পদ্মা সেতু: ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের পাশাপাশি বেড়েছে ভ্রমণও

পদ্মা সেতু: ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের পাশাপাশি বেড়েছে ভ্রমণও

অর্থনীতি স্লাইড

জুলাই ৩, ২০২৪ ৮:১৫ পূর্বাহ্ণ

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দুই বছর। জাদুর কাঠি ছোঁয়ার মতো এ সেতুর বদৌলতে পাল্টে গেছে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের চিত্র। উন্নত হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা; বেড়েছে রাজস্ব আয় ও ব্যবসা-বাণিজ্য। এ থেকে বাদ যায়নি বেনাপোল বন্দরও। চলমান বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও এ সেতুর কল্যাণে সময় ও অর্থ সাশ্রয়ে এ বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে বেড়েছে বাণিজ্য ও পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত। বৈশ্বিক মন্দা কাটলে এ সুফল আরও বাড়বে বলে মত বাণিজ্য ও বন্দর সংশ্লিষ্টদের।

জানা যায়, বর্তমান সরকারের সময়ে দেশে যেসব উন্নয়নমূলক কার্যক্রম হয়েছে তার মধ্যে পদ্মা সেতু অন্যতম। নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে ২০২২ সালের ২৫ জুন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এ সেতু উদ্বোধন করেন। এর মধ্যদিয়ে ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা যুক্ত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয় যশোর জেলা। যশোরের বেনাপোলে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর। আর ব্যবসা, ভ্রমণ, উচ্চ শিক্ষা ও চিকিৎসার কাজে প্রতিবছর ২০ লাখের বেশি যাত্রী এ বন্দর দিয়ে যাতায়াত করে। আগে যেখানে ঢাকা থেকে পণ্যবাহী ট্রাক বা যাত্রীবাহী বাস এ বন্দরে পৌঁছাতে ১২ ঘণ্টা এমনকি অনেক সময় দিন পার হয়ে যেত, এখন সেখানে ৪ ঘণ্টায় পৌঁছাচ্ছে বন্দরে। এতে পাল্টে গেছে এর বাণিজ্য ও ভ্রমণের চিত্র।

বন্দরের পরিসংখ্যান মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে ভারত থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৮ লাখ ৯৮ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে ভারত থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৯ লাখ ৮ হাজার ৯৫৬ মেট্রিক টন; আমদানি বেড়েছে ১০ হাজার ৫৫৬ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করেছে ১৯ লাখ ৮৫ হাজার ৪০৭ জন; আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে ছিল ১৯ লাখ ৯৮ হাজার ৪৪৭ জন। এক্ষেত্রে যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে ১৩ হাজার ৪০ জন। পদ্মা সেতুর আগে এ রুটে যাত্রীর সংখ্যায় বছরে ১৫ লাখ পাসপোর্টধারী এবং আমদানি বাণিজ্য ১৮ লাখ মেট্রিক টনের ঘরে ছিল।

বেনাপোল ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্টস এন্ড এক্সপোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আগে ঢাকা খেকে বেনাপোল বন্দরে পণ্যবাহী ট্রাক পৌঁছাতে ১০ ঘণ্টা থেকে পুরো দিন লেগে যেত। এখন পদ্মা সেতু দিয়ে ৪ ঘণ্টায় বন্দরে পণ্য পৌঁছায়। দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণে বড় ভূমিকা এ পদ্মা সেতুর।’

ভারতগামী পাসপোর্টধারী জমির বিশ্বাস বলেন, ‘সেতুর কারণে ভোর ৪ টার আগে বন্দরে পৌঁছাতে পারছি। যা আগে দ্বিগুণ সময় লাগতো। তবে পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে জনবল বৃদ্ধি আর ভোর ৫ টায় বেনাপোল বন্দর খোলা হলে যাত্রী আরও বাড়বে এ রুটে।’

বেনাপোল ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্টস এন্ড এক্সপোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর সুফলে বাণিজ্য ত্বরান্বিত হয়েছে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে; বাড়ছে রাজস্ব আয়ও।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ জানান, পদ্মা সেতুর কল্যাণে বেনাপোল বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন আমদানিকারকরা। দ্রুত পণ্য গন্তব্যে পৌঁছানোয় সবাই উপকৃত হচ্ছেন।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের নেতা আমিনুল হক আনু বলেন, ‘পদ্মা সেতু দক্ষিণবঙ্গের মানুষের জন্য আশীর্বাদ। ভাঙা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত হলে এ পথে বাণিজ্য ও রাজস্ব আয় দ্বিগুণ বাড়বে। বর্তমানে বেনাপোল বন্দর থেকে সরকার ১০০ কোটি টাকা ভ্রমণ খাতে ও ৫ হাজার কোটি টাকা আমদানি বাণিজ্য থেকে রাজস্ব আয় করছে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, পদ্মা সেতু ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে আশীর্বাদ। এরই মধ্যে দুবছরে সে সুফল এ পথে যাতায়াতকারী ব্যবসায়ী ও পাসপোর্টধারীরা পাচ্ছেন। বন্দরে আরও সুবিধা বাড়াতে তারা এর মধ্যে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম শুরু করেছেন। আধুনিক বন্দরে রূপান্তরের কাজ শেষ পর্যায়ে। ভারত অংশেও তাদের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ চলছে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, দুবছরে সেতুতে ১ কোটি ২৭ লাখ ১৩ হাজার ২৭৫টি যান পারাপার হয়েছে। এতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ হাজার ৬৪৮ কোটি ৭৬ লাখ ১৮ হাজার ৩০০ টাকা। এ সময় প্রতিদিন গড়ে যান চলাচল করেছে ১৯ হাজার ১৬৮টি। প্রতিদিনের গড় টোল আদায় ২ কোটি ৩২ লাখ ১৪ হাজার ২২২ টাকা। প্রথম বছর ৫৭ লাখ ১৭ হাজার ৪৬টি যান পারাপারে টোল আদায় হয়েছে ৮০১ কোটি ৪৪ লাখ ২৭ হাজার ২০০ টাকা। আর দ্বিতীয় বছর আয় আরও বেড়েছে। ৬৯ লাখ ৯৬ হাজার ২২৯টি যান পারাপারে টোল আদায় হয় ৮৪৭ কোটি ৩১ লাখ ৯১ হাজার ১০০ টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *