকটা কমেছে।

মহাস্থান হাটে সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। গতকাল পটোল বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১৭ টাকা কেজি, যা দু’দিন আগেও ছিল ৪০ টাকা। ঢ্যাঁড়শের কেজি ৬০ থেকে নেমে হয়েছে ৪০ টাকা। পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে, যা ছিল ৪০ টাকা। কাঁচামরিচের দাম কমে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি ছিল ২০০ টাকার ওপরে। সাঁচি লাউ বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকায়, আগে দাম ছিল ৫০ টাকার ওপরে। প্রতি কেজি বেগুন আগে দাম ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। এখন সেটি বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে। ৮০ টাকায় উঠে যাওয়া ঝিঙে এখন ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। কমেছে আলুর দামও। প্রতি কেজি আলু ৭০ থেকে কমে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। এ ছাড়া কাঁকরোল ৪০ টাকা কেজি, বরবটি ৬০ টাকা কেজি, কাঠকচু ১০ টাকা প্রতিটি, লেবু প্রতিশ ৬০ টাকা, পেঁয়াজ ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

সদর উপজেলার শাখারিয়া নুরুইল মধ্যপাড়ার কৃষক আবুল হোসেন জানান, তিনি ১০ শতাংশ জমিতে দুধকুশির আবাদ করেছেন। দু’দিন পরপর ৬০ কেজি করে ফলন তোলেন। জমিতেই ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। তার পরও তাঁর লাভ থাকছে। কারণ কোনো অতিরিক্ত টাকা তাঁকে দিতে হচ্ছে না। পাশেই দক্ষিণপাড়ার কৃষক আব্দুর রহিম বলেন একই কথা। তিনি ২০ শতাংশ জমিতে মুলার আবাদ করে এখন ২০ টাকা কেজি দরে জমিতে বিক্রি করছেন। অথচ আগে হাটে নিলে অর্ধেক দামে বিক্রি করা লাগত।

শহরের রাজাবাজারের সবজি বিক্রেতা মিল্টন মিয়া বলেন, এখন পণ্য ঠিকমতো আসছে। এর আগে মাল কম থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছিল। এখন আমরা খুচরায় ১০ থেকে ২০ টাকা কেজিপ্রতি কম দামে সবজি বিক্রি করছি। আরেক সবজি বিক্রেতা একরাম বলেন, ছাত্ররা যখন-তখন বাজারে ঢুকে যাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও থাকেন। এ কারণে সিন্ডিকেট করার সুযোগ নেই। এতে আমরাও খুশি।

ফতেহ আলী বাজারের মুরগি বিক্রেতা জাহিদুল মিয়া বলেন, গত সপ্তাহের চেয়ে এখন মুরগির দাম কমেছে। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ২০০ টাকা, যা এ সপ্তাহে কমে দাঁড়িয়েছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়। সোনালি বা পাকিস্তানি মুরগি ৩২০ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২৬০-২৭০ টাকা, দেশি মুরগি ৬০০ থেকে কমে এখন ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

শেরপুরের চাল ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী বলেন, গত দু’দিনে বাড়েনি চালের দাম। এখানে মিলরেটে মিনিকেট ৬৮ থেকে ৭০ টাকা, কাটারি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, আঠাশ ৫০ টাকা, মোটা চাল ৪৪ থেকে ৪৬ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এভাবে চললে ক্রেতারা ন্যায্য দামে চাল কিনতে পারবেন।

মাছ বিক্রেতারা জানান, বিভিন্ন আড়তে সরবরাহ কম হলেও মাছের দাম বাড়েনি। রুই, কাতলার কেজি ৩২০ থেকে ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৫৫০ টাকা, ট্যাংরা ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা, পাঙাশ-তেলাপিয়া জাতীয় মাছ ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজিতে পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, চাঁদাবাজি বন্ধ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ঠেকাতে বাজার তদারকি করছেন শিক্ষার্থীরা। বাজারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের মিছিল ও মাইকিং করতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীর পাশাপাশি জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরও বাজার তদারকি করছে।

বেশ কয়েকজন সবজি বিক্রেতা অভিযোগ করেন, আগের চেয়ে সবজির দাম কমার বড় কারণ হলো আগে রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজি হতো। দোকান বসলে টাকা দিতে হতো, পিকআপে করে সবজি আনার সময় ট্রাফিকসহ বিভিন্ন জায়গায় খরচ হতো। এখন সেই খরচ নেই।

বগুড়া ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন-সংশ্লিষ্ট খরচ কমেছে এবং পণ্যের মজুত স্বাভাবিক রয়েছে। এর ফলে পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে নেমে আসবে। তিনি শিক্ষার্থীদের সচেতনতামূলক বাজার তদারকিকে সাধুবাদ জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *