জামায়াতকে নিয়ে যা বললেন চার মন্ত্রী

জামায়াতকে নিয়ে যা বললেন চার মন্ত্রী

রাজনীতি স্লাইড

জুন ১২, ২০২৩ ১:২৫ অপরাহ্ণ

প্রায় এক দশক পর পুলিশের অনুমতি নিয়ে ঢাকায় সমাবেশ করে ফের আলোচনায় জামায়াতে ইসলামী। এ নিয়ে রাজনীতিসহ সব মহলে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা।

রোববার আলাদা আলাদা অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং সিনিয়র মন্ত্রীরাও বিষয়টি নিয়ে নানা মন্তব্য করেছেন।

‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে’ জামায়াতকে ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, জামায়াত এখনও যেহেতু নিষিদ্ধ নয়, সেজন্য তাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তথ্যমন্ত্রীর মতো একই ধরনের মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতকে দোষী বলা যাবে না। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মতে, সমাবেশের অনুমতি দিলেও জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে আওয়ামী লীগের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে শীর্ষনেতাদের দণ্ডিত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতের তাণ্ডবের প্রেক্ষাপটে ২০১৩ সালের পর থেকে ঢাকায় পুলিশের অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করতে পারেনি জামায়াতে ইসলামী। নানা সময়ে ঝটিকা মিছিল করলেও নির্বিঘ্নে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি তারা। কর্মসূচি পালনে নেমে, এমনকি ঘরোয় সভা করতে গিয়েও গ্রেফতার হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক দলগুলো বিভিন্ন সময় জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলেছে। এরই মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে রায় দেয় হাইকোর্ট। এ বিষয়ে তাদের আপিল এখনও বিচারাধীন। এরই মধ্যে প্রায় এক দশক পর হঠাৎ পুলিশের অনুমতি নিয়ে ঢাকায় প্রকাশ্যে সমাবেশ করল দলটি।

সচিবালয়ে রোববার জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ফার্ডিনান্ড ফন ভেইহের সঙ্গে বৈঠকের পরে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাককে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন। জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা রাজনৈতিক ব্যাপার। এটা একটা পলিটিক্যাল ডিসিশন, এটি সময়ই আমাদের বলে দেবে। তিনি বলেন, তারা (জামায়াত) রাজনৈতিক দল, হাই কোর্টের রায় ছিল সংবিধানের সঙ্গে তাদের গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক, গ্রহণযোগ্য নয়। এ পরিপ্রেক্ষিতেও তাদের তো অনেক জনগণের সমর্থন আছে। এ পরিস্থিতির আলোকে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। আপনারা একটু অপেক্ষা করুন, আরও দেখবেন কী হয়?

‘রাজনীতিতে অনেক পদক্ষেপ নিতে হয়’ মন্তব্য করে তার ব্যাখ্যায় ড. রাজ্জাক বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অনেক প্রতিক‚লতার মাঝে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র সুপরিকল্পিতভাবে, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করার জন্য, দেশটিকে পাকিস্তানের ধারায় নেওয়ার জন্য অনেক কিছু করেছে। এ দেশে জয় বাংলা স্লোগান দেওয়া যায়নি, বঙ্গবন্ধুর নাম মুখে আনা যায়নি। তখন আমাদের পরিস্থিতির আলোকে অনেক পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। সেটিই আমি বলতে চেয়েছি।

এ বিষয়ে রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকরা রাজধানীতে জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ নিয়ে প্রশ্ন করলে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জামায়াত এখনও যেহেতু নিষিদ্ধ হয়নি, রাজনৈতিক দল হিসাবে আবেদন করেছে, সে জন্য তাদের সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে গতকাল (শনিবার) তাদের সমাবেশ থেকে আস্ফালন করে যেভাবে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, এগুলো আসলে বিএনপিরই বক্তব্য। ২০১৪ সালে তারা যেভাবে নির্বাচন প্রতিহত করতে গিয়ে শত শত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছিল, সেটারই ইঙ্গিত তারা দিয়েছে। বিএনপি জোটের প্রধান শরিক জামায়াতকে দিয়ে তারা এ কথাগুলো বলিয়েছে। তাদের সুযোগ দিলে তারা কী করতে পারে সেটি তাদের বক্তব্যে পরিষ্কার হয়েছে।
একদিকে জামায়াতে ইসলামীকে দল হিসাবে নিষিদ্ধ করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগের কথা শোনা যাচ্ছে, অন্যদিকে দলটিকে ১০ বছর পর সমাবেশ করতে মাঠে নামার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ

টা সাংঘর্ষিক কিনা- রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক অনুষ্ঠানে এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, তিনি সাংঘর্ষিক মনে করেন না। তিনি বলেন, চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতকে দোষী বলা যাবে না। বিচার করার পর যতক্ষণ পর্যন্ত রায় না হয়, দোষী সাব্যস্ত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি বলতে পারবেন না, জামায়াত নিষিদ্ধ।

আইনমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যেসব তথ্য এসেছে তাতে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করার যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত আছে। এ সংক্রান্ত আইনটি সংশোধনের জন্য কিছুদিনের মধ্যে মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাই এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতে পারেন।

রাজধানীর রাজারবাগে রোববার এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, জামায়াত একটি অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। দেশের অনেক অনিবন্ধিত দলই বিভিন্ন প্রোগ্রামের আয়োজন করে। অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল তাদের সভা-সমাবেশ ইনডোরে করতেই পারে। তারা ইনডোরে সমাবেশ করতে চেয়েছিল, ডিএমপি কমিশনার সেটা যাচাই করে অনুমতি দিয়েছেন।

এক দশকের বেশি সময় পর রাজধানীতে জামায়াতের এ সমাবেশ আওয়ামী লীগের নীতির পরিবর্তন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে আওয়ামী লীগের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। সাধারণত জামায়াত জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে তাদের সমাবেশ করে থাকে। এসব সমাবেশে অনেক সময় আমরা দেখেছি, তারা যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে। এসব কিছু মাথায় রেখেই তাদের ইনডোরে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *