মেট্রোরেলে টিকিটের দাম বাড়তে পারে ৩-১৫ টাকা

মেট্রোরেলে টিকিটের দাম বাড়তে পারে ৩-১৫ টাকা

জাতীয় স্লাইড

এপ্রিল ২১, ২০২৪ ১০:০২ পূর্বাহ্ণ

আগামী ১ জুলাই থেকে মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাটের কারণে দূরত্বভেদে টিকিটের দাম ৩-১৫ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে।

গত ১৭ এপ্রিল দুই সংস্থায় দেওয়া চিঠিতে ডিএমটিসিএল বিভিন্ন দেশের মেট্রোরেল পরিচালনার অভিজ্ঞতা, পদ্ধতি এবং বাংলাদেশের জলবায়ু ও অর্থনীতিতে মেট্রোরেলের অবদান তুলে ধরে।

এতে বলা হয়েছে, মেট্রোরেলের আংশিক বাণিজ্যিক পরিচালনা শুরুর পর বিদ্যুতের দাম ২০২৩ সালে ৩ বার এবং ২০২৪ সালে এক বার বাড়ানোর হয়েছে। তার ওপর ক্লিয়ারিং হাউজ সার্ভিস ফি বাবদ এমআরটি/র্যাপিড পাশ ব্যবহারের ওপর ৩ শতাংশ ঢাকা পরিবহণ কর্তৃপক্ষকে (ডিটিসিএ) দিতে হয়।

কিন্তু জনসাধারণের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ  মেট্রোরেলের ভাড়া বাড়ায়নি। অথচ ডিএমটিসিএল’র বা সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই এনবিআর মেট্রোরেলের টিকিটের ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বাতিল করে। এখন সেই ভ্যাটের বোঝা সেবা গ্রহণকারী হিসাবে মেট্রোরেলের যাত্রীদের ওপর বর্তাবে।

প্রসঙ্গত, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্রেনের টিকিটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। সে ক্ষেত্রে মেট্রোরেলে টিকিটে ভ্যাট আরোপ করা হলে টিকিটের দাম সর্বনিম্ন৩ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা বাড়তে পারে।

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, বাংলাদেশের জন্য মেট্রোরেল একটি নতুন শিল্প। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে সব ধরনের নতুন শিল্পকে দীর্ঘমেয়াদি কর রেয়াত সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে দিলি­ মেট্রোরেল প্রায় ২৫ বছর ধরে চলছে। একই সঙ্গে সম্প্রসারণ কাজ অব্যাহত থাকায় মেট্রোরেল সেবার ওপর কোনো ভ্যাট নেই। ঢাকাতেও মেট্রোরেলের সম্প্রসারণ চলছে।

এছাড়া কোথাও শুধু ভাড়ার আয় থেকে লাভজনকভাবে মেট্রোরেল চলে না। মেট্রোরেল পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলো ভাড়া থেকে সর্বোচ্চ ৬৫ শতাংশ আয় করে থাকে, অবশিষ্ট ৩৫ শতাংশ আয় কেন্দ্রীয় সরকার বা স্থানীয় সরকার ভর্তুকি হিসাবে দিয়ে থাকে।

উদাহরণস্বরূপ বার্লিন মেট্রোরেল ভাড়া থেকে ৪৩ শতাংশ আয় হয়, বাকি ৫৭ শতাংশ স্থানীয় ও আঞ্চলিক সরকার ভর্তুকি হিসাবে দিয়ে থাকে। আমস্টারডাম মেট্রোরেল ভাড়া থেকে ৪১ শতাংশ আয় করে, অবশিষ্ট ৫৯ শতাংশ কেন্দ্রীয় সরকার ও স্থানীয় সরকার ভর্তুকি হিসাবে দিয়ে থাকে।

চিঠিতে মেট্রোরেলের পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক উপযোগিতা তুলে ধরে বলা হয়, মেট্রোরেল সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ চালিত বিধায় কোনো ধরনের জীবাশ্ম ও তরল জ্বালানি ব্যবহৃত হচ্ছে না। এমআরটি লাইন-৬ পরিপূর্ণভাবে চালু হলে এই রুটে সড়ক যানবাহনের সংখ্যা কমার মাধ্যমে বছরে ২ লাখ টন কার্বন নিঃসরণ হ্রাস পাবে।

ইতোমধ্যে এমআরটি লাইন-৬ আংশিকভাবে চালু হওয়ায় সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। ফলশ্র“তিতে বায়ু দূষণও কমছে। এছাড়া মেট্রোরেল যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এতে কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হচ্ছে। ঢাকা নগরবাসীর জীবনযাত্রায় ভিন্ন মাত্রা ও গতি যোগ করেছে।

চিঠিতে বলা হয়, এমআরটি লাইন-৬ এর সম্পূর্ণ অংশ পরিপূর্ণভাবে চালু হওয়ার পর মেট্রোরেল পরিচালনাকালে দৈনিক ট্রাভেল টাইম খরচ বাবদ প্রায় ৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা এবং যানবাহন পরিচালনা খরচ বাবদ প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা সাশ্রয় হবে। এই সাশ্রয়কৃত অর্থ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখবে।

স্মার্ট গণপরিবহণ এক টাকা বিনিয়োগ করলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ও কর্মসংস্থানে ৩ টাকার সুযোগ সৃষ্টি হয়। মেট্রোরেলের অর্থনৈতিক প্রভাব ব্যাপক ও বিস্তৃত। ফলশ্রুতিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পায়।

কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মেট্রোরেল ভ‚মিকা রাখবে। চিঠিতে বলা হয়, ২০৩০ সাল নাগাদ মেট্রোরেল পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হওয়ার পর শুধু ডিএমটিসিএল’র অধীনে নতুন ১২ হাজার গ্র্যাজুয়েট প্রকৌশলী ও মাঠ প্রকৌশলীদের চাকরির সংস্থান হবে।

এরই ধারাবাহিকতায় ফরোয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প স্থাপন ও সেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে আরও ৪ গুণ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

ফলশ্রুতিতে মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য দেশের অভ্যন্তরে দক্ষ জনশক্তি তৈরি হবে। এ দক্ষ জনশক্তি দেশের চাহিদা পূরণ করেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সম্প্রসারমাণ মেট্রোরেলে কাজ করতে পারবে। এতে বাংলাদেশের রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এ বিষয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক বলেন, মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট না বসানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরে এনবিআর এবং সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *