ফেরি বন্ধে আয় কমেছে বিআইডব্লিউটিসির

জাতীয় স্লাইড

আগস্ট ২৯, ২০২২ ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটের ফেরি বন্ধ হয়ে গেছে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি পয়েন্টে ব্যাপক সেতুর প্রভাব পড়েছে। আগে যেখানে ফেরির জন্য গাড়ি বসে থাকত সেখানে ফেরি বসে থাকে গাড়ির অপেক্ষায়। দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত দুটি ফেরি পয়েন্টের একটি বন্ধ। আর অপরটিতে যানবাহনের চাপ কমায় রাষ্ট্রীয় নৌপরিবহণ সংস্থা বিআইডব্লিউটিসির আয় কমেছে। দিনে ৬০ লাখ টাকা হিসাবে বছরে ২১৬ কোটি টাকা আয় হারানোর শঙ্কায় পড়েছে সংস্থাটি। এমন পরিস্থিতিতে আয় বাড়ানোর টার্গেটে মাঠে নেমেছে সংস্থার কর্মকর্তারা। সন্ধান চলছে নতুন ফেরি রুটের। সারা দেশে আট থেকে ৯টি নতুন পয়েন্টে ফেরি চালুর কথাও ভাবা হচ্ছে। এসব পয়েন্টের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সরাসরি যাচ্ছেন সংস্থার চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তারা।

একসময় শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি রুটে যানবাহন পারাপার করত ১৮-২০টি ফেরি। বিশালাকৃতির এসব ফেরি চেপে দিনে পার হতো ছয় থেকে সাত হাজার যানবাহন। সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী-এ ঘাট থেকে দৈনিক ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা আয় হতো। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি পয়েন্ট দিয়ে আগে খুলনা ও বরিশালসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সিংহ ভাগ যানবাহন পার হতো। সেতু চালু হওয়ার পর শুধু দুটি পয়েন্টেই নয়, উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগে ব্যবহৃত আরিচা-কাজিরহাট ফেরি পয়েন্টেও আয় কমেছে।

বিআইডব্লিউটিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক ও ফেরি বিভাগের প্রধান খালিদ নেওয়াজ বলেন, আমাদের বহরে মোট ফেরি ৫২টি। আগে সব চালানোর পরও ফেরি সংকটে হিমশিম খেতে হতো। আর এখন অর্ধেকই ঘাটে বাধা থাকে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া পয়েন্টে আগে ২০-২২টি চালিয়েও হিমশিম খেতে হতো। সেখানে এখন ১১টি ফেরি চলছে। এরপরও যানবাহনের অপেক্ষায় বসে থাকছে ফেরি। আরিচা-কাজিরহাট পয়েন্টেও একই অবস্থা। সেখানে মাত্র পাঁচটি ফেরি চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া পয়েন্টে দৈনিক ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত রাজস্ব আয় হতো। এখন তা কমে ৩০-৩৫ লাখে দাঁড়িয়েছে। কাজিরহাট-আরিচাসহ আরও কয়েকটি রুটেও আয় কমেছে।

বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ফেরি চালানোর সম্ভাব্যতা যাচাই করেছেন। ১৯ আগস্ট পটুয়াখালীর গলাচিপার আগুনমুখো নদীর কোড়ালিয়া-পানপট্টি পয়েন্ট এবং ২০ আগস্ট বরগুনার বামনা-বদনীখালী পয়েন্টে তারা সম্ভাব্যতা যাচাই করেন। বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) এসএম আশিকুজ্জামান বলেন, আগুনমুখোর ৭-৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে ফেরিগুলোকে। আর বামনা-বদনীখালী পয়েন্টে বিষখালীর প্রস্থ ১ কিলোমিটার। এ দুই পয়েন্টে ফেরি চালু হলে সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে সাগর পাড়ের বিচ্ছিন্ন উপজেলা রাঙ্গাবালী। পদ্মা সেতু চালু হলেও ভোলা জেলার লোকজন পুরোপুরি সুবিধা পাচ্ছে না। লাহারহাট-ভেদুরিয়া পয়েন্টে ফেরি থাকলেও সেটা দীর্ঘ পথ হওয়ায় পাড়ি দিতে অনেক সময় লাগে। এ ক্ষেত্রে কালাইয়া-নাজিরগঞ্জ পয়েন্টে ফেরি চালু হলে ভোলার দক্ষিণাংশের লোকজন সহজে ফেরি ব্যবহার করে পটুয়াখালী-বরিশাল হয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ঢাকায় যেতে পারবে।

পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সংসদ-সদস্য মুহিবুর রহমান বলেন, রাঙ্গাবালী পুরোপুরি একটি বিচ্ছিন্ন উপজেলা। ভয়ংকর আগুনমুখো যখন ফুঁসে উঠে তখন নদীতে বন্ধ থাকে লঞ্চ ট্রলার আর স্পিডবোট পারাপার। এ ছাড়া গাড়ি নিয়ে সরাসরি যাওয়াও যায় না। বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা কোড়ালিয়া-পানপট্টি পয়েন্ট পরিদর্শন করেছেন। এখানে ফেরি চলাচল শুরু হলে লাখ লাখ মানুষের জীবনধারায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনের এমপি শাহজাদা সাজু বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে ফেরি সেক্টর কী ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে সেটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ছিল আমাদের। কিভাবে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটানো যাবে তা নিয়েও বহুবার আলোচনা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সভায়। মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় কমিটির নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী-নতুন রুটে ফেরি চালানোর সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যানের গলাচিপা সফরের সময় আমিও ছিলাম। নতুন রুটগুলো চালু হলে সম্ভাব্য লোকসানের আশঙ্কা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে সংস্থাটি। একই সঙ্গে উপকৃত হবে বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোয় বসবাসকারী মানুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *