এআরএফ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ব্লিংকেনের যে আলোচনা হলো

এআরএফ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ব্লিংকেনের যে আলোচনা হলো

জাতীয় স্লাইড

জুলাই ১৭, ২০২৩ ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা পুনর্ব্যক্ত করলেও নির্বাচনি প্রক্রিয়া নিয়ে নিশ্চুপ বিদেশিরা। ওয়াশিংটন চায়, বাংলাদেশ নিজেই নির্বাচনি প্রক্রিয়া নির্ধারণ করুক। ইইউ চায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্র সংলাপের পক্ষে হলেও নিজে এতে যুক্ত হতে চায় না। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যরা কীভাবে সহায়তা করবে-এ নিয়ে কৌতূহল রয়েছে সবার মধ্যে। মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সফরের পর এটি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তারা আবার কোনো পদক্ষেপ নেবে কিনা এমন শঙ্কাও করছেন কেউ কেউ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় বাধা হলে ভোটের আগেই ভিসানীতির প্রয়োগ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু ভোট নয়, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে বাধা, স্বাধীন মতপ্রকাশে হস্তক্ষেপ, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন কারণে ভিসানীতি প্রয়োগ হতে পারে। অভিযুক্ত ব্যক্তি ও তার নিকটাত্মীয়কে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দেবে না কিংবা ভিসা বাতিল করবে। এমন ইঙ্গিত পেয়ে সতর্ক সরকার। রাজনীতিবিদ, আমলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরে বিষয়টা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। কখন কী পদক্ষেপ আসছে তা নিয়ে সন্তর্পণে বিশ্লেষণও হচ্ছে।

এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের আলোচনা হয়েছে। জাকার্তায় আসিয়ান রিজিওনাল ফোরাম (এআরএফ) সম্মেলনের সাইডলাইনে তাদের মধ্যে আলোচনা হয় বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। মন্ত্রী রোববার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘ব্লিংকেনের সঙ্গে খুব ভালো আলাপ হয়েছে। আমাদের ব্যাপারে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) খুবই খুশি। চাইনিজদের উত্থান নিয়ে তাদের কিছুটা উদ্বেগ আছে। এছাড়া, অন্যান্য বিষয়ে তাদের খুব বেশি ইন্টারেস্ট নেই।’

যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনি প্রক্রিয়ার প্রতি জোর দিলেও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে তেমন কিছু বলছে না। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) মনে করে, কোনো বড় রাজনৈতিক দল ভোট বর্জন করলে ফলাফল আগেই জানা হয়ে যায়। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন না হলে তা পর্যবেক্ষণের কিছু নেই। তাই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে ইইউ কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। বর্তমানে ইইউ নির্বাচনি অনুসন্ধানী মিশন দুই সপ্তাহের সফরকালে বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠককালে জানানো হচ্ছে যে, সিদ্ধান্ত হলে ইইউ ১৮০ জন পর্যবেক্ষক পাঠাবে। তবে সরকারকে এজন্য আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানাতে হবে। আবার নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ভিসা দিতে হবে।

কানাডা, জাপান, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশ বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। কেউ সহিংসতা চায় না। যদিও সম্পর্কের স্পর্শকাতরতা বিবেচনায় অনেক দেশই তা প্রকাশ্যে তা বলতে চায় না। সরকারের সঙ্গে গোপনে তাদের প্রত্যাশার কথা বলছে।

নির্বাচন ঘিরে সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারসংক্রান্ত উজরা জেয়ার মিশন। এই প্রতিনিধিদলে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি’র সহকারী অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অঞ্জলি কৌর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, মার্কিন প্রতিনিধিদল সফরকালে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করে নিশ্চিত করেছে যে, নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পক্ষে অবস্থান নেবে না। তারা নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের যে অঙ্গীকার করেছেন; যুক্তরাষ্ট্র সেটাই দেখতে চায়।

সূত্রমতে, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোনো পর্যায়ের কূটনীতিকের আচরণে সরকারের উচ্চপর্যায়ে বদ্ধমূল ধারণা ছিল যে, বাইডেন প্রশাসন শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। উজরা জেয়ার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল সরকারের সঙ্গে বৈঠকে ব্যাখ্যা দিয়ে স্পষ্ট করেছে। এসব ব্যাখ্যায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি আওয়ামী লীগের বিপক্ষেও নয়। ভিসানীতির লক্ষ্য হলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। কূটনৈতিক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র এটাও অবহিত করেছে যে, নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় কেউ ব্যত্যয় ঘটালে ভিসানীতি প্রয়োগ শুরু হতে পারে যে কোনো সময়। এমন হলে তা নিয়েও ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভিসানীতি প্রয়োগে সতর্কতা অবলম্বনের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সূত্রমতে, বাংলাদেশে নির্বাচনের পূর্বে বর্তমান পরিস্থিতির ব্যাপারে দিল্লির অবস্থানও যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করা হয়েছে। তাছাড়া, উজরা জেয়ার প্রতিনিধিদল ভারত সফর শেষ করে বাংলাদেশ সফরে এসেছে। এ প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের আলোচনা অনুষ্ঠান ‘ইনসাইড আউট’-এ যোগ দিয়ে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল নয়াদিল্লি হয়ে আসায় সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে তাদের মনোভাব পরিবর্তন ঘটেছে। তারা বাংলাদেশে আসার আগে খুবই উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। ওয়াশিংটন ডিসি, লন্ডন, ব্রাসেলস থেকে ফাঁস হয়েছে যে, তারা এখানে আসছে, কী জানি ঘটে।

আমেরিকান দল এল নয়াদিল্লি হয়ে। নয়াদিল্লি এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল আমেরিকানদের বাংলাদেশ সফরে পুরো কার্যক্রমে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেন। দিল্লি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলকে একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে জানান ওয়ালিউর রহমান।

এদিকে, কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন বাংলাদেশের এমন একজন রাজনীতিবিদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা কৌশল পরিবর্তন করেছে বলে তাদের কাছে মনে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে বলে চীন ও রাশিয়া মন্তব্য করার পর ওয়াশিংটন কৌশল পরিবর্তন করেছে। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কৌশল কী হতে পারে সে ব্যাপারে তিনি কোনো ধারণা দিতে পারেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *