কঠোর কর্মসূচির চাপ কেন্দ্রকে তৃণমূলের

কঠোর কর্মসূচির চাপ কেন্দ্রকে তৃণমূলের

রাজনীতি স্লাইড

অক্টোবর ২৩, ২০২৩ ১২:২৭ অপরাহ্ণ

সরকার পতনের একদফা দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি। ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণার কথা রয়েছে। তবে গতানুগতিক নয়, এবার কঠোর কোনো কর্মসূচি চায় দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, হারানোর কিছু নেই। গত ১৫ বছরে অনেক হামলা-মামলা-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এবারও যদি কোনো ‘ভুলের’ কারণে আন্দোলন ব্যর্থ হয়, তবে তার চড়া মাসুল দিতে হবে। তাই তারা ‘ডু অর ডাই’ মনোভাব নিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছেন। কেন্দ্র থেকে ‘অল আউট’ কর্মসূচির ডাক এলেই একযোগে মাঠে নামতে চান। দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

অন্তত ২০ জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, তাদের মতামত ইতোমধ্যে কেন্দ্রকে জানিয়েছেন। দলটির একাধিক নীতিনির্ধারকও জানান, কঠোর কর্মসূচির বিষয়ে তৃণমূল থেকে চাপ বাড়ছে। তাদের মতামত স্থায়ী কমিটির একাধিক সভায় গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিএনপির প্রাণ হলো তৃণমূল। সুতরাং আগামী দিনের আন্দোলন তাদের চাওয়া অনুযায়ীই হবে, সেদিকেই যাচ্ছে।

টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অনেক আগে থেকেই কঠোর কর্মসূচি চাচ্ছে। কিন্তু জাতীয় নেতারা চিন্তাভাবনা করেই কর্মসূচি দিচ্ছেন। তবে তৃণমূল নেতাকর্মীর আশা, ২৮ অক্টোবর থেকেই লাগাতার কর্মসূচি দেবে। সেটা হরতাল, অবরোধ বা ঘেরাও কর্মসূচি হতে পারে। ‘ডু অর ডাই’-এমন মনোভাব সবার।

তিনি আরও বলেন, দাবি আদায়ে নেতাকর্মীদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা তো সব সময়ই অত্যাচার-নির্যাতন, মামলার মধ্যে আছি। এখন মাঠে নামা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সময়ও নেই। সামনে নভেম্বরের শুরুতে তফশিল ঘোষণা করতে পারে। এজন্য তৃণমূলের নেতাকর্মীদের আশঙ্কা, নির্বাচন হয়ে গেলে কী হবে। এজন্য তারা কঠোর কর্মসূচি চাচ্ছে।

একই কথা জানান গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন। তিনি বলেন, নেতাকর্মীরা একদফার আন্দোলন এগিয়ে নেওয়ার জন্য উদগ্রীব। এজন্য তারা পরবর্তী কঠোর কর্মসূচি চান। একদফা বাস্তবায়নের জন্য যে যে কর্মসূচি দেওয়া দরকার, সে ধরনের কর্মসূচি প্রত্যাশা সবাই করে। গাজীপুরের নেতাকর্মীরাও করছে। তারা যে কোনো কর্মসূচি সফল করার জন্য প্রস্তুত।

সূত্রমতে, ঢাকার মহাসমাবেশকে সামনে রেখে বিএনপির শীর্ষ নেতারা ধারাবাহিকভাবে সাংগঠনিক বৈঠক করছেন। পাশাপাশি সব সাংগঠনিক জেলা সফর করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এসব সফরে জেলা ও বিভাগীয় শহরের শীর্ষ নেতাদের সমাবেশের জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে এবং চূড়ান্ত আন্দোলনের বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। মহাসমাবেশ থেকে যেকোনো ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। এজন্যও নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হচ্ছে। তবে এই কর্মসূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। মহাসমাবেশের এক থেকে দুদিন আগে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হতে পারে। তাই বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশ পাওয়া মাত্রই যাতে নেতাকর্মীরা কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেন তৃণমূলেও তেমন প্রস্তুতি নিতে বলা হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, নারায়ণগঞ্জ সব সময় অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এখন ওয়ার্ড থেকে শুরু করে ইউনিয়ন, থানা সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা জাগরণের ভাব। এতদিন হাটেবাজারে যে কোনো জায়গায় গেলে মানুষ জিজ্ঞাসা করত বিএনপি কর্মসূচি দিচ্ছে না কেন, এই দুঃসময় কবে কাটবে? জিনিসপত্রের দামের কারণে মানুষ অতিষ্ঠ। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ২৮ অক্টোবর যে মহাসমাবেশ ডেকেছে, ওই সমাবেশ থেকে পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি দেবে। আমি মনে করি সেটাই চূড়ান্ত কর্মসূচি। এর মাধ্যমে সরকারের পতন হবে।

রোববার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে মহাসমাবেশ সফলে যৌথ সভা হয়। এতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিববৃন্দ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির শীর্ষ নেতা, সব বিভাগের সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকবৃন্দ, ঢাকা বিভাগের সব মহানগর ও জেলার সভাপতি/আহ্বায়ক/সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিববৃন্দ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি/আহ্বায়ক/সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিববৃন্দ, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব উপস্থিত ছিলেন। সূত্রমতে, যৌথ সভার বিএনপি মহাসচিব তাদের উদ্দেশে বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। যৌথ সভায় অংশ নেওয়া এক নেতা জানান, ‘মহাসচিব ছাড়া কোনো কোনো নেতা বক্তব্য দেননি। ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণের জন্য নির্দেশনা ছিল। মহাসচিব বলেছেন, সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সতর্ক থেকে কর্মসূচি সফল করতে হবে। সরকার খুব ভয়ভীতি দেখাবে। যে কোনো উপায়ে সরকার খারাপ পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। তবে সবকিছু উপেক্ষা করে শান্তিপূর্ণভাবে যে যার অবস্থানে থেকে মহাসমাবেশ সফল করবেন। সর্বোচ্চ নেতাকর্মী নিয়ে এতে অংশ নেওয়ার জন্যও কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকার কঠোর হলে, বাধা দিলে কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে বলে আমরা ধারণা পেয়েছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *