যেসব অবদানে পদক পাচ্ছেন চারশ পুলিশ সদস্য

যেসব অবদানে পদক পাচ্ছেন চারশ পুলিশ সদস্য

জাতীয় স্লাইড

ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৪ ৮:৫২ পূর্বাহ্ণ

পুলিশ সপ্তাহ-২০২৪ এ পুলিশের সবচেয়ে সম্মানজনক পদক পাচ্ছেন ৪০০ সদস্য। এসব পুলিশ সদস্যের গত এক বছরের কর্মকাণ্ডকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা দমন ও নাশকতাকারীদের গ্রেফতার, চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্যভেদসহ অন্যান্য কর্মকাণ্ডকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পদক দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, মাদক নির্মূল, দুর্ধর্ষ ডাকাত গ্রেফতারসহ বিভিন্ন কাজের মূল্যায়ন করা হয়েছে। পদকের জন্য মনোনীত হওয়া একাধিক পুলিশ সদস্যের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে পুলিশ সপ্তাহ। প্রতি বছর পুলিশ সপ্তাহকে সামনে রেখে পদক পাওয়ার জন্য পুলিশ সদস্যরা তাদের কার্যক্রমের বিস্তারিত জমা দেন পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিভাগে। এর ওপর ভিত্তি করে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)’, ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা’ ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)’, ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা’ এই চার ক্যাটাগরিতে পুলিশ সদস্যদের পদক দেওয়া হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, প্রতিবছর পুলিশ সার্ভিসে কৃতী সদস্যদেরকে বীরত্বপূর্ণ এবং কৃতিত্বপূর্ণ কাজের জন্য পদকে ভূষিত করা হয়ে থাকে। এটা তাদের ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রায় পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজের উৎসাহ জোগাবে। দেশ ও মানুষের কল্যাণে অপরাধ নির্মূলে ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তারা দায়িত্ব পালন করবেন।

বিপিএম-সেবা পদক পাচ্ছেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান। পুলিশের এ কর্মকর্তার পদক পাওয়ার ক্ষেত্রে যে সব বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে-সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে উন্নয়ন কার্যক্রম। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর সহযোগিতায় ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জ মডেল থানা এলাকায় গাড়ির নম্বর প্লেট শনাক্তে সক্ষম ১০০০ সিসি ক্যামেরা স্থাপন, ৫টি পেট্রোল গাড়ি সংযোজন, মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, ট্রাফিক পুলিশ বক্স স্থাপন ইত্যাদি। এছাড়া পুলিশ সদস্যদের খাবারের মান উন্নয়ন, থানা পর্যায়ে ফ্রি মেডিকেল সেবা ও ওষুধ প্রদান, বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান আয়োজন। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে বিশেষ কাজ হিসাবে-বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে আশুলিয়ায় বিকাশ পরিবহণে পেট্রোল ঢেলে আগুনের ঘটনায় জড়িত ঢাকা জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়কসহ সাত জনকে গ্রেফতার। রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে পুলিশের ওপর হামলায় জড়িত যুবদল নেতা আপনকে গ্রেফতার। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠানে অবদান। এছাড়াও দুর্ধর্ষ ডাকাতি, দস্যুতার ঘটনায় আসামি গ্রেফতার এবং নানা সফলতা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে পুলিশের এ কর্মকর্তার।

লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ পাচ্ছেন রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা। তার ১২টি অবদানের বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, লক্ষ্মীপুর জেলায় যোগদানের পর তার সরাসরি দিকনির্দেশনায় ২টি বিদেশি রিভলবার, ৩টি বলজি, ২০ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার এবং আসামি গ্রেফতার। বিপুল মাদক উদ্ধার হওয়াসহ ১৮৪টি মামলায় ২৪২ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া তার সময়ে ১টি বাস, ১টি পিকআপ, ১টি ট্রাক, ১টি সিএনজি, ৬টি মোটরসাইকেল, ৬টি অটোরিকশাসহ খোয়া যাওয়া স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন, গরু, গ্রামীণফোন টাওয়ারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ উদ্ধার হয়। চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্য উদঘাটনেও তিনি পারদর্শিতা দেখান। তার দিকনির্দেশনা ও তদারকিতে লক্ষ্মীপুর জেলার তিনটি চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্য উদঘাটন ও জড়িত সব আসামিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। মামলা ও ওয়ারেন্ট নিষ্পত্তিতেও তার অবদান বিবেচিত হয়েছে পদক পাওয়ার ক্ষেত্রে।

পদকের জন্য বিবেচিত সময়ে লক্ষ্মীপুর জেলায় মোট ৬৬৬টি মামলা নিষ্পত্তিসহ ১০৪৭টি গ্রেফতারি পরোয়ানা ও ১৮৩টি সাজা পরোয়ানা তামিল করা হয়েছে। পাশাপাশি ১৪৬৬টি পরোয়ানা রিকলসহ অন্যান্যভাবে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এছাড়া কমিউনিটি পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে ৫১৯টি ছোটখাটো বিরোধ নিষ্পত্তি করা, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, সিসি ক্যামেরা স্থাপন কার্যক্রম, সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ ও তদন্ত কার্যক্রমকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ডিএমপির ডিবিতে থাকাকালীন আলোচ্য সময়ে সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ ও তদন্তে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) এসএম রেজাউল হক পাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম)। পুলিশের এ কর্মকর্তার ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে র‌্যাব পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ লুণ্ঠিত টাকা উদ্ধার ও ঘটনায় জড়িত সব ডাকাত সদস্যকে গ্রেফতার, গভীর রাতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে বাসে যাত্রী তুলে ডাকাতি মামলার মূল রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেফতারসহ একাধিক ডাকতির রহস্য উদঘাটন, ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনের প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলমের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতার। এছাড়া অপরাধ প্রবণ এলাকায় প্রতিনিয়ত বিশেষ অভিযান, মাদক উদ্ধার অভিযান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানসহ আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকার বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযান পরিচালনা করে নিয়মিত ও পুরাতন মামলার ১৫২ আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন এডিসি রেজাউল।

এছাড়া দেশব্যাপী আলোচিত বিভিন্ন ডাকাতি মামলার মূল রহস্য উদঘাটন, ভিকটিম উদ্ধারসহ মানবপাচার চক্র গ্রেফতারেও তার ভূমিকা রয়েছে।

ডিএমপির এডিসি ইফতেখায়রুল ইসলাম পাচ্ছেন বিপিএম-সেবা পদক। তিনি গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনে থাকাকালীন যেসব কাজের জন্য পদক পাচ্ছেন তার মধ্যে রয়েছে, তেজগাঁও কলেজ ছাত্র ইকরাম হোসেন মোল্লা হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন। খিলক্ষেত থানা এলাকায় মেছের আলীর চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের হত্যাকারী শনাক্ত ও গ্রেফতার, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ছাত্র অপহরণে জড়িত ৪ ছিনতাইকারীসহ অপহৃত ভিকটিমকে উদ্ধার, রাষ্ট্রপতির প্রটেকশন অ্যান্ড প্রটোকল অফিসার হিসাবে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাতদের শনাক্ত করে গ্রেফতার। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের (উত্তর) এডিসি মো. শাহাদত হোসেন সুমা পাচ্ছেন বিপিএম-সেবা। তার পদক পাওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, ৪টি থানায় হওয়া বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর খুন, খুনসহ দস্যুতা, ডাকাতি, দলবদ্ধ ধর্ষণ, অপহরণ করে চাঁদা দাবি, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলাসহ ১২টি মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেফতার। বিশেষ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গাজীপুর জেলাধীন শ্রীপুর উপজেলার প্রহল্লাদপুর ইউনিয়নের বনখড়িয়া এলাকায় প্রায় ২০ ফুট রেললাইন কেটে লাইনটি বিচ্ছিন্ন করে রাখে দুষ্কৃতকারীরা। ফলে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে ধানখেতে পড়ে ১ জন নিহতসহ ৭-৮ জন গুরুতর আহত হন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে সক্ষম হন পুলিশের এ কর্মকতা।

ডিএমপির ডেমরা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মধুসূদন দাসের পিপিএম পাওয়ার পেছনে রয়েছে, ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্যভেদ, অজ্ঞাত কঙ্কালের পরিচয় শনাক্ত, অস্ত্র উদ্ধার, মাদক উদ্ধার ইত্যাদি।

র‌্যার-১ এর সহকারী পুলিশ কমিশনার নোমান আহমদ পাচ্ছেন পিপিএম। তার ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, জঙ্গিবিরোধী অভিযানে বিশেষ ভূমিকা রাখা, ক্লুলেস হত্যার রহস্য উদঘাটন, কিশোর গ্যাং ও ছিনতাইবিরোধী অভিযান পরিচালনা ইত্যাদি। গত এক বছরে তিনি ১৫৬টি সফল অভিযান পরিচালনা করেন।

বাংলাদেশ পুলিশ পদক বিপিএম-সেবা পাচ্ছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাজীপুর জেলার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মো. জামাল উদ্দিন। চাঞ্চল্যকর ৫টি হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনের জন্য তিনি এ পদকে ভূষিত হচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *