মিয়ানমারে নারকীয় অত্যাচারের বর্ণনা দিলেন প্রত্যক্ষদর্শী

মিয়ানমারে নারকীয় অত্যাচারের বর্ণনা দিলেন প্রত্যক্ষদর্শী

আন্তর্জাতিক

জুন ৯, ২০২৪ ৯:৪২ পূর্বাহ্ণ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি গ্রামে গত সপ্তাহে অভিযান চালিয়ে অন্তত ৫০ জনকে হত্যা করেছে দেশটির জান্তা বাহিনী। সেসময় বাসিন্দাদের সঙ্গে সেনাদের নৃশংসতার কথা তুলে ধরেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। জান্তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির (এএ) সদস্যদের খোঁজে জিজ্ঞাসাবাদ চালায়। এ সময় অমানবিক আচরণের শিকার হন রাখাইনের রাজধানী সিত্তওয়ের ঠিক বাইরে অবস্থিত ব্যায়াই ফিউ গ্রামের অধিবাসীরা। শুক্রবার জান্তাদের সেই পৈশাচিক আচরণগুলোই বিবিসির প্রতিবেদনে তুলে ধরেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

প্রায় আড়াই দিন ধরে জান্তা বাহিনী চালিয়েছে নারকীয় অত্যাচার। গত বুধবার প্রায় ১০০ জান্তা সৈন্য প্রবেশ করে গ্রামটিতে। চোখ বেঁধে পেটানো হয়েছে গ্রামবাসীদের। ট্যাটু থাকলে তার চামড়া কেটে ঢালা হয়েছে পেট্রোল। তারপর সেখানে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে আগুন। পানি খাইতে চাইলে প্রস্রাব পান করতে বাধ্য করেছে জান্তা সেনারা। আরাকান আর্মির সদস্যদের খোঁজ দিতে পারুক বা না পারুক এরকম নৃশংস নির্যাতনের শিকার হয়েছে গ্রামবাসী। মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত বেসামরিক সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) এক বিবৃতিতে বলেছে, ১৫ থেকে ৭০ বছর বয়সি ৫১ জন গ্রামবাসী এই সহিংস নির্যাতন এবং হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। তবে আরাকান আর্মির মতে, নিহতের সংখ্যা ৭০-এর বেশি। তবে ক্ষমতাসীন সামরিক কাউন্সিল বা জান্তা সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

গ্রামটির এক নারী বিবিসিকে বলেন, ‘তারা (জান্তা) পুরুষদের জিজ্ঞেস করছিল যে, গ্রামে আরাকান আর্মি আছে কিনা। হ্যাঁ, না কিংবা জানি না যে উত্তরই দেওয়া হোক না কেন, সৈন্যরা তাদের নৃশংসভাবে অত্যাচার করেছে। আমি নিজের চোখে দেখেছি, আমার স্বামীকে একটি সামরিক গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমার ছেলেকে আমাদের দুজনের কাছ থেকে আলাদা করা হয়েছে। আমি জানি না সে কোথায় আছে। আমি জানি না আমার ছেলে ও স্বামী বেঁচে আছে, নাকি মরে গেছে।’মাত্র ছয় মাসের মধ্যে রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ এলাকা দখল করেছে আরাকান আর্মি। সামরিক বাহিনীকেও পিছু হটতে বাধ্য করেছে তারা। গত বছর সেনাবাহিনীর সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা দখলকারী জান্তাকে উৎখাতের লক্ষ্যে সম্মিলিত অভিযানে দেশের অন্যান্য অংশে জাতিগত বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দেয় আরাকান আর্মি। গ্রামটিতে প্রায় এক হাজার পরিবারের বসবাস। আড়াই দিনের অভিযানে গ্রামটির পুরুষদের রাখা হয়েছিল খোলা জায়গায়, সূর্যের নিচে। খাবার কিংবা পানিও দেওয়া হয়নি তাদের। অনেককেই চোখ বেঁধে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় সামরিক গাড়িতে।

অনেকেই এখনো ফেরেনি। বিবিসিকে সেই নারী বলেন, সারা দিন প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে মানুষগুলো পানি চাইছিল। কিন্তু সেনারা তাদের পানি দেয়নি। তারা বোতলে প্রস্রাব করে সেটাই পান করতে বাধ্য করছিল। তিনি অনেক গুলির শব্দও শুনেছেন বলে জানান। মাথা তোলা যাচ্ছিল না বলে কাকে গুলি করা হচ্ছে সেটাও দেখা সম্ভব হচ্ছিল না। তিনি বলেন, ‘তাকানোর সাহস ছিল না আমার। আমার পাশে দাঁড়ানো কাউকে ডাকল সেনারা। তারপর শুনি গুলির শব্দ। সে (পাশের ব্যক্তি) আর ফিরে আসেনি।’ প্রায় দুই লাখ বাসিন্দার শহর সিত্তওয়েতে রয়েছে বড় একটি বন্দর ও বিমানবন্দর। যেসব শহর এখনো জান্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে, তার মধ্যে একটি এই শহর। তবে বিদ্রোহীরা শহরটির কাছে চলে এসেছে।

জান্তাও বাড়িয়েছে নৃশংসতা। স্থানীয়রা বলেন, যেসব পুরুষের শরীরে আরাকান আর্মির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ট্যাটু বা উল্কি ছিল, তাদের প্রথমে আলাদা করা হয়। সৈন্যরা ট্যাটু করা চামড়া কেটে ফেলে, তাতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। অন্য এক প্রত্যক্ষদর্শী একজন সেনা কর্মকর্তাকে গ্রামবাসীর উদ্দেশে বলতে শুনেছেন যে, তিনি উত্তর শান রাজ্যের লড়াই থেকে এসেছেন। সেখানে জান্তা বাহিনী গত বছরের শেষের দিকে তাদের ব্যাপক ক্ষতি করেছিল। রাখাইনে এখন প্রতিশোধ নিতে চায় জান্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *