সপ্তাহে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে ১৪ শতাংশ, মৃত্যু ২১ শতাংশ

সপ্তাহে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে ১৪ শতাংশ, মৃত্যু ২১ শতাংশ

জাতীয় স্লাইড

সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩ ৯:৫২ পূর্বাহ্ণ

ডেঙ্গুর লাগামহীন আক্রমণে একদিনে এ বছরের সর্বোচ্চ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৯৯৩ জন। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৭৩০-এ। এদিকে দিনকে দিন ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায়, এ সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছে ১৪ শতাংশ এবং মৃত্যু বেড়েছে ২১ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৭ দিনের হিসাব বিশ্লেষণ করে এই তথ্য মিলেছে।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, এ বছর ২০ থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত ৩৪তম সপ্তাহে আগের ৩৩তম সপ্তাহের তুলনায় ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ কমছিল। ২৭ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টম্বর পর্যন্ত ৩৫তম সপ্তাহে এটি বেড়ে ৮ শতাংশ হয়। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৬তম সপ্তাহে এটি আরও বেড়ে ১৪ শতাংশে দাঁড়ায়।

একইভাবে ২০ থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত ৩৪তম সপ্তাহে আগের ৩৩তম সপ্তাহের তুলনায় ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হার ১০ শতাংশ কমছিল। ২৭ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৫তম সপ্তাহে এটি বেড়ে ১৪ শতাংশ হয়। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৬তম সপ্তাহে এটি আরও বেড়ে ২১ শতাংশে দাঁড়ায়। সপ্তাহের ব্যবধানে ডেঙ্গু সংক্রমণ ১৪ শতাংশ এবং মৃত্যু ২১ শতাংশ বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী জুন থেকে আগস্ট ৩ মাস দেশে বর্ষাকাল ধরা হয়। ঋতু পরিবর্তনজনিত কারণে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত, পাহাড়ি ঢল ও উজান থেকে সমতলে পানি নেমে আসায় যত্রতত্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ সময় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা প্রজননের জন্য অনুকূল পরিবেশ পেয়ে বংশবিস্তার লাভ করে। পুরুষ এডিস এজিপ্টাই ও এডিস এ্যালবোপিক্টাস মশার কামড়ে ডেঙ্গুজ্বর আক্রান্ত রোগী বেড়ে যায়। পঞ্জিকার হিসাবে এবার বর্ষা মৌসুমের নির্ধারিত সময় পার হলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও ভয়ংকর আকার ধারণ করছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে বছরজুড়েই ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকবে। ডেঙ্গু রোগী বাড়লে অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুও বাড়বে।

রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়ছে, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপতালে ভর্তি নতুন রোগীর মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৯৯৪ জন ও ঢাকার বাইরের এক হাজার ৯৯৯ জন। এই সময়ে মারা যাওয়া ১৪ জনের মধ্যে আটজন ঢাকার ও ছয়জন ঢাকার বাইরের বাসিন্দা। চলতি বছর ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩২৮ জনে এবং মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৩০ জনে। এর মধ্যে ১ জানুয়ারি থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ৬৭ হাজার ৫৯ জন ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ৮১ হাজার ২৬৯ জন ভর্তি হয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু সংক্রমণবিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সেপ্টেম্বরের ১০ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৪ হাজার ৫২০ এবং মারা গেছেন ১৩৭ জন। এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছিল বর্ষা মৌসুমের আগেই। ভরা বর্ষায় জুলাইয়ে তা ভয়ংকর রূপ নেয়। জুলাইয়ের ৩১ দিনেই হাসপাতালে ভর্তি হন ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন রোগী, মৃত্যু হয় ২০৪ জনের। এক মাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর এই সংখ্যা এ বছরের মোট সংখ্যার ৬০ শতাংশ।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যা দায়িত্ব তা শতভাগ পালন করছে। তবে যে পর্যন্ত মশা না যাবে সে পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীও কমবে না। হাসপাতালে রোগীরা যাতে বিছানা, ওষুধ ও স্যালাইন পান সেই কাজ সফলতার সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করে আসছে। চিকিৎসা দেওয়ার বাইরেও সচেতনতামূলক কাজও করে যাচ্ছি।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বর্তমানে উপেক্ষিত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যের অপ্রতুলতা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যের সহজলভ্যতা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বায়ুদূষণ, সর্বোপরি স্বাস্থ্যকর পরিবেশের অভাবে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। গত ১০ বছরে চিকিৎসা বাজেট বৃদ্ধি পেয়েছে চারগুণ। এরপরও এ বিশাল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা ব্যয় বহন করা রাষ্ট্রের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এ কারণে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে রোগ প্রতিরোধ-ব্যবস্থা শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। রোববার রাজধানীর সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের ‘সত্যেন বোস’ সভাকক্ষে আয়োজিত ‘হেলথ প্রমোশন বিষয়ক মতবিনিময় সভায়’ বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে একটি হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন প্রয়োজন। সে ব্যাপারে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। দেশব্যাপী জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের এ আহ্বানটি ছড়িয়ে দিতে হবে। এ কারণে আমাদের ধারাবাহিক কিছু কার্যক্রমের পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

সংস্থাটির কর্মসূচি প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, শুধু চিকিৎসার ওপর জোর না দিয়ে মানুষকে সুস্থ রাখার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে একটি হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠন করার জন্য সরকারকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন পণ্যের ওপর করারোপ করে থাইহেলথ বা ভিকহেলথের মতো আন্তর্জাতিক উদাহরণ অনুসরণ করে আমরা এগিয়ে যেতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *