নৌপরিবহন এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টার সাথে মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের সাক্ষাৎ

জাতীয়

সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪ ৮:১৪ অপরাহ্ণ

শওকত আলী হাজারী।।

পাট, বস্ত্র এবং জাহাজ নির্মাণ শিল্পে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিনিয়োগের  আহবান জানিয়েছেন নৌপরিবহন এবং বস্ত্র ও পাট  উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত  হোসেন। তিনি বলেন,  পলিথিন ও প্লাস্টিক সামগ্রীর  বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব সোনালী ব্যাগ ও জুট জিও টেক্সটাইল বহুমুখী পাটপণ্য ইত্যাদি উদ্ভাবনের ফলে দেশে-বিদেশে পাটের ব্যাপক চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ২৮২ ধরণের বৈচিত্র্যময় ও আকর্ষণীয় পাটজাত দ্রব্য উৎপাদন হচ্ছে । এছাড়াও ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পাটজাত বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে  পাট রপ্তানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত পাটের সত্তর ভাগ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।  এটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় একটি খাত উল্লেখ করে বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত শিল্পে বিনিয়োগ করার উদাত্ত  আহবান জানান।

তিনি সোমবার ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সকালে  ঢাকায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) হেলেন লাফেভ এর সাথে বৈঠককালে এ আহ্বান জানান।

বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা বলেন, পাটকে বলা হয় বাংলাদেশের সোনালি আঁশ। এটি আমাদের ঐতিহ্যের অংশ।  একটা সময় পাট ছিলো বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত। বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে এ ধারায় কিছুটা ছেদ পড়লেও সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয় রোধে পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামীকাল ১ অক্টোবর ২০২৪ থেকে দেশের সকল সুপারশপে কোনো ধরনের পলিথিন বা পলিপ্রপিলিনের ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিকল্প হিসেবে সব সুপারশপে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ক্রেতাদের জন্য রাখা হবে।

উপদেষ্টা আরো বলেন, সরকারি পাটকল ও বস্ত্রকলগুলিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগ করার বিশাল সুযোগ রয়েছে। শিল্প কারখানাগুলো কৌশলগতভাবে যোগাযোগের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক স্থানে অবস্থিত। অধিকাংশই বন্দরের নিকটে। এছাড়াও এ সকল সেক্টরে আমাদের প্রশিক্ষিত দক্ষ জনবল রয়েছে।

নৌপরিবহন উপদেষ্টা দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের ডকইয়ার্ড নির্মাণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারিগরি সহায়তা কামনা করেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরসহ দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বিনিয়োগের অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আইওএম এর সি ক্যাটাগরির একটি সদস্য রাষ্ট্র। বাংলাদেশের মেরিন একাডেমিগুলো থেকে অত্যন্ত দক্ষ ও মেধাবী নাবিক তৈরি করা হচ্ছে, যারা অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সাথে আন্তর্জাতিক শিপিং পরিচালনা করে দেশের জন্য সুনাম বয়ে নিয়ে আসছে।

মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স বাংলাদেশের তৈরি রেডিমেড গার্মেন্টসের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা বাণিজ্য ও অন্যান্য বিভিন্ন পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দীর্ঘদিন যাবত নিবিড়ভাবে কাজ করছে। ইতোমধ্যে বন্ধুপ্রতীম দুই দেশের কূটনীতিক সম্পর্কের গৌরবময় ৫০ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবসময় বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। উভয় দেশের মধ্যেকার বাণিজ্য ঘাটতি দূরীকরণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামীতে আরো ঘনিষ্ঠভাবে বাংলাদেশের সাথে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছে। এ সময়ে তিনি বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত তৈরির প্রতি গুরুত্বারোপ করেন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।

বৈঠক শেষে উপদেষ্টা মার্কিন চার্জ দ্য আফেয়ার্স ও তার প্রতিনিধি দলকে বাংলাদেশের বস্ত্র, পাট এবং নৌপরিবহন খাতকে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচনা করায় তাদের ধন্যবাদ জানান।

বৈঠকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আব্দুর রউফ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের  সচিব (রুটিন দায়িত্ব)সঞ্জয় কুমার বণিকসহ মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *