কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে অবাক করা ‘প্লাস্টিক সমুদ্র’

জাতীয়

নভেম্বর ২৩, ২০২৩ ২:২১ অপরাহ্ণ

 

জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতির কারণ হিসেবে দূষণের তালিকায় জোরালোভাবে যে নামটি আলোচিত হয়, তা হলো প্লাস্টিক দূষণ। প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা এতটাই বাড়ছে, যার কারণে জলজ প্রাণী, খাদ্য শৃঙ্খল ও মানুষের জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই প্লাস্টিকজাতীয় পণ্য ব্যবহারে সংযমী, সচেতন ও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বনে জনগণকে সচেতন করতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ‘প্লাস্টিক সমুদ্র’ নামে শুরু হয়েছে ভিন্নধর্মী এক প্রদর্শনী।

বুধবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে সৈকতের সি গাল পয়েন্টে বেলুন উড়িয়ে ‘প্লাস্টিক সমুদ্র’ নমুনা প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান।

সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে নানা ধরনের প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার করে দর্শনার্থীদের দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে নীরবে-অগোচরে, অজান্তে প্লাস্টিক কীভাবে মানুষের ক্ষতিসাধন করছে।

প্রদর্শনীতে একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা রয়েছে, ‘মানুষের আবাসস্থল, সেটা হোক বাসাবাড়ি কিংবা আবাসিক হোটেল। সেখান থেকে প্লাস্টিকের বর্জ্য ফোয়ারার আকারে বেরিয়ে ভূমিতে, জলাশয়ে বা সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে; যা জাহাজের মতো করে ভাসতে থাকে। সামুদ্রিক মাছ, প্রাণী, গাংচিল তাদের খাবার মনে করে তা গ্রহণ করে যা পরবর্তী সময়ে হজম হয় না। যার কারণে অকালে মারা যায় নিষ্পাপ প্রাণী ও পাখিগুলো। বড় বড় প্লাস্টিকের টুকরো ও পরিত্যক্ত জালে আটকে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে কাছিমের মৃত্যু ঘটে। মরে পড়ে থাকা মাছ কিংবা গাংচিলের পেটে ছোট ছোট প্লাস্টিকের বোতল আর টুকরোগুলো বলে দেয় যত্রতত্র প্লাস্টিক সামগ্রীর দূষণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে স্বাভাবিক বাস্তুসংস্থান। ফলে নির্মমভাবে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।’

বিদ্যানন্দের বোর্ড মেম্বার মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন জানান, ‘কক্সবাজারে শীত মৌসুমে সারা দেশ থেকে প্রচুর পর্যটক আসে। এই সময় পর্যটকরা যেন যত্রতত্র প্লাস্টিক না ফেলেন এবং প্লাস্টিক রিসাইকেল নিয়ে সচেতন হন, এ বিষয়ে সচেতন করতেই মূলত এই আয়োজন। বিদ্যানন্দ স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হলেও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে পাশে পেয়েছে বলে সম্ভব হয়েছে এমন ভিন্নধর্মী আইডিয়া বাস্তবায়ন করা। আশা করছি, বিনোদনের পাশাপাশি মানুষের অভ্যাস পরিবর্তনে এই প্রদর্শনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

কক্সবাজার সৈকতের বালির উপর নির্মিত হয় পাঁচটি ভাস্কর্য। যার মধ্যে রয়েছে বাড়ি, জাহাজ, কাছিম, সামুদ্রিক কোরাল ও গাংচিল। প্লাস্টিকের কারণে এসব প্রাণীর ভয়াবহ অবস্থা দেখে অনেকেই অবাক হচ্ছে এবং সচেতন হবার প্রতিজ্ঞা করছেন।

আগত পর্যটক কামরুল হাসান বলেন, প্লাস্টিক এভাবে আমাদের ক্ষতি করছে আগে তো কোনদিন এভাবে চিন্তা করেনি। এখন বালিয়াড়িতে এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে বুঝতে পেরেছি, প্লাস্টিক মারাত্মক ক্ষতিকর।

আরেক পর্যটক ইয়াছিন আরা চুমকি বলেন, আমরা সৈকতে বেড়াতে এসে প্লাস্টিক বোতল, চায়ের কাপ কিংবা খাবারের প্যাকেট যত্রতত্র বালিয়াড়িতে ফেলে দি। কিন্তু চিন্তা করেনি, এই প্লাস্টিক সমুদ্র গিয়ে সমুদ্র দূষণের পাশাপাশি সামুদ্রিক প্রাণীসহ জীব বৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি করি। এখন থেকে এসব অভ্যাস পরিত্যাগ করব, যা এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিখতে পারলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *