পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বিএসইসি

অর্থনীতি

অক্টোবর ২৭, ২০২৩ ১:০০ পূর্বাহ্ণ

সুদীপ দেবনাথ রিমন

দেশে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ২০২০ সালের ১৭ মে পুঁজিবাজারের হাল ধরেন পুনর্গঠিত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। কাজে যোগদানের পর থেকে নতুন কমিশনের নানামুখী কার্যকর পদক্ষেপে গতিশীল হয়ে উঠে দেশের পুঁজিবাজার। আস্থা ফেরায় প্রাণ ফিরে পান বিনিয়োগকারীরা।

তবে ২০২১ সালের শেষের দিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রভাবে পুঁজিবাজারে দেখা হয় টালমাটাল পরিস্থিতি। সেইসঙ্গে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে যুক্ত হয় ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধসহ নানান বৈশ্বিক সংকট। এমন সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণ ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন নেয় নানান কার্যকরী পদক্ষেপ। যার ফলে গত সাড়ে তিন বছরে পুঁজিবাজারে কম অস্থিরতা বিরাজ করার পাশাপাশি বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত রোড শো বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমানে অন্যান্য দেশের তুলনায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে কম অস্থিরতা বিরাজ করছে। কোভিড ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরবর্তী বিগত দুই বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন-ভারত, পাকিস্তান, হংকং, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চেয়েও বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে সবচেয়ে কম অস্থিরতা বিরাজ করার তালিকার শীর্ষে রয়েছে। পুঁজিবাজারে কম অস্থিরতা বিরাজ করার তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান, তৃতীয় অবস্থানে যক্তরাজ্য, চতুর্থ অবস্থানে ভারত, পঞ্চম অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র ও ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে হংকং।

সংশ্লিষ্টদের মতে, সামগ্রিক পুঁজিবাজারের কিছুটা বাধা সৃষ্টি করলেও ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারের দর পতনের সর্বনিম্ন সীমা) বহাল রাখা কমিশনের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। বৈশ্বিক সংকটের কারণে পুঁজিবাজারের সূচকের ধারাবাহিক পতন রোধ ও শেয়ারের দাম কমানো ঠেকিয়ে রাখতে এ উদ্যোগ নেয় বিএসইসি। বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যুকে পাশ কাটিয়ে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ও স্বার্থ রক্ষা করতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা ফোর্স সেলসহ বড় ধরণের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেয়েছেন।
২০২০ সালে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিলে পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতন রোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে ওই বছরের ১৯ মার্চ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের ওপর ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে তৎকালীন অধ্যাপক খায়রুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বিএসইসি। পরবর্তীতে তিন ধাপে বর্তমান শিবলী রুবাইয়াতের নেতৃত্বাধীন কমিশন ফ্লোর প্রাইস তুলে নিয়েছিল। প্রথম দফায় ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল ৬৬টি কোম্পানি থেকে ফ্লোর প্রাইসের নির্দেশনা প্রত্যাহার করে নেয় কমিশন। এর পরে ওই বছরের ৩ জুন ফ্লোর প্রাইসে থাকা বাকি ৩০ কোম্পানি থেকে নির্দেশনাটি তুলে নেয় বিএসইসি। তৃতীয় ধাপে এসে ১৭ জুন শেয়ারবাজার থেকে পুরোপুরি ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়। তবে পুঁজিবাজারে দরপতন রোধে দ্বিতীয়বার ২০২২ সালের ২৮ জুলাই শেয়ারের ফ্লোর প্রাইজ দেয় কমিশন। পরবর্তীতে ২১ ডিসেম্বর ১৬৯টি প্রতিষ্ঠানের (কোম্পানির ও মিউচুয়াল ফান্ড) ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয় বিএসইসি। তবে ২০২৩ সালের ১ মার্চ তৃতীয় দফায় ১৬৯ কোম্পানির শেয়ারের ওপর ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি। পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
বর্তমান কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বন্ধ থাকা কোম্পানিগুলোকে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনা। বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা বেশ কিছু কোম্পানিতে প্রাণ ফিরেয়ে দিয়েছে কমিশন। ফলে কোম্পানিগুলো পুনরায় উৎপাদন শুরু হয়েছে। কিছু কোম্পানি পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছে। আর যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলে লাপাত্তা হয়ে গিয়েছিল, সেগুলোকে ডি লিস্টিং করিয়ে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে বিএসইসি। এছাড়া কোম্পানিগুলোকে বোনাস লভ্যাংশের বদলে নগদ লভ্যাংশ দিতে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের সময় অর্থাৎ ২০২০ সালে ১৭ মে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৪০৬০ পয়েন্টে। আর চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) ডিএসইএক্স সূচক অবস্থান করছে ৬২৭৫ পয়েন্টে। ফলে করোনা পরবর্তী বিভিন্ন সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩ বছরে ডিএসইর ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছে ২২১৫ পয়েন্ট। এদিকে ২৬ অক্টোবর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস অবস্থান করছে ১৩৬২ পয়েন্টে। ২০২০ সালের ১৭ মে ডিএসইএস সূচক ছিল ৯৫১ পয়েন্টে। ফলে এ সময়ে মধ্যে ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ৪১১ পয়েন্ট। একই সঙ্গে ২৬ অক্টোবর ব্ল চিপ নামে খ্যাত সূচক ডিএস৩০ অবস্থান করছে ২১৩৫ পয়েন্টে। আর ২০২০ সালের ১৭ মে ডিএস৩০ সূচক ছিল ১৩৬৫ পয়েন্টে। এ সময়ের ব্যবধানে ডিএস৩০ সূচক বেড়েছে ৭৭০ পয়েন্ট। এছাড়া ২৬ অক্টোবর ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৬৮ কোটি টাকা। আর ২০২০ সালের ১৭ মে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ১৬ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। এই হিসেবও বাজার মূলধনের উন্নতির কথাই জানাচ্ছে। এই সময়ে বাজার মূলধন বেড়েছে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *