৬০ লাখ পাখির আক্রমণে দিশেহারা কেনিয়া

৬০ লাখ পাখির আক্রমণে দিশেহারা কেনিয়া

আন্তর্জাতিক

জানুয়ারি ১৮, ২০২৩ ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ

কুইলিয়া পাখির আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পূর্ব আফ্রিকার দেশ কেনিয়া। শত শত হেক্টর জমির ফসল সাবাড় করে ফেলায় প্রায় ৬০ লাখ কুইলিয়া পাখি হত্যার এক অভিযান শুরু করেছে দেশটির সরকার।

এদিকে এই পাখি হত্যা করা হলে তা পরিবেশ ও অন্যান্য বন্য প্রাণীর জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি ডেকে আনতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।

হর্ন অব আফ্রিকায় ক্রমাগত খরার কারণে দেশীয় প্রজাতির ঘাসের পরিমাণ কমে গেছে। আর এই ঘাসের বীজ কুইলিয়া পাখির প্রধান খাবারের উৎস। ঘাস কমে যাওয়ায় কুইলিয়া পাখি এখন হন্যে হয়ে শস্যক্ষেত্রে হানা দিচ্ছে। যে কারণে কেনিয়ার প্রায় ২ হাজার একর জমির ধান হুমকির মুখে পড়েছে। দেশটিতে ইতোমধ্যে কুইলিয়ার হানায় ৩০০ একর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে।

কুইলিয়ার হানা ঠেকাতে দেশটির সরকার এই পাখির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আবাদি জমির ফসল রক্ষার জন্য হানা দেওয়া ৬০ লাখ কুইলিয়াকে মেরে ফেলার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে দেশটির সরকার।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, কেবল একটি কুইলিয়া পাখি দিনে অন্তত ১০ গ্রাম পর্যন্ত শস্য খেতে পারে। পশ্চিম কেনিয়ার কৃষকরা এই পাখিকূলের কাছে প্রায় ৬০ টন শস্য হারাতে বসেছে। ২০২১ সালে দেশটিতে পাখির কারণে ফসলের বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

আফ্রিকাজুড়ে ফসলের জমিতে কীটপতঙ্গের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কৃষকরা ফেনথিয়ন নামের এক ধরনের কীটনাশক স্প্রে ব্যবহার করেন। কিন্তু গবেষকরা এই রাসায়নিককে মানুষ ও অন্যান্য বন্য প্রাণীর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ও বিষাক্ত বলে অভিহিত করেন।

গবেষকরা বলেছেন, ‘ফেনথিয়নের কারণে প্রাণীরা নির্বিচারে আহত অথবা মারা যেতে পারে। যার ফলে লক্ষ্যবহির্ভূত জীবের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে।’

নেচার কেনিয়ার ম্যানেজার ও স্থানীয় পশুপাখিবিষয়ক সংস্থা বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনালের কর্মকর্তা পল গ্যাচেরু বলেন, কুইলিয়া নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত পদ্ধতিটি কৃষকদের ভালোভাবে জানানো দরকার। কারণ এই কীটনাশকের বহুল ব্যবহারের ফলে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ এবং অন্যান্য পাখি ও প্রাণীর ব্যাপক মৃত্যু হতে পারে।

আফ্রিকায় আনুমানিক দেড়শ কোটি পাখির বসবাস রয়েছে। পাখিবিজ্ঞানীরা বলছেন, কুইলিয়াকে তাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত শিকারী পাখি কিংবা কার্যকর ও পরিবেশ বান্ধব কোনও সমাধান এই অঞ্চলে নেই।

আফ্রিকার অনেক দেশে প্রায়ই কুইলিয়া পাখির হানা দেখা যায়। ছয় মাস আগে এই অঞ্চলের আরেক দেশ তানজানিয়ায় ২ কোটি ১০ লাখের বেশি কুইলিয়া পাখি ধান, গম ও অন্যান্য ফসলি জমিতে আক্রমণ করে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা সেই সময় কীটনাশক স্প্রে, পাখি নজরদারি ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দেশটিতে ৫ লাখ ডলার সহায়তা দেয়।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *