এস এম হুমায়ুন কবির, কক্সবাজার
নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলা রামুর কচ্ছপিয়ায় অবাধে ঢুকছে চোরাই গরু। কচ্ছপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের নেতৃত্বে এসব চোরাই গরু ঢুকছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এদিকে গরু পাচারের পাশাপাশি প্রচুর পরিমানে ইয়াবাও ঢুকছে বলে অভিযোগ।
জানা যায়, মিয়ানমার থেকে গরু আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেদেশের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘাতকে কেন্দ্র করে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ব্যাপকভাবে সক্রিয় হয়েছে উঠেছে গরু চোরাকারবারি চক্র। আর এ পাচারচক্রকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে কচ্ছপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইসমাঈল মোঃ নোমান।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের আশারতলী, ফুলতলী, লম্বাশিয়া, চাকঢালা ও দোছড়ির পয়েন্টের চোরাই পথ দিয়ে গত দেড় মাস ধরে অবৈধভাবে গরু ঢুকছে।
প্রতিদিন দুই’শ থেকে তিন’শ চোরাই গরু ঢুকছে নাইক্ষ্যংছড়ি ও রামুর বিভিন্ন এলাকায়। এসব চোরাই গরু আসায় স্থানীয় খামারিরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। পাশাপাশি সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। সীমান্তের পাহারায় নিয়োজিত বাহিনীর তৎপরতা থাকলেও কোনভাবে রোধ করা যাচ্ছে গরু পাচার।
সোমবার (৩ অক্টোবর) নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন, অনুসন্ধান ও স্থানীয়দের সাথে কথা বললে অধিকাংশ মানুষের মুখে কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জসিম উদ্দীন ও ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আরেক জসিম উদ্দীন। যিনি ২০২১ সালে কক্সবাজার শহরে ইয়াবাসহ ধরা পড়েছিলেন। হাজির পাড়া এলাকার নজরুল ইসলাম, ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কালাম, তিনিও ইয়াবা পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন। কচ্ছপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইসমাঈল মোঃ নোমানের ছোট ভাই শওকত ও স্থানীয় নূরুল ইসলামের নাম ঘুরে ফিরে উঠে আসছে। মুলত চেয়ারম্যান নোমানের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে
সীমান্ত দিয়ে এসব চোরাই গরু রামুর কচ্ছপিয়ায় ঢুকছে বলে অভিযোগ।
এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাদের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন।
এব্যাপারে কচ্ছপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইসমাঈল মোঃ নোমান জানান, মিয়ানমার থেকে চোরাই গরু কচ্ছপিয়ায় প্রবেশের কথা স্বীকার করে কিছু সংখ্যক গরু তিনি নিলামে নিয়েছেন বলে জানান। তবে গরু পাচারের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
রামুর গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির আইসি মাসুদ রানা জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে আসা বেশ কিছু গরু পুলিশ জব্দ করেছে। জব্দকৃত পাঁচটি গরু ফাঁড়ির কম্পাউন্ডে জমা রয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে গরুগুলো নিলামের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান। গরু পাচারে সম্পৃক্ত অভিযুক্তদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানান।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা ফেরদৌস জানান, পাচারচক্রের বিরুদ্ধে প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু চোরাই গরু জব্দ পূর্বক নিলামে দেয়া হয়েছে বলে জানান।