পুতিন বিরোধিতার খেসারত, মন্ত্রী থেকে ট্রাকচালক

পুতিন বিরোধিতার খেসারত, মন্ত্রী থেকে ট্রাকচালক

আন্তর্জাতিক স্লাইড

আগস্ট ২৮, ২০২৩ ৮:৪১ পূর্বাহ্ণ

কোমি প্রজাতন্ত্র। রাশিয়ার পূর্ব ইউরোপীয় অংশের একটি ছোট্ট ভূখণ্ড। চার লাখ ১৫ হাজার ৯০০ বর্গকিলোমিটারের দেশটির সাত লাখ ২৬ হাজার মানুষের ভাগ্যবিধাতা লৌহমানব খ্যাত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে ১৬টি শহর, ২১১টি পৌরসভা ও ১৭৫টি গ্রাম নিয়ে গঠিত দেশটির প্রত্যেকটি সাধারণ মানুষ রাশিয়ার অনুগত। ক্রেমলিনের অধীনস্থ। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নীতিতেই চলে কোমির শাসন। তার বিরুদ্ধে গেলে চলে যায় ক্ষমতাও।

২৪ ফেব্রুয়ারি (২০২২) রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের বিষয়টি তাকে গভীরভাবে বিরক্ত করছিল। রাশিয়ার সংঘবদ্ধকরণ অভিযানের সময় যুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য একটি খসড়া আদেশ পেয়েছিলেন তিনি। অন্য সবার মতো সামরিক নিবন্ধনে তালিকাভুক্ত হয় তার নামও। তার পরই দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন  তিনি।  বলেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে দেশে থেকে আমি এই অবৈধ যুদ্ধে কোনোভাবে অংশগ্রহণ করব না।’

১৮ আগস্ট ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শ্যারোনভ বলেন, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন তিনি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে কোমি  থেকে পালিয়ে যান তিনি। প্রথমে টেক্সাসে তার বড় সাদা ট্রাকটি চালাতেন। তবে সেখানে অত্যধিক গরম সহ্য করতে না পেরে মিশিগান প্রদেশে চলে আসেন। ইউক্রেনের সঙ্গে ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধ তার নিজ দেশের মানুষকে নির্বাসিত করছে। আক্রমণ শুরুর পর থেকে যুদ্ধের বিরোধিতা করায় কয়েক হাজার রুশ দেশ ছেড়ে চলে গেছে। অনেকে দেশ ছেড়ে চাকরি করে নতুন জীবন বের করার পরিকল্পনা করেছে। তবে শ্যারোনভের গল্পটা কিছুটা অস্বাভাবিক।

বিরোধিতার পর ডেনিস শ্যারোনভ একটি সাক্ষাৎকারে জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর ট্রাকচালক হিসাবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ সবচেয়ে সহজ উপায় বলে মনে হয়েছিল। মিশিগান প্রদেশটি  আমার কাছে স্বর্গীয়। টেক্সাসে ভীষণ গরম ছিল। অনেক মানুষই আমার ইচ্ছাটাকে বোঝে না। আমাকে নিয়ে হাশি-তামাশা করে। তারা বলে, আমি মন্ত্রী থেকে ট্রাকচালক হয়েছি। কিন্তু আমি মোটেও এটাকে সেভাবে দেখি না। এটি আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের। গত ছয় মাসে আমি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫টি অঙ্গরাজ্যে ট্রাক চালিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের সমান কোমি প্রজাতন্ত্রে পুতিন নিয়ন্ত্রিত সরকার কীভাবে কাজ করে তা দেখতে আমি কৌতূহলী ছিলাম।  প্রচুর দুর্নীতি মন্ত্রণালয়কে জর্জরিত করে বলে দ্রুত হতাশ হয়ে পড়ি। রাশিয়ার লোকেরা রাজনীতিতে আসার প্রধান কারণ হলো অর্থ চুরি করা। দুর্নীতি আমার দেশকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। হয় আপনি এতে অংশ নেবেন নয়তো পদচ্যুত হবেন।’ দুর্নীতিগ্রস্ত জমি প্রকল্পে প্রবেশ করতে অস্বীকার করায় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তাকে বরখাস্ত করা হয়। তখন থেকেই দেশ ছাড়ার বিষয়টি মাথায় আসে তার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *