উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত, পানিবন্দী ২৫ হাজার পরিবার

ইত্যাদি

সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪ ৩:৪৫ অপরাহ্ণ

দেশের উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে পরিবার নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। লালমনিরহাটে ডুবে গেছে রেললাইন। পানিবন্দী হয়েছেন প্রায় ২৫ হাজার পরিবার।

রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার পরে নদনদীর পানি কিছুটা কমলেও সকালে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, উজানে তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় পানিপ্রবাহ কমলেও ভাটি এলাকা কাউনিয়ায় আরও বাড়তে পারে।

কয়েক দিনের বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামে আবারও ধরলা, দুধকুমার, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এ নিয়ে জেলায় চতুর্থ ধাপে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের তিস্তা নদীতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। অব্যাহত ভাঙনে উঠতি আমনক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসলি জমি ও বসতভিটা নদীতে বিলীন হচ্ছে। গত দুই মাসে উপজেলার কাপাসিয়া, হরিপর, শ্রীপুর ও চণ্ডীপুর ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক বিঘা ফসলি জমি এবং শতাধিক বসতঘর তিস্তায় বিলীন হয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় জুলাইয়ে। তবে এ বছর তুলনামূলক বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ফলে এ মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যা হয়েছে। জুলাইয়ের পর আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে অতিবৃষ্টির কারণে মৌসুম ছাড়াই দীর্ঘমেয়াদি বন্যা হয়েছে। বর্ষাকাল ছাড়া অন্য সময়ের এই বন্যা বড় চিন্তার কারণ।

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের আট উপজেলায় ৬০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি। লালমনিরহাট সদরের তিস্তা রেলস্টেশনের কাছে রেললাইনে পানি ওঠায় ব্যাহত হয় লালমনিরহাট-ঢাকা ট্রেন চলাচল। দুর্গত এলাকার আমন ও শাকসবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ভারতের গজালডোবা ব্যারাজ উন্মুক্ত করে দেওয়ায় পানির চাপ সামলাতে ভাটিতে থাকা তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দেয় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ।

লালমনিরহাটের আদিতমারীর মহিষখোচা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, চণ্ডীমারী, বাহাদুরপাড়া, আরাজি ছালাপাক ও গোবর্ধন গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। সলেডি স্পার-২ বাঁধ এলাকার পানিবন্দি বক্কর জানান, ঘরে পানি ঢুকে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আমনক্ষেত ডুবে গেছে। ক্ষতি হয়েছে বেগুন আবাদের। উপজেলার গোবর্ধন হায়দারিয়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, গোবর্ধন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইসমাইলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আদর্শপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মোট আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানির কারণে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, অনবরত বৃষ্টি ও উজানের পানিতে তিস্তার পানি বেড়েছে। এ কারণে তিস্তাপাড়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি আর না হলে এবং উজান থেকে পানি আসা বন্ধ হলে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, লালমনিরহাটে ১০ হাজার পানিবন্দি পরিবারের জন্য নগদ ৩ লাখ টাকা ও ৯০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শিশুখাদ্যের জন্য ৫ লাখ ও গোখাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *