৭ ডিসেম্বর শেরপুর জেলাকে স্বাধীন ঘোষণা করা হয়

৭ ডিসেম্বর শেরপুর জেলাকে স্বাধীন ঘোষণা করা হয়

দেশজুড়ে

ডিসেম্বর ৮, ২০২৩ ১:৪৪ অপরাহ্ণ

এস এইচ শাকিল।।

৭ই ডিসেম্বর ১৯৭১ শেরপুর জেলার দ্বারোগালি পার্কে পাক হানাদার বাহিনী জেনারেল অরোরার কাছে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে শেরপুর জেলা পাক হানাদার মুক্ত হয়। এর আগে ৪ ডিসেম্বর ঝিনাইগাতী, ৬ ডিসেম্বর শ্রীবরদী এবং ৭ই ডিসেম্বর শেরপুর মুক্ত হয়। নকলা উপজেলা ৯ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয়।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেরপুর জেলা উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ এর উদ্যোগে আজ বিকাল ৩:০০ টায় শেরপুর জেলা পাক হানাদার মুক্ত দিবস নিয়ে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ক্যাফেটেরিয়াতে অনুষ্ঠিত হয়।

শেরপুর জেলা উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এবং পুষ্পধারা প্রপার্টিজ লিমিটেডের ডিরেক্টর মার্কেটিং ও সাপ্তাহিক শীর্ষ খবর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান (শাশ্বত মনির) এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সিনিয়র সচিব এবং ঢাকাস্থ শেরপুর জেলা সমিতির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম। মুখ্য আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর প্রফেসর ড. একেএম গোলাম রব্বানী।

বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব দিলদার আহমেদ এবং সাবেক যুগ্ম সচিব ও বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য শাহ মো. আবু রায়হান আলবেরুনী, শেরপুর সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি শহিদুল ইসলাম, গৌরব ৭১ এর সাধারণ সম্পাদক এফএম শাহীন।

নজরুল ইসলাম বলেন, ৭ই ডিসেম্বর শেরপুরে জেনারেল অরোরার কাছে পাক হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করার মাধ্যমে শেরপুর স্বাধীন হয়। শেরপুরের স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমেই মূলত স্বাধীন বাংলাদেশের আরেকটি ভিত্তি রচিত হয়। শেরপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শেরপুর জেলার পাশাপাশি সারা দেশবাসীরও জানা উচিত। এজন্য আরো ব্যাপক পরিসরে দেশব্যাপী প্রচারণা চালাতে হবে।

দিলদার আহমেদ বলেন, ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা শেরপুর শহরে প্রবেশ করতে থাকে যখন আমি কেবল ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। সেই মিছিল এবং আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আমিও উপস্থিত ছিলাম। এত সুশৃংখলভাবে আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠান দেশের আর কোথাও হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।

আলবেরুনী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা শিশু মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য আদান-প্রদান এবং চিঠি দেওয়া নেওয়ার কাজে যুক্ত ছিলাম। আমরা মুক্তিযোদ্ধা সনদের স্বীকৃতি পাবার চেষ্টা করিনি। দেশ স্বাধীন হয়েছে এটাই আমাদের বড় গৌরবের বিষয়।

প্রফেসর ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, শেরপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের ঠিক সেভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি, যারা যুদ্ধের সময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। তবে নালিতাবাড়ীর সোহাগ পল্লীর বিধবারা বীরাঙ্গনা সম্মান পেয়েছেন এর জন্য সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।

শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা এখনো শেরপুরে নেই। অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকাবদ্ধ হয়েছেন যা দুঃখজনক। সোহাগ পল্লীর বিধবাদের জন্য আরো অনেক কিছু করা দরকার।

মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানোর জন্য এ ধরনের অনুষ্ঠান অত্যন্ত জরুরী। আমরা আগামীতে এই ধরনের কর্মসূচি আরও ব্যাপকভাবে করব। স্বাধীনতার বিকৃত ইতিহাস যাতে কেউ উপস্থাপন না করতে পারে এবং স্বাধীনতা যাতে বাণিজ্যে রূপান্তর না হয় তার জন্য মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস সবার সামনে তুলে ধরা দরকার।

শাশ্বত মনির বলেন, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক শেরপুর জেলার ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবের। আজকে শেরপুর জেলা পাক হানাদার মুক্ত দিবসে আমরা তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি, যারা শেরপুর জেলাকে পাক হানাদার মুক্ত করতে শহীদ হয়েছেন। আমাদের উচিত শেরপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানানো যাতে তারা দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হতে পারে। শেরপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধ, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, পর্যটনকেন্দ্র নিয়ে বই প্রকাশের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি বই প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয় আমি অর্থ, গবেষক, স্বেচ্ছাসেবক এবং প্রকাশনার সার্বিক দায়িত্ব নিয়ে সহযোগিতা করব।

অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য লতিফুল ইসলাম নিপুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসির উপ-পরিচালক নজির আহমেদ সিমাপ সহ শেরপুর জেলার বিশিষ্ট  ব্যক্তিবর্গ এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *