শেখ হাসিনা-শামীম ওসমানসহ নারায়ণগঞ্জে ২৪৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

জাতীয় স্লাইড

আগস্ট ১৮, ২০২৪ ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ

নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বেসরকারি চাকরিজীবী আবুল হাসান স্বজন নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনা ও শামীম ওসমানসহ ২৪৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

মামলায় ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। শনিবার রাতে আবুল হাসানের ভাই আবুল বাশার অনিক বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় এই হত্যা মামলা দায়ের করেন।

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সাত্তার মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট সংঘর্ষে আবুল হাসান স্বজন নামে একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় তার ভাই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আওয়ামী লীগ দলীয় প্রধান ও সদ্যসাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল এবং সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক পরস্পর পরামর্শ করে সারাদেশের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ ও সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায়, ওয়ার্ড ইউনিয়ন, থানা, মহানগর ও জেলায় ছাত্র-জনতার যৌক্তিক আন্দোলন প্রতিহত ও নির্মূলের নির্দেশ দেন।

সেই সঙ্গে তাদের নির্দেশে গত ৫ আগস্ট দুপুরে আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি এ কে এম শামীম ওসমান, জাতীয় পার্টি দলীয় সাবেক এমপি এ কে এম সেলিম ওসমান, জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি আবুল হাসনাত মো. শহিদ, প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমান, শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, জেলা আওয়ামী লীগের নেতা নাসির উদ্দিন ওরফে টুন্ডা নাসির, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও শামীম ওসমানের চাচাতো শ্যালক এহসানুল হক নিপু, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, শামীম ওসমানের শ্যালক নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহাম্মেদ টিটু, নাসিকের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও মহানগর শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান মুন্না, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-১ আব্দুল করিম বাবু, বান্টি, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রাফেল, নাসিকের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতি, নাসিকের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রুহুল আমিন, গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজর আলী, বন্দরের ছাত্রলীগ নেতা খান মাসুদ, তামাকপট্টি এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী জাতীয় পার্টির নেতা বিটু, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টি নেতা দেলোয়ার প্রধান, মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সালাম, বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন সাহা, মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা উজ্জ্বল, নাসিকের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা মনির হোসেন, শহরের আমলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা সুজিত সাহা, কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফউল্লাহ বাদল, বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, বক্তাবলী পূর্ব গোপালনগর এলাকার বাসিন্দা মৃত আফসার আলীর পুত্র মো. জাহাঙ্গীর আলম, আমলপাড়া এলাকার মো. রিফাত, ইসদাইর বুড়ির দোকান এলাকার বাসিন্দা আজমেরী ওসমানের ক্যাডার নাসির, আমলপাড়া বড়বাড়ি এলাকার মৃত বাবুল মিয়ার ছেলে শ্যামল, বন্দরের ফুলহর এলাকার ছাত্রলীগ নেতা অহিদুজ্জামান অহিদ, বন্দর তিনগাও উত্তরপাড়া এলাকার আমির মিয়ার ছেলে শুভ, বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টি নেতা এহসান উদ্দিন আহম্মেদ, কাঁচপুর এলাকার হোসেনের ছেলে ফয়সাল, দক্ষিণ লক্ষণখোলার শ্যামল দাসের ছেলে নির্ঝর দাস, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি টিপু সুলতান, আজমেরী ওসমানের বন্ধু রামু সাহা, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন, শামীম ওসমানের বিয়াই ফয়েজ উদ্দিন লাভলুর ছেলে মিনহাজুল বিকি, নগর খানপুরের সেলিম মিয়ার ছেলে রিয়েল, গোগনগর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আজমীরের ছেলে বাপ্পি সহ অজ্ঞাত আরও ১৫০ থেকে ২০০ সশস্ত্র সন্ত্রাসী প্রত্যেকের হাতে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, রিভলবার, পিস্তল, কাটা রাইফেল, রামদা, চাকু, চাপাতি, হকিস্টিকসহ অন্যান্য অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সারা নারায়ণগঞ্জে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আকাশে অস্ত্র দিয়ে ফাঁকা গুলি ও অন্যান্য সন্ত্রাসীদের হাতে থাকা ককটেল বোমা বিস্ফোরণ করে জনতাকে ভীতি প্রদর্শন করে রাজপথ থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করে। এ সময় আবুল হাসান স্বজন গুলিবিদ্ধ হন এবং পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।

আবুল হাসান স্বজন বন্দর উপজেলার বন্দর ইউনিয়নের কুশিয়ারা এলাকায় বেড়ে ওঠেন। পড়াশোনা করেছেন হাজী আব্দুল মালেক উচ্চ বিদ্যালয়ে। নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং বিভাগে কাজ করতেন। স্বজন গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরের মিশনপাড়া ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের গুলিতে আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *