প্রধানমন্ত্রী

বিশ্ব পরিস্থিতি মাথায় রেখে বাজেট দেওয়া হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় স্লাইড

জুন ৮, ২০২৪ ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট সম্পর্কে বলেছেন, সরকার বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি মাথায় রেখে রক্ষণশীল উপায়ে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে জনগণের মৌলিক অধিকারগুলো পূরণের লক্ষ্যেই এ বাজেট প্রণয়ন করেছে।

তিনি বলেন, বিশ্ব পরিস্থিতি মাথায় রেখেই কিন্তু আমাদের পরিকল্পনা নিয়ে চলতে হবে। আমরা সীমিতভাবে এবং খুব সংরক্ষিতভাবে এগোতে চাই, যেন দেশের মানুষের কষ্টটা না হয় এবং মানুষের যে প্রয়োজন সেটা আমরা মেটাতে চাই। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বাজেট করেছি।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শুক্রবার বিকেলে আওয়ামী লীগ কার্যালয়, তেজগাঁওয়ে ঐতিহাসিক ‘৬ দফা’ দিবস উপলক্ষে দলের পক্ষ থেকে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্বকালে দেওয়া ভাষণে একথা বলেন।

কোভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার ছোবলে আমদানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে দেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির উল্লেখ করে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে উন্নত দেশগুলোই হিমশিম খাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা সীমিতভাবে এবং খুব সংরক্ষিতভাবে এগোতে চাই যেন দেশের মানুষের কষ্টটা না হয় এবং মানুষের যে প্রয়োজন সেটা আমরা মেটাতে চাই। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সেভাবে আমরা বাজেট করেছি। এখন মূল্যস্ফীতি যদিও বেশি তথাপি চাল উৎপাদনই আমরা চারগুণ বাড়িয়েছি। মাছ, মাংস, ডিম প্রত্যেকটি জিনিষেরই আমরা উৎপাদন বাড়িয়েছি। উৎপাদন যেমন বেড়েছে মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতাও বেড়েছে, পাশাপাশি মানুষের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণও বেড়েছে।

সরকার প্রধান বলেন, বিএনপি’র আমলে মাত্র ৬২ হাজার কোটি টাকার বাজেট ছিল, আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার বোধ হয় ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়ে গেছিল। সেখানে আমরা ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি বলেন, এই বাজেটে এবার মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোকে নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, দেশীয় শিল্প, সামাজিক নিরাপত্তা-এগুলোকে সব থেকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে যা মানুষের জীবন যাত্রা উন্নত করবে।

মূল্যস্ফীতিতে সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষদের কষ্ট হচ্ছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, সরকার তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সুলভে ক্রয়ের জন্য পারিবারিক কার্ড করে দিয়েছে এবং হতদরিদ্রদের বিনা পয়সায় খাবার দিচ্ছে। দেড় শতাধিক সামাজিক নিরাপত্ত বলয়ের কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে। বিনা পয়সায় বই, বৃত্তি-উপবৃত্তি প্রদান এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, বোরো ধান উঠার পর সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়েছে, এখন কৃষক আবার যেন জমিগুলো চাষ করতে পারে সে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ঝড়-বৃষ্টি, বন্যা আবারও আসতে পারে, সেগুলো মোকাবিলা করে মানুষের চাহিদা পূরণে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

তিনি এ সময় দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এবং সবাইকে বৃক্ষ রোপণে এগিয়ে আসার জন্য তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। কৃষক লীগ বৃক্ষরোপণের দায়িত্বে থাকলেও আওয়ামী লীগের প্রতিটি সহযোগী সংগঠনকেও তিনি এ ব্যাপারে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, এখন সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। বিশেষ করে খাদ্য মূল্য। সেখানে উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব পরিস্থিতি মাথায় রেখেই কিন্তু আমাদের পরিকল্পনা নিয়ে চলতে হবে।

আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শাজাহান খান, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এবং ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।

আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো.আব্দুস সবুর এমপি, দলের কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম এমপি, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কোচি এবং হুমায়ুন কবির।

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং উপ প্রচার সম্পাদক আব্দুল আওয়াল শামীম সভাটি সঞ্চালনা করেন।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৬৬ সালের ৭ জুন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে জনগণের ওপর পাকিস্তানের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের শোষণ, বঞ্চনা, পরাধীনতা ও অত্যাচারের অবসান ঘটাতে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে ঘোষিত ৬ দফা দাবির পক্ষে দিনব্যাপী হরতালের ডাক দেয় এবং দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলনের সূচনা হয়।

হরতাল চলাকালে ঢাকা, টঙ্গী ও নারায়ণগঞ্জে সেদিন বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ ও আধাসামরিক ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) গুলি চালালে শ্রমিক নেতা মনু মিয়া, শফিক ও শামসুল হকসহ অনেকে শহিদ হন।

উল্লেখ্য, ৬ দফা মূলত স্বাধীনতার এক দফা ছিল। ৬ দফার মধ্যেই স্বাধীনতার বীজ নিহিত ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *