নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে দুই কাঠার কম আকারের জমিতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে গড়ে উঠেছিল আট তলা ভবন। ভবনটি নির্মাণকাজে ইমারত বিধি অনুসরণ না করায় ৭ মাস আগে ওই ভবনে অভিযান চালায় রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। ভবনের কিছু কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হলেও এইচআই প্রপার্টিজ ফের ভবনটি মেরামত করেছে। রাজউকের দাবি এ বিষয়টি তাদের জানা নেই। রাজউকের চোখ ফাঁকি দিয়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি এই দুঃসাহস দেখিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এইচ আই প্রপার্টিজের চেয়ারম্যান হাজী মো. ইমাম হোসেন অবৈধভাবে ভবনটি গড়ে তুলছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিনে পাওয়া তথ্য সংবলিত সাইনবোর্ড অনুসারে রাজিয়া সুলতানা রোডের ডি ব্লকের ওয়াই-২৩ প্লটে আট তলা ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। প্লটটিতে জমির পরিমাণ ১ দশমিক ৮ কাঠা। যা পৌনে ২ কাঠার একটু বেশি। এটির নির্মাণ অনুমোদন স্মারক: ২৫.৩৯.০০০০.০৯৮.৩৩.৬৬৪.১৯ তারিখ: ২০ নভেম্বর ২০১৯। মোহাম্মদপুর হাউজিং এস্টেট মৌজার ভূমি জোত নং ৮২/৫৬ ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী ভবন নির্মাণের বেলায় ভবনের সামনে এবং চারপাশে অবশ্যই পর্যাপ্ত জায়গা ছেড়ে ভবন নির্মাণ করতে হবে। এ ছাড়া ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) অনুসরণ করতে হবে।
এ ছাড়া নির্মাণ বিধিমালার ৮ নং বিধির ৫ উপবিধি অনুযায়ী উল্লেখিত ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নিকটবর্তী সড়কের সেন্টার বা কেন্দ্র হতে কমপক্ষে ৪.৫ মিটার অথবা সড়ক সংলগ্ন ইটের সীমানা থেকে ১.৫ মিটার দূরে ইমারত নির্মাণ করতে হবে। বিধিমালা অনুযায়ী ভবনের পেছনে জায়গা ছাড়তে হবে ১ মিটার ও ভবনের পাশে জায়গা ছাড়তে হবে ০.৮ মিটার।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ওই ভবনে পেছনে জায়গা ছাড়া হয়েছে মাত্র ১ ফুট। নির্মাণাধীন ভবনের দুই পাশে কোনো জায়গায়ই ছাড়া হয়নি। ভবনের কাঠামো পাশের দুই ভবনের সঙ্গে জোড়া লাগিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এতে সৃষ্টি হয়েছে অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকিও। কেননা এক ভবনে আগুন লাগলে বা বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা ঘটলে তাতে পাশের ভবনও ঝুঁকিতে পড়বে।
নির্মাণ বিধিমালার সংশোধনী অনুযায়ী নতুন বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ২ কাঠা বা এর নিচের পরিমাণ জমিতে বাড়ি বা আবাসিক হোটেল নির্মাণে চারপাশের জমি ছাড়তে হবে সাড়ে ৩০ ভাগ। আর বাকি সাড়ে ৬৯ ভাগে ভবন নির্মাণ করা যাবে। এইচ আই টেকনোলজিস অ্যান্ড প্রপার্টিজ ভবনটি নির্মাণ করার ক্ষেত্রে জায়গা ছাড়ার এই নিয়মটিও মানেনি।
রাজউক তার অভিযানে ভবনটির অনুমোদনহীন অংশ উচ্ছেদ ও ভেঙে দিলেও আবারও তা জোড়াতালি দিয়ে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করেছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। ইমারত বিধিমালা বলে কিছু নেই, তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে এমন মনোভাব দেখিয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা খোঁজ-খবর নেব। প্রয়োজনে রাজউকের পক্ষ থেকে এইচ আই প্রপার্টিজের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ভবন জোড়াতালি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এইচআই প্রপার্টিজের মালিক হাজী মো. ইমাম হোসেনকে ফোন করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।