রংপুরে একমঞ্চে ৩০ তরুণ-তরুণীর যৌতুকবিহীন বিয়ে

রংপুরে একমঞ্চে ৩০ তরুণ-তরুণীর যৌতুকবিহীন বিয়ে

দেশজুড়ে

মার্চ ৭, ২০২৪ ১২:০৩ অপরাহ্ণ

সাদা কাপড়ে ঘেরা পুরো শেখ রাসেল স্টেডিয়াম। সারি করে রাখা হয়েছে ভ্যান, সেলাই মেশিন, গ্যাসের চুলা, বালতি, প্লেট-গ্লাস, জগ, তোষকসহ সংসারের প্রয়োজনীয় আসবাব। সাজানো মঞ্চে বিয়ের সাজে সেজে আছেন ১৫ জোড়া তরুণ-তরুণী। সবারই হাস্যোজ্জ্বল মুখ। মঞ্চের বিপরীতে বসে ছিলেন বর কনের পরিবারের সদস্যরা। ছিলেন রংপুর প্রশাসনের কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ, সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।

মঙ্গলবার (৫ মার্চ) রাতে প্রথমবারের মত রংপুরে জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে একসঙ্গে ১৫ জোড়া তরুণ-তরুণীর বিয়ের আয়োজনে করে আল-খায়ের ফাউন্ডেশন। সেখানে সম্পন্ন হয় ১৫ জোড়া তরুণ-তরুণীর যৌতুকবিহীন বিয়ে।

জানা যায়, স্টেডিয়ামের বাইরে বর-কনের পরিবারসহ বিয়েতে আসা চার শতাধিক অতিথির জন্য ছিল পোলাও, মুরগির রোস্ট, গরুর মাংস, জর্দা পোলাওসহ নানান আয়োজন। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে নবদম্পতিকে শুভেচ্ছা জানানো, খাওয়া-দাওয়ার আয়োজনে শামিল হন আসা অতিথিরা। হতদরিদ্র পরিবারের হলেও আয়োজনের কোনো কমতি ছিল না। বর্ণিল আয়োজনে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পেরে উচ্ছ্বসিত নব-দম্পতিরা। বিয়ে অনুষ্ঠান শেষে খাবারের পর গাড়িতে করে বর-কনে ও পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।

সদর উপজেলার পাগলাপীর বিড়াবাড়ি এলাকার কনে রশিদা বেগমের মামাতো বোন খাদিজা আক্তার বলেন, গরিব ঘরের সন্তান আমরা। মামাতো বোনের আয়োজন করে বিয়ে দেওয়া আমাদের জন্য অনেক কষ্টের হতো। এই বিয়ের আয়োজন সহজ করে দিয়েছে আল-খায়ের ফাউন্ডেশন। যৌতুকবিহীন বিয়ের ব্যবস্থা করেছে, আর্থিক ও সাংসারিক সহযোগিতা করেছে। এতে মেয়ে ও ছেলে দুই পরিবারই খুশি। এভাবে দারিদ্র মানুষকে সহযোগিতা করলে যৌতুকবিহীন সমাজ গড়া সম্ভব হবে।

কনে নুসরাত বেগম বলেন, এত বড় আয়োজন করে আমার বিয়ে এটি ভাবিনি। এই আয়োজন অনেক ভালো লেগেছে।

সদর উপজেলার পাগলাপীর কিশামত হরকলি গ্রামের বাসিন্দা বর মারজান মিয়া বলেন, যৌতুকবিহীন বিয়ে করতে পেরেছি। আমার খুবই আনন্দ লাগছে। এমন করে বিয়ে হলে সমাজ থেকে যৌতুক উঠে যাবে।

বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন- রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আবু জাফর, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাবিবুল হাসান রুমি, বিসিবির পরিচালক, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম, সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের শিক্ষক আজহারুল ইসলাম দুলাল, জেলায় কর্মরত সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।

আল-খায়ের ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর তারেক মাহমুদ সজীব বলেন, ২০১৬ সাল থেকে আল-খায়ের ফাউন্ডেশন প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ জনকল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছে। অসচ্ছল পরিবারের ছেলে-মেয়েদের ঘটা করে যৌতুকবিহীন বিয়ের আয়োজন করেছি। তাদের প্রত্যেককে গাড়িতে করে এখানে নিয়ে এসেছি এবং গাড়িতে করেই বাড়িতে পৌঁছে দেব। সঙ্গে প্রত্যেক দম্পতির জন্য এক ট্রাক ভরা উপহার পৌঁছে দেওয়া হবে। তারা সুবিধাবঞ্চিত। যদি বিত্তবানরা এভাবে একটি করে পরিবারের দায়িত্ব নেয়, তাহলে দ্রুত যৌতুকমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *