ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪ ১০:১৮ অপরাহ্ণ
মুরাদ শাহ জাবাল, ঝিনাইগাতী (শেরপুর)
শেরপুরের গারো পাহাড়ে বেদখল হচ্ছে বনের জমি। গারো পাহাড়ে বসবাসকারীরা নানান কৌশলে বনের জমি দখল করে চলেছে। যেন এসব দেখার কেউ নেই। এসব জমিতে অবৈধভাবে বাড়িঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন শতশত মানুষ।
অভিযোগ রয়েছে, বন বিভাগের স্থানীয় এক শ্রেনীর অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর যোগসাজশে এখনো থেমে নেই বনের জমি বেদখলের প্রতিযোগিতা। মাঝে মধ্যে লোকদেখানোর জন্য এসব অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও দেয়া হয়েছে। কিন্তু বেদখলীয় জমি উদ্ধার হচ্ছে না। এছাড়া বন বিভাগের পক্ষ থেকে জবরদখলীয় জমিগুলো উদ্ধারের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ ও নেয়া হচ্ছে না।
জানা গেছে, শেরপুরের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী, ও শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তে প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ৩০ হাজার একর বনের জমি রয়েছে। এসব বনের জমিতে এককালে শাল-গজারিসহ দেশীয় ভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষে ছিল ভরপুর।
অভিযোগ রয়েছে, ৯০ দশকের পর শাল গজারী উজাড় করে গড়ে তোলা হয় সামাজিক বনায়ন। আর সামাজিক বনের অংশিদারদের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে নানা কৌশলে সেখানে গড়ে উঠেছে শতশত বাড়িঘর। ফলে এককালের গভীর অরণ্য এখন জনবস্তি। বন বিভাগের শতশত একর জমিতে এখন পুরোদমে চাষাবাদ হচ্ছে। অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে রাবার ও উডলড বাগান, গরু ও মৎস্য খামার। পাল্লা দিয়ে গড়ে উঠেছে দোকানপাটও।
বন বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহ বনবিভাগের আওতায় শেরপুরের সীমান্তে ৩টি ফরেস্ট রেঞ্জের আওতায় ২৮ হাজার ২৫১ একর বনের জমি রয়েছে। এর মধ্যে বেদখলীয় বনভূমির পরিমান ৩ হাজার ৪শ একর। তবে স্থানীয়দের মতে বেদখলীয় জমির পরিমান দিগুণের ও বেশি হবে। এসব বনভূমি জবরদখলদারের তালিকায় রয়েছে প্রায় ৪ হাজার জবরদখলদার ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শেরপুরের সীমান্তবর্তী শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুরি ফরেস্ট রেঞ্জের আওতায় বনের জমির পরিমাণ ৮৩৪৫.৫০ একর। এখানে বেদখল দেখানো হয়েছে ৪৭৭ একর। ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া ফরেষ্ট রেঞ্জের আওতায় বনের জমির পরিমাণ ৮৮০২.৮১ একর। এখানে বেদখল দেখানো হয়েছে ১৪২৬.৫ একর। নালিতাবাড়ি উপজেলার মধুটিলা রেঞ্জের আওতায় বনের জমির পরিমান ৪২৮২.২৯ একর। এখানে বেদখল দেখানো হয়েছে ৫৮৯.৬২ একর। বন বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, জমি উদ্ধারের বিষয়ে আদালতে মামলাও দেয়া হয়েছে । কিন্তু বেদখলীয় জমি উদ্ধার হয়নি।
উল্লেখ্য,যে জমি উদ্ধারের বিষয়ে মামলা দায়ের করার কিছুদিন পর উক্ত বন কর্মকর্তা কর্মস্থল থেকে অন্যত্র বদলী হয়ে চলে যান। ফলে তয়- তদবিরের অভাবে মামলাগুলো থেকে খালাস পেয়ে যাচ্ছে জবরদখলকারীরা। যে কারণে উদ্ধার হচ্ছে না বনের বেদখলীয় জমি। ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ ন ম আব্দুল ওয়াদুদ বলেন বনের বেদখলীয় জমি উদ্ধারের বিষয়ে তালিকা সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে প্রেরন করা হয়েছে। যে কোন সময় প্রশাসনের সহায়তায় বেদখলীয় জমি উদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।