রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সোচ্চার রনি

জাতীয়

জুলাই ২৬, ২০২২ ৮:৩১ অপরাহ্ণ

জাহাঙ্গীর আলম

বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি দূর করা, সহজে টিকিট পাওয়া আর সেবা বৃদ্ধির দাবিতে কয়েক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করে আসছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি।

গত ১৩ জুন রাজশাহী যেতে টিকিট কাটার চেষ্টা করেন রনি। কিন্তু তার একাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হলেও পাননি টিকিট। অভিযোগ করেও মেলেনি প্রতিকার। রেলওয়ের এমন অব্যবস্থাপনা এবং ভোগান্তির প্রতিবাদে ৭ জুলাই থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিট কাউন্টারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন রনি। তার উল্লেখিত দাবিগুলো হলো- (১) টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সহজ ডটকম কর্তৃক যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। হয়রানির ঘটনা তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। (২) যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ করতে হবে। (৩) অনলাইনে কোটায় টিকিট ভোগ করা বন্ধ করতে হবে। সেই সাথে অনলাইনে, অফলাইনে টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। (৪) যাত্রী চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। (৫) ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক, তত্ত্বাবধায়কসহ অন্যান্য দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক মনিটরিং করে শক্তিশালী তথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে রেল চলাচলের মান বৃদ্ধি করতে হবে। (৬) ট্রেনে ন্যায্য দামে খানা বিক্রি, বিনামূল্যে পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে হবে।

সাধারণ যাত্রীরা বলেন, এই দাবিটা শুধুমাত্র তার না, আমি মনে করি এই দাবিগুলো বাংলাদেশের প্রত্যেক সাধারণ মানুষের। তাদের দাবি সরকার যদি যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেয় তাহলে সাধারণ যাত্রীদের চলাচল সহজ হবে।

রনি টিকিট বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকম এর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সহজ ডটকমকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিদপ্তর।

উল্লেখিত দাবি প্রসঙ্গে মহিউদ্দিন রনি সংবাদ মাধ্যমগুলোকে বলেছেন, রেল আমাদের জাতীয় সম্পদ। প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা সেখানে ভর্তুকি দেওয়া হয়। কিন্তু মানুষ রেলে ভ্রমণ করতে গিয়ে সেবা তো দূরের কথা, নানারকম হয়রানির শিকার হচ্ছেন, এমনকি বিশুদ্ধ পানি, পরিষ্কার বাথরুমও পান না। টিকিট নিয়ে হয়রানি, কালোবাজারি তো আছেই।

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই রেলে মানুষ হয়রানি ছাড়া নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে ভ্রমণ করবেন। সেজন্য সহজে টিকিট পাওয়া, কালোবাজারি বন্ধ করা, যাত্রী সেবা উন্নত করতে হবে। চলতি বছরেও রেলওয়ের জন্য ১৮ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এই বরাদ্দের বেশির ভাগই অবকাঠামো খাতে ব্যয় হওয়ার কথা রয়েছে। তারপরও রেলে সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে নিয়মিত যাত্রীদের।

২৫ জুলাই (সোমবার) রেল সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে চার ঘন্টার দীর্ঘ বৈঠক শেষে কর্মসূচি স্থগিত করেছেন রনি।

রনি বলেন, আপাতত আমি আন্দোলন স্থগিত করেছি। তবে আমার আন্দোলন কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। আমার যে ছয় দফা এখন শুধু এটা আমার একার না। এটা সারা বাংলাদেশের মানুষের দাবি।

তিনি আরও বলেন, আমার কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তৃতীয় কোনো পক্ষ যাতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য আমার কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করেছি।

আন্দোলন চালিয়ে আসা রনি বলেন, দুদক যে রিপোর্ট দেবে আমি তার অপেক্ষায় থাকলাম। রেলের প্রত্যেকটি বিষয়ের হিসাব নিকাশ নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *