তিন দলের সমাবেশ: সর্বাত্মক প্রস্তুতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর

তিন দলের সমাবেশ: সর্বাত্মক প্রস্তুতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর

জাতীয় স্লাইড

অক্টোবর ২৭, ২০২৩ ৮:৩২ পূর্বাহ্ণ

সরকার পতনের একদফা দাবিতে আগামীকাল শনিবার রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশ। এর বিপরীতে একই দিন আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সামবেশ। জামায়াতে ইসলামের পক্ষ থেকেও সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

একদিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ঘিরে বিরাজ করছে উত্তেজনা। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না বলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিকে অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক থাকলেও সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন পুলিশ।

তাই দুই দলকেই ডিএমপির পক্ষ থেকে আলাদা চিঠি দিয়ে সমাবেশের জন্য বিকল্প দুটি ভেন্যুর প্রস্তাবসহ সুনির্দিষ্ট সাতটি বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। তবে কোনো দলই বিকল্প ভেন্যুর প্রস্তাব দেয়নি। বিএনপি নয়াপল্টনস্থ কার্যালয়ের সামনে এবং আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটেই সমাবেশ করতে অনড়। দুই দলের পক্ষ থেকে পৃথক চিঠিতে বৃহস্পতিবার বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। এ পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অলআউট প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সমাবেশ ঘিরে র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে প্রস্তুত থাকবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পরিস্থিতি তৈরি হলেই তারা অ্যাকশনে যাবে। ডিএমপি পক্ষ থেকেই প্রায় ২৫ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে রাজধানীজুড়ে। এছাড়া পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের সদস্যরাও তৎপর থাকবে। কর্মসূচিস্থল ও আশপাশসহ ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকে মাঠে নামছে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য।

ইতোমধ্যে নজরদারি শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। পুলিশের সাইবার ইউনিট চোখ রাখছে সাইবার জগতে। কেউ যাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সেজন্য নজদারি বাড়ানো হয়েছে। সন্দেহভাজনদের তল্লাশি জিজ্ঞাসাবাদের পাশপাশি মোবাইল ফোন ঘেঁটে দেখছে পুলিশ সদস্যরা।

সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিকে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশ সদর দপ্তর এবং ডিএমপি সদর দপ্তরে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কর্মসূচি চলাকালে পুলিশ সদস্যরা যেন হামলার শিকার না হয় সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়।

পাশাপাশি যাদের নামে মামলা আছে বা রাজনৈতিক দলের যেসব নেতাকর্মীর নামে ওয়ারেন্ট আছে তাদের গ্রেফতারে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। রাজধানীর প্রবেশ পথসহ বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে র‌্যাব-পুলিশের তল্লাশি অভিযান। গত ২৪ ঘণ্টায় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের প্রায় ২০০ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের নামে দেওয়া হয়েছে নতুন নতুন মামলা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মোট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরক্তি কমিশনার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিকে ঘিরে আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছি। সমাবেশে যাতে শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্ন হয় সেজন্য আমার দুটি বড় রাজনৈতিক দলে চিঠি দিয়ে সাতটি বিষয় জানতে চেয়েছি। তারা এরই মধ্যে চিঠির উত্তর দিয়েছে। এসব চিঠিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিচার-বিশ্লেষণ করছি।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। তিনি বলেন, হয়রানির মনোভাব নিয়ে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করছে না। যাদের নামে মামলা, ওয়ারেন্ট এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে কেবল তাদেরই গ্রেফতার করা হচ্ছে।

ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার প্রবেশ পথ বন্ধের কোনো পরিকল্পনা পুলিশের নেই। পুলিশ কাজ হলো মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া। নগরবাসী যেনো কোনো দুর্ভোগে না পড়েন সে বিষয়টি মাথায় রেখেই নিরাপত্তা ছক প্রণয়ন করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেউ নাশকতার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজধানীর প্রবেশ পথগুলোতে পর্যাপ্ত চেকপোস্ট থাকবে।

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, দুই দলের সমাবেশকে ঘিরে আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। রাজতৈকি দলের কর্মসূচিকে ঘিরে কেউ ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কে কোনো দলের সদস্য তা বিবেচ্য হবে না। তিনি বলেন, পুলিশ সব পথচারীকে তল্লাশি বা সবার মোবাইল ফোন চেক করছে না। যাদের সন্দেহ হচ্ছে তাদের তল্লাশি করা হচ্ছে। তল্লাশি চালিয়ে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া না গেলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা পুলিশের রুটিন ওয়ার্ক।

ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের উপকমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন বলেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে আমরা অল আউট প্রস্তুতি নিয়েছি। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয় সভা করেছি। পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য ইউনিটও দায়িত্ব পালন করবে। বিজিবি প্রস্তুত থাকবে। প্রয়োজনে তারা মাঠে নামবে। তিনি বলেন, হোটেল, রেস্টুরেন্টে যেন কোনো নাশকতাকারী বা অপরাধী চক্র লুকিয়ে থাকতে না পারে সেজন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ঢাকার বাইরে থেকে যেন কোনো অপতৎপরতাকারী ঢাকায় প্রবশে করতে না পারে সে ব্যাপারে পুলিশ সতর্ক আছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন এবং বায়তুল মোকাররমসহ আশপাশের এলাকার সরকারি অফিস, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, কেপিআই ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বাসভবনে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। সিসি ক্যামেরা সচল রেখে ফুটেজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের জন্য বেশ কয়েকটি ক্যামেরাসহ উন্নত সরঞ্জামাদি সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মিডিয়া সেন্টারে কর্মরত বেশকিছু পুলিশ সদস্য শনিবার সাংবাদিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন। কর্মসূচিকে ঘিরে স্টিল ক্যামেরাম্যান ও ভিডিও ক্যামেরাম্যান কাজ করবে।

সাভার থেকে মতিউর রহমান ভান্ডারী জানান, ঢাকার প্রবেশমুখ আমিনবাজার ও সাভার হাইওয়ে থানার সামনে চেকপোস্ট বসিয়ে যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশি শুরু করেছে ঢাকা জেলা পুলিশ ও র‌্যাব। বৃহস্পতিবার সকালে এ তল্লাশি কার্যক্রম হয়। দুপুরে আমিনবাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঢাকাগামী বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও ক্ষেত্রবিশেষে তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগসহ তল্লাশি করছে পুলিশ। গণপরিবহণ, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলের প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ নজর ছিল। পুলিশি তল্লাশির কারণে সড়ক যানবাহন চলাচলে ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *