রাখাইনে নতুন করে সংঘাত, উদ্বাস্তু হাজারো মানুষ

রাখাইনে নতুন করে সংঘাত, উদ্বাস্তু হাজারো মানুষ

আন্তর্জাতিক

মে ২৪, ২০২৪ ৬:৪৫ পূর্বাহ্ণ

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সংঘাত-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঘটনায় স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন সেখানকার মানবাধিকার কর্মীরা।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) জাতিসংঘের যুদ্ধাপরাধবিষয়ক তদন্তকারীরা সংঘাতে বিপর্যস্ত রাখাইনের ক্রমবর্ধমান লড়াইয়ের ওপর নজর রাখছেন বলে জানিয়েছেন। নির্যাতিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছেন তারা।

মিয়ানমারবিষয়ক জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত কমিটি আইআইএমএম এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘রাখাইনে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ এবং সেখানে মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে কি না তা মূল্যায়ন করছে তারা।’

২০২১ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থানের পর রাখাইনের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সাথে জান্তা বাহিনীর সংঘাত বৃদ্ধি পায়। আরাকান আর্মি বলেছে, তারা রাখাইনের জাতিগত রাখাইন জনগোষ্ঠীর অধিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করছে। রাখাইনে বর্তমানে নির্যাতিত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রায় ৬ লাখ সদস্য রয়েছেন।

২০১৭ সালে দেশটির সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত অভিযানে লাখ লাখ রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এই ঘটনায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসংঘের গণহত্যা আদালতে মামলা চলছে।

একটি যৌথ বিবৃতিতে বিদেশ থেকে সক্রিয় রোহিঙ্গাদের কয়েকটি অধিকার সংগঠন অভিযোগ করেছে, রাখাইন রাজ্যের বুথিডাং শহর থেকে গত সপ্তাহে রোহিঙ্গাদের উদ্বাস্তু হতে বাধ্য করেছে আরাকান আর্মির যোদ্ধারা। শহরটির বাড়িঘরে লুটপাট চালানো হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

শুধু তা–ই নয়, বুথিডাং শহর থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে নিয়ে আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নেওয়া হয়েছে বলেও ওই বিবৃতিতে উল্লেখ রয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, আরাকান আর্মির যোদ্ধারা রোহিঙ্গাদের জোর করে উদ্বাস্তু করেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।

গত সপ্তাহে রাখাইনের বুথিডাং শহরটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার কথা জানিয়েছে আরাকান আর্মি। তাদের মতে, এটা মিয়ানমারের জান্তার বিরুদ্ধে সংগঠনের বিজয়ের সর্বশেষ নজির।

আরাকান আর্মি জানিয়েছে, বাসিন্দাদের শহর ছাড়তে সতর্ক করা হয়েছিল। তাদের আরাকান আর্মি–অধ্যুষিত নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে সহায়তাও করা হয়েছে। যদিও এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী বুথিডাংয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে বলে অভিযোগ আরাকান আর্মির। তারা বলছে, আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে শহরটিতে জাতিগত ও ধর্মীয় সহিংসতা চালিয়েছে জান্তা সেনারা।

বুথিডাং এলাকাজুড়ে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ নিয়ে জান্তার পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল এএফপি। সাড়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, রাখাইনের সাম্প্রতিক সংঘর্ষে কয়েকশ মানুষ নিহত হয়েছেন। উদ্বাস্তু হয়েছেন প্রায় তিন লাখ মানুষ। ইন্টারনেট ও টেলিফোন পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে। তাই সেখান থেকে তথ্য পাওয়া এখন বেশ কঠিন।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত মঙ্গলবার জানায়, মিয়ানমারের বুথিডাং শহরটি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাসহ স্থানীয় বাসিন্দারা শহর ছেড়ে পালিয়েছেন। এর আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধানও শহরটির পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন।

সূত্র: এএফপি, দ্য স্টার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *