৯ বছর ধরে ইসরাইলের চাপের মুখে আইসিসি

৯ বছর ধরে ইসরাইলের চাপের মুখে আইসিসি

আন্তর্জাতিক

মে ২৯, ২০২৪ ৮:১৩ পূর্বাহ্ণ

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। বিশ্বব্যাপী গণহত্যা, মানবাধিকারবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দেওয়াই এই আদালতের কাজ। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গাজায় অনবরত হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরাইল।

এমনকি তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে চাওয়া আইসিসিকেও চাপের মুখে রেখেছে দেশটি। গুপ্তচরবৃত্তি, হ্যাকিং ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তদন্তসংশিষ্ট ব্যক্তিদের হুমকি দিয়ে আসছে ইসরাইল। বছরের পর বছর চলছে তাদের এই কার্যক্রম। মঙ্গলবার দীর্ঘ ৯ বছরের যুদ্ধাপরাধের তদন্ত ঠেকাতে ইসরাইলের নানা কার্যকলাপ দ্যা গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।

আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের প্রধান প্রসিকিউটর (আইসিসি) যখন ঘোষণা করেন, তিনি ইসরাইল এবং হামাস নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চাচ্ছেন, তখন তিনি একটি গোপন সতর্কতা জারি করেছেন : ‘আমি জোর দিচ্ছি, এই আদালতের কর্মকর্তাদের প্রতিবন্ধকতা, ভয় দেখানো বা অন্যায়ভাবে প্রভাবিত করার সব প্রচেষ্টা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।’

করিম খান আইসিসির কাজে হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টার সুনির্দিষ্ট বিবরণ প্রদান করেননি। তবে তিনি তখন আদালতের ভিত্তিচুক্তির একটি ধারা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছিলেন, যারা আদালতের কাজে বাধা দেবে তা ফৌজদারি অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। আর এ ধরনের আচরণ অব্যাহত থাকলে ‘আমার অফিস তাদের বিচার করতে দ্বিধা করবে না’।

সরাসরি নাম উল্লেখ না করলেও এই বার্তা যে ইসরাইলকেই দেওয়া হয়েছিল তা স্পষ্ট। এর পরই ইসরাইলভিত্তিক ম্যাগাজিন +৯৭২ এবং কিছু ফোনকলের তদন্ত করে পাওয়া যায়, ৯ বছর ধরে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে আইসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ইমেইল, নথি এবং ম্যাসেজ ট্যাপ করে আসছিল তেল আবিব। এমনকি তদন্তের কাজে বাধা দিতে নানা ধরনের হুমকিও দিয়ে আসছিল তারা।

ইসরাইলের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান ইয়োসি কোহেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান প্রসিকিউটর ফাতৌ বেনসুদাকে হুমকি দিয়েছিলেন। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলি কর্মকাণ্ডে একটি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের তদন্ত না করতে এই চাপ দেন।

সূত্রের বরাতে দ্যা গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, বেশ কয়েক বছর ধরে একাধিক গোপন বৈঠকে কোহেন এই হুমকি দিয়েছিলেন। এসব হুমকির কারণে ২০২১ সালে গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বেনসুদা। এই তদন্ত গত সপ্তাহে শেষ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ আইসিসির প্রসিকিউটর করিম খান ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং তিন হামাস নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন।

সাবেক মোসাদ প্রধানের এই হুমকির কর্মকাণ্ডে ইসরাইল সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুমোদন ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ ইসরাইলি সেনাদের বিচারের মুখোমুখি করতে আইসিসিকে একটি হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে তেল আবিব। ফলে এই হুমকি তাদের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

অপর এক ইসরাইলি সূত্র দাবি করেছে, এই হুমকির উদ্দেশ্য ছিল বেনসুদাকে তদন্ত না করতে রাজি করানো অথবা তার সহযোগিতা লাভ করা। চারটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, কোহেনের ক্রমাগত এবং হুমকিমূলক আচরণ সম্পর্কে আইসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছেন বেনসুদা।

অভিযোগ রয়েছে, কোহেন বেনসুদাকে বলেছেন, ‘আপনার উচিত আমাদের সহযোগিতা করা। এমন কিছুতে আপনার জড়ানো উচিত হবে না যার ফলে আপনার বা আপনার পরিবারের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে।’ একটি সূত্র কোহেনের এই কৌশলকে ‘ঘৃণামূলক’ হিসাবে বর্ণনা করেছে। মোসাদ কর্মকর্তার কৌশলের মধ্যে ছিল, বেনসুদার বদনাম করার জন্য তার পরিবার সম্পর্কে গোপনে পাওয়া তথ্য ব্যবহারের হুমকি।

এই হুমকির ঘটনা সামনে আসার পর আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। রোম স্ট্যাচিউট অনুসারে, আইসিসি কর্মকর্তাদের ভয় দেখানো বা হুমকি দেওয়াকে ন্যায়বিচার আদালতের প্রশাসনের বিরুদ্ধে অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই রোম স্ট্যাচিউটের মাধ্যমে আইসিসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। করিম খান সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছেন, আইসিসির কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত বা অনুচিতভাবে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টার বিচার করবেন তিনি। তবে ইসরাইল সরকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং এগুলোকে ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছে। অন্যদিকে কোহেন ও বেনসুদা উভয়ই এই বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

আইসিসির বিরুদ্ধে মোসাদের কর্মকাণ্ডে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর সাবেক প্রেসিডেন্ট জোসেফ কাবিলা জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে। তিনি এই কাজে সহযোগিতা করেছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *