সর্বোচ্চ দামেই বিক্রি হচ্ছে ডলার

সর্বোচ্চ দামেই বিক্রি হচ্ছে ডলার

অর্থনীতি স্লাইড

আগস্ট ৫, ২০২৩ ৮:২১ পূর্বাহ্ণ

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকট এখনো প্রকট। প্রায় দেড় বছর ধরে এই সংকট চলছে। ডলারের যোগান বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েও কাজ হচ্ছে না। এদিকে বকেয়া ঋণ ও আমদানি ব্যয় মেটাতে ব্যাংকগুলোর ত্রাহি অবস্থা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় ডলারের দাম আরও বাড়তে পারে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে ডলারের দামে ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানতে সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এখন প্রায় সব ব্যাংকেই সর্বোচ্চ সীমায় ডলার বিক্রি হচ্ছে। এমনকি বেশির ভাগ সরকারি ব্যাংকেও সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংক সর্বোচ্চ সীমার চেয়েও বেশি দামে বিক্রি করছে। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি ডলার বাজার নিয়ন্ত্রণ না করে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) মাধ্যমে ডলার বাজার নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেয়। তাদের মাধ্যমে প্রতি মাসে ডলারের দাম গড়ে ৫০ পয়সা থেকে এক টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। এর অংশ হিসাবে গত ১ আগস্ট সর্বশেষ ডলারের দাম বাড়ানো হয়। ওই সময়ে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০৯ টাকা করা হয়। রপ্তানি আয়ের ডলারের দাম এক টাকা বাড়িয়ে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়। একই সঙ্গে আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়। মৌখিকভাবে আমদানিতে প্রতি ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা রাখতে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়। ১ আগস্ট থেকে নতুন দর কার্যকর হওয়ার তিন দিনের মধ্যে অর্থাৎ ৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার বেশির ভাগ ব্যাংকে ডলারের দাম সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে যায়। আগে সর্বোচ্চ সীমার চেয়ে কম দামে ডলার বিক্রি হতো। আন্তঃব্যাংকেও সর্বোচ্চ সীমার চেয়ে দাম কম থাকত। এখন আন্তঃব্যাংকেও প্রথম দিনেই সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেছে। আগে এ বাজারে সর্বোচ্চ ও সর্বনিু দুটি রেট থাকত, এখন সর্বনিু রেট থাকছে না। সবই সর্বোচ্চ রেট।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো বাফেদার প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, সব ব্যাংকই রপ্তানির ডলারের দাম সর্বোচ্চ রেট ১০৮ টাকা ৫০ পয়সায় নিয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে ব্যাংকাররা জানান, এ খাতে ডলারের দাম কম হলে রপ্তানিকারকরা তা বিক্রি করতে চান না। ফলে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে দরকষাকষি করে বাড়তি দামে ডলার বিক্রি করে। এই প্রবণতা বন্ধে সব ব্যাংকই রপ্তানির ডলার কিনছে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা করে।

ব্যাংকগুলোর কাছে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি ডলার থাকলে তা আন্তঃব্যাংকে বিক্রির নিয়ম রয়েছে। এ খাতে ডলারের দাম হবে সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো এ খাতে ডলারের গড় ক্রয়মূল্যের চেয়ে এক টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে। কিন্তু তা কোনো ক্রমেই ১০৯ টাকা ৫০ পয়সার বেশি হবে না। ব্যাংক বেশি দামে ডলার কেনায় গড়মূল্য বেশি পড়ছে। ফলে এক টাকা মুনাফা করতে গিয়ে এর দাম ১০৯ টাকা ৫০ পয়সায় গিয়ে ঠেকছে। এতে কোনো ব্যাংকই এক টাকা মুনাফা করতে পারছে না। বরং অনেক কম মুনাফায় বিক্রি করছে।

আমদানিতে ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা রাখার মৌখিক নির্দেশনা রয়েছে। তবে নীতিমালা অনুযায়ী ডলারের গড় ক্রয়মূল্যের চেয়ে সর্বোচ্চ এক টাকা মুনাফা করা যাবে। ব্যাংক যদি সর্বোচ্চ দামে অর্থাৎ রেমিট্যান্স ১০৯ টাকা ও রপ্তানির ডলার ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা করে কিনে তাহলে এর গড় দাম পড়ছে ১০৮ টাকা ৭৫ পয়সা। কিন্তু রপ্তানির ডলার বেশি কেনা হয় রেমিট্যান্সের ডলার কম কেনা হয়। এতে প্রতি ডলারে গড়ে খরচ পড়ে ১০৯ টাকা ২৫ পয়সা। সেই ডলারে এক টাকা মুনাফা করা সম্ভব হয় না। মাত্র ২৫ পয়সা মুনাফায় বিক্রি করতে হয়। এতে ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় উঠে আসে না। তার পরও বেশির ভাগ ব্যাংক আমদানিতে ১০৯ টাকা করেই ডলার বিক্রি করছে। কোনো কোনো ব্যাংক এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে।

আন্তঃব্যাংকের গড় দামে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে। আন্তঃব্যাংকে বর্তমানে সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা করে বিক্রি হচ্ছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এর দাম বাড়িয়ে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা করেছে।

ব্যাংকগুলো বর্তমানে আন্তঃব্যাংকে ডলার বিক্রি করছে খুবই কম। তারা বিভিন্ন মেয়াদে আগাম বিক্রি করছে। আগাম ডলার তিন মাস মেয়াদে ১১১ টাকা, ছয় মাস মেয়াদে ১১২ টাকা ও এক বছর মেয়াদে ১১৩ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

ডলারের দাম বাড়ায় এর সঙ্গে সমন্বয় রেখে ইউরো, পাউন্ড ও অন্যান্য মুদ্রার দামও বেড়েছে। এখন ইউরো বিক্রি হচ্ছে ১২৩ থেকে ১২৭ টাকা দরে। পাউন্ট বিক্রি হচ্ছে ১৪২ থেকে ১৪৮ টাকা করে।

রেমিট্যান্সের ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিছু বড় ব্যাংক এর চেয়ে কিছু কম দামে রেমিট্যান্স কিনছে। অন্য ব্যাংকগুলো ১০৯ টাকা করেই কিনছে। কিছু দুর্বল ব্যাংক ডলার সংকট মেটাতে ১১২ থেকে ১১৩ টাকা করেও ডলার কিনছে। হুন্ডিতে আরও বেশি দামে ডলার বেচাকেনা হচ্ছে।

আমদানিতে ডলারের গড়দাম ১০৯ টাকা ২৫ পয়সার বেশি। ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ১৭টি ব্যাংক সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দামে ডলার বিক্রি করছে। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি খাতের অগ্রণী, বাংলাদেশ কৃষি, বেসিক ব্যাংক। বেসরকারি খাতের সিটিজেন, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, আইএফআইসি, ইসলামী, মেঘনা, মধুমতি, এনআরবি, এনআরবি কমার্শিয়াল, পদ্মা, পূবালী, শাহজালাল, সোশ্যাল ইসলামী, ইউনিয়ন ব্যাংক।

বেশ কিছু ব্যাংক ১০৯ টাকার বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে। এর মধ্যে সরকারি খাতের জনতা ব্যাংক ১০৯ টাকা ৪৩ পয়সা, সোনালী ব্যাংক ১০৯ টাকা ৪২ পয়সা, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ১০৯ টাকা ৪২ পয়সা দরে বিক্রি করছে।

বেসরকারি খাতের আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ১০৯ টাকা ৪১ পয়সা, ব্যাংক এশিয়া ১০৯ টাকা ২৬ পয়সা, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ১০৯ টাকা ৪৫ পয়সা, যমুনা ব্যাংক ১০৯ টাকা ৪৫ পয়সা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ১০৯ টাকা ৪৫ পয়সা, ঢাকা ব্যাংক ১০৯ টাকা ১১ পয়সা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ১০৯ টাকা ১৫ পয়সা দরে বিক্রি করছে। এছাড়া ইস্টার্ন ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, সিটি, প্রিমিয়ার, ট্রাস্ট, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচারাল ও কমার্স, সাউথইস্ট, স্ট্যান্ডার্ড ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ১০৯ টাকার বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে।

১০৯ টাকার কাছাকাছি দামে ডলার বিক্রি করছে এবি, বাংলাদেশ কমার্স, ব্যাংক আল-ফালাহ,  সিটি ব্যাংক এনএ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলোন, কমিউনিটি, এক্সিম, হাবিব ব্যাংক, মার্কেন্টাইল, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও উত্তরা ব্যাংক। নগদ ডলার বেশির ভাগ ব্যাংকেই ১১০ টাকা। কোনো কোনো ব্যাংকে ১১১ টাকার বেশি। কেবল মাত্র ইউনিয়ন ব্যাংক ১১২ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *