গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকতে আমলকী খাওয়ার উপকারিতা

স্বাস্থ্য

জুন ১৬, ২০২২ ৮:২১ পূর্বাহ্ণ

আমলকী আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। চিকিত্‍সকরা আমলকী খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ভেষজগুণসম্পন্ন এই আমলকী ফল ও পাতা দুটোই ওষুধরূপে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় মায়েদের সুরক্ষায় আমলকী বেশ উপকারী।

গর্ভাবস্থায় হবু মায়ের শরীরে একাধিক পরিবর্তন দেখা যায়। যার কারণে খাওয়ার রুচি চলে যায়। আমলকী টকজাতীয় ফল হওয়ায় এটা গর্ভবতীরা খেতেও পছন্দ করেন। তা ছাড়া গর্ভাবস্থায় আমলকী খাওয়া একদম নিরাপদ!

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, আমলকীতে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে ৩ গুণ ও ১০ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। আমলকীতে কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে।

তাহলে জেনে নিন, গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকতে আমলকী খাওয়ার উপকারিতা।

১. শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় আমলকী। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এর উপাদান গর্ভাবস্থায় হয়ে থাকা সাধারণ জ্বর এবং মূত্রনালির সংক্রমণ রোধে সহায়ক।

২. অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য সকালের সময়টা খুব অস্বস্তিকর হয়। বেশির ভাগ হবু মা এই সময় ক্লান্তি অনুভব করেন, অলসতা অনুভব হয়, বমি বমি ভাব আসে, কোনো কাজ করতে ইচ্ছে করে না, মেজাজও বিগড়ে থাকে। আমলকী বমি বমি ভাব এবং প্রাতঃকালীন অসুস্থতাকে দূর করতে চমকপ্রদ ওষুধ।
৩. গর্ভাবস্থায় অ্যাসিডিটির সমস্যা সবারই হয় কমবেশি। আমলকীর জুস খেলে অম্বলের সমস্যাও মেটে।

৪. কোষ্ঠকাঠিন্য, অর্শ্বরোগ, অন্তঃসত্ত্বাদের সাধারণ সমস্যা। আমলকীতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে সহজে। এটি আয়রন এবং অন্যান্য পুষ্টি শোষণেও সহায়তা করে এবং সামগ্রিক হজমশক্তি বাড়ায়।

৫. গর্ভাবস্থায় হাত ও পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া খুবই সাধারণ লক্ষণ। আমলকী খেলে এ সমস্যা মিটবে। কারণ, আমলকীতে থাকে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। এ ছাড়া আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে জলীয় উপাদান থাকায় এটা দেহকে হাইড্ৰেট রাখতে সাহায্য করে।

৬. আমলকী খেলে অন্তঃসত্ত্বাদের রক্তচাপ ঠিক থাকে। আমলকীতে থাকা ভিটামিন সি রক্তনালি প্রসারিত করতে সাহায্য করে, যা স্বাভাবিক রক্তচাপ ধরে রাখে এবং রক্তচাপ বাড়তে দেয় না।

৭. গর্ভাবস্থায় মাড়ি থেকে রক্ত বের হয় অনেকের। যার ফলে নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ আসে। আমলকীতে থাকা ভিটামিন সি এ দুই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় দাঁত ভালো রাখে। দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়তা করে আমলকী।

৮. আমলকী হলো একটি চমৎকার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এর মধ্যে থাকা জলীয় উপাদানের কারণে অন্তঃসত্ত্বাদের প্রস্রাবে সমস্যা হয় না। প্রস্রাবের মাধ্যমে দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলো বেরিয়ে যায়।

৯. ডায়াবেটিস না থাকলেও গর্ভাবস্থায় অনেকের ডায়াবেটিস দেখা দেয়। যেটাকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলে। গর্ভাবস্থায় হরমোনগুলো ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আমলকীর মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ডায়াবেটিক উপাদান হবু মায়েদের মধ্যে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনাকে কমিয়ে দেয়।

১০. আমলকীর জুস গর্ভস্থ শিশুর স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই গর্ভাবস্থায় হবু মা-কে আমলকী খেতে বলা হয়।

যেভাবে খাবেন

গর্ভবতীরা কাঁচা আমলকী খেতে পারেন। এ ছাড়া আমলকীর জুস করেও খাওয়া যায়। বাজারে আমলা ক্যান্ডি, জ্যাম, আচারও পাওয়া যায়। সেগুলো খেতে পারেন। তবে কতটা খাবেন সেটা জানা খুব জরুরি। প্রতিদিন একটি বা দুটি করে আমলকীর টুকরো খেতে পারেন। আমলকীর জুস ৫-১০ মিলি খেলেই যথেষ্ট। ক্যান্ডি বা আচার খেলে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন তাতে যেন অতিরিক্ত লবণ বা চিনি না থাকে।

সূত্র: বোল্ডস্কাই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *