শ্রদ্ধা ও স্মরণে প্রস্তুত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার

শ্রদ্ধা ও স্মরণে প্রস্তুত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার

জাতীয় স্লাইড

ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪ ৮:৩১ পূর্বাহ্ণ

মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সুষ্ঠুভাবে পালনে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। এরই মধ্যে শহিদ মিনার ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা হয়েছে। রং করা হয়েছে মূল বেদিসহ সংলগ্ন এলাকা। রাস্তার পাশের দেওয়ালে শোভা পাচ্ছে ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখা গান, কবিতা ও স্লোগান।

দিবসটিকে ঘিরে শহিদ মিনারে থাকবে চার স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে এ দিবস উদযাপনের ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

সরেজমিন সোমবার সন্ধ্যায় দেখা যায়, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের চারপাশে ব্যারিকেড দেওয়ার কাজ শেষ। সিসিটিভি বসানোর কাজও শেষ হয়েছে। শহিদ মিনার, দেওয়াল ও মেঝেতে রং করাও শেষ। দেওয়াল লিখনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে শহিদ মিনারের উত্তর দিকের দেওয়াল। চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা শুরু করে দিয়েছেন দেওয়াল লিখন।

অন্যদিকে শহিদ মিনারের বেদিতে আলপনা আঁকার কাজ করছেন একই অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। রাতেই শেষ হবে শহিদ মিনারের সামনের রাস্তায় আলপনা আঁকার কাজ। চারুকলা অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অমিত বলেন, আমাদের অনুষদের শিক্ষকদের নেতৃত্বে সকাল দশটা থেকে আলপনা আঁকার কাজ করছি। এতে যুক্ত হতে পেরে আমরা আনন্দিত।

চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, আমরা প্রতি বছরের মতো শহিদ মিনারে আলপনার কাজ করছি। আমরা শহিদ মিনারের সামনের রাস্তায় আলপনা আঁকার মাধ্যমে কাজ শেষ করব। আর এতে আমাদের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেবেন।

এদিকে সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন করেন উপাচার্য মাকসুদ কামাল।

তার বক্তব্য থেকে জানা যায়, রাত ১২টা ১ মিনিটে একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের বেদিতে প্রথম পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রীবর্গ, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও বিরোধীদলীয় নেতা।

এর পর পর্যায়ক্রমে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন তিন বাহিনীর প্রধানরা, ভাষাসৈনিকরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সম্মানিত সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, অনুষদের ডিনবৃন্দ ও হলের প্রাধ্যক্ষবৃন্দ। এরপর সর্বস্তরের জনসাধারণের শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের জন্য শহিদ মিনার উন্মুক্ত থাকবে।

উপাচার্য মাকসুদ কামাল জানান, সর্বস্তরের জনসাধারণ পলাশী মোড় হয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও জগন্নাথ হলের সামনে দিয়ে শহিদ মিনারে যাবেন এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের পর সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠের সামনের রাস্তা দিয়ে দোয়েল চত্বর ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রাস্তা দিয়ে চাঁনখারপুল হয়ে শুধু প্রস্থান করা যাবে-শহিদ মিনারের দিকে আসা যাবে না।

শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে রুটম্যাপ অনুসরণ করতে হবে। প্রবেশপথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ বিএনসিসি, রেড ক্রিসেন্ট, রোভার স্কাউটস, রেঞ্জার ও স্বেচ্ছাসেবকরা বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। তাদের যথাযথ সহযোগিতা করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারপ্রধান হিসাবে মোট ২১ বার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। তার ২১ বারের ২১টি পুষ্পস্তবক অর্পণের দুর্লভ ছবি নিয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকায় একটি প্রর্দশনী আয়োজন করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে এসময় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, অমর একুশে উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সমন্বয়কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূইয়া, যুগ্ম-সমন্বয়কারী ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুস ছামাদ, যুগ্ম-সমন্বয়কারী ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা এবং প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা : ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহিদ দিবসকে ঘিরে শহিদ মিনারে চার স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে। তবে এবার এ মুহূর্তে আমাদের কাছে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। তারপরও পুলিশ সব ধরনের নিরাপত্তা হুমকি বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া শহিদ মিনারে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমাদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বইমেলায় রয়েছে। সেখানে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করে ক্যামেরার মাধ্যমে সব ধরনের সিকিউরিটি ইকুইপমেন্ট এবং সিকিউরিটি ইউনিট কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে পুলিশ সবসময় প্রস্তুত রয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারি যেহেতু গভীর রাত এবং ঢাকা শহরের মানুষ এদিকে আসবেন সেজন্য যানজট নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

কিছু জায়গায় যানচলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকবে। কোনো কোনো জায়গা দিয়ে গাড়ি এদিকে ঢুকতে পারবে, সাধারণত পলাশীর মোড় দিয়ে শহিদ মিনারে আসার রাস্তাটা রাখা হয়েছে এবং বের হওয়ার রাস্তাটাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সমগ্র এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরায় আচ্ছাদিত থাকবে। আমাদের বোম্ব ডিসপোজাল টিম, সোয়াত টিম, ফায়ার সার্ভিস, মেডিকেল টিমসহ অন্যান্য টিম নিরাপদ দূরত্বে স্ট্যান্ডবাই থাকবে। শহিদ মিনার এলাকায় সার্বক্ষণিক তল্লাশি ব্যবস্থা এবং প্যাট্রলিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। ড্রোন প্যাট্রলিং, মোবাইল প্যাট্রলিং এবং সাইবার প্যাট্রলিংয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, যারা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আসবেন তাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ-সবাই পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এখানে আসবেন এবং শৃঙ্খলা মেনে চলবেন। সব নাগরিকের কাছ থেকে পুলিশ সহনশীল আচরণ প্রত্যাশা করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *