বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব-এর ৯৩তম জন্মবার্ষিকীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বঙ্গমাতাকে শ্রদ্ধায় স্মরণ

দেশজুড়ে

আগস্ট ৮, ২০২৩ ১১:৫১ অপরাহ্ণ

মোহাম্মদ আল এমরান

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব-এর ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় বঙ্গমাতাকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

আজ (মঙ্গলবার) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন, এমপি বলেন, ‘বাঙালি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতিটি ধাপে বঙ্গমাতার অবদান রয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত জন্মভূমিকে শস্য-শ্যামলারূপে গড়ে তুলতে জাতির পিতার পাশে দাঁড়ান বঙ্গমাতা।’

তিনি বলেন, ‘ইতিহাসে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কেবল একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রনায়কের সহধর্মিণীই নন, বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে অন্যতম এক নেপথ্য অনুপ্রেরণাদাত্রী, রাজনৈতিক সহকর্মী হিসেবে আজীবন প্রিয়তম বঙ্গবন্ধুর ছায়াসঙ্গী ছিলেন।’

দেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বঙ্গমাতার সারাজীবনের ত্যাগের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ ফজিলাতুন্নেছা আড়ালে থেকে তার গার্হস্থ্য জীবনের কর্তব্য পালন আর মন-মস্তিষ্কে স্বামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সহযোগিতা করে গেছেন আজীবন।

বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গমাতা অবিচ্ছেদ্য সত্তা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ -এক অমর কবিতার নাম। আর সেই মহাকাব্য রচনায় যে নারীর অবদান অনস্বীকার্য, যিনি সোনার বাংলা বিনির্মাণে আড়ালে অন্তরালে থেকে রেখে গেছেন অসামান্য অবদান, তিনি হলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।

রাজনীতিতে বঙ্গমাতার দূরদর্শিতা ও অবদানের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী হিসেবে দীর্ঘকাল তাঁর পাশে থেকে মানবকল্যাণ ও রাজনীতির শিক্ষা লাভ করেছিলেন শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব। তিনি সংগঠনকে (আওয়ামী লীগ) সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুর সাথে বঙ্গমাতা এবং তাঁদের পরিবারের অন্য সদস্যদের হত্যা করে। এমনকি ১০ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেলকেও হত্যা করে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন বর্বর ঘটনা বিরল। এটা বাঙালি জাতির জন্য কলঙ্কের। আরও কলঙ্কের বিষয় হলো – হত্যাকারীদের মধ্যে পাঁচজন এখনো বিভিন্ন দেশে পালিয়ে রয়েছে। এদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে হবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম, এমপি বলেন, ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বাংলাদেশের জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের প্রতিটি পদক্ষেপ ও কার্যক্রম বাস্তবায়নে জাতির পিতার নেপথ্যের শক্তি, সাহস ও বিচক্ষণ পরামর্শক হয়ে নিভৃতে কাজ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকেছেন শক্তি হয়ে, অনুপ্রেরণা হয়ে।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বঙ্গমাতার বিচক্ষণতা ও সফলতার নানাদিক উল্লেখ করে বলেন, ‘মহীয়সী এই নারী একজন স্বার্থক সহধর্মিনী ও আদর্শ মাতা যেমন ছিলেন, অন্যদিকে তিনি নিজেকে ক্রমেই একজন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গড়ে তোলেন।

শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আজ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব নেই, কিন্তু তিনি আছেন চিরভাস্মর হয়ে, আমাদের মননে। তিনি বেঁচে আছেন প্রত্যেক দেশপ্রেমিক বাঙালির হৃদয়ে। এই শ্যামল সবুজ বাংলার আবহমান মায়ের প্রতিচ্ছবি, আমাদের ‘বঙ্গমাতা’। তিনি শুধু বঙ্গবন্ধুর প্রেরণাই নন, তিনি সমগ্র বাঙ্গালী জাতির প্রেরণা।’

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘বঙ্গমাতার জীবনের জানা-অজানা অধ্যায়গুলো নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে রচিত হবে তাঁর একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনী, যাতে করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাঁর ত্যাগ ও সংগ্রাম থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদেরকে খাঁটি দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়তে পারে।’

আলোচনা সভায় সম্মানিত আলোচক কথা-সাহিত্যিক, লেখক, ঔপন্যাসিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘একজন মানুষ কীভাবে তার সমস্ত চিন্তা এবং চেতনাকে কাজে লাগিয়ে সামগ্রিকভাবে জনকল্যাণে সেটা নিয়োগ করে আজকের দিনে বঙ্গমাতা আমাদের কাছে সেই অসাধারণ দৃষ্টান্ত।
অনুষ্ঠানে শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তিনিই জাতিকে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
আলোচনা সভার শেষে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ ১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্টে শাহাদাত বরণকারী বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *