ইরান-ইসরাইল সংঘাত কোনদিকে যাচ্ছে?

ইরান-ইসরাইল সংঘাত কোনদিকে যাচ্ছে?

আন্তর্জাতিক

অক্টোবর ৪, ২০২৪ ৯:১৫ পূর্বাহ্ণ

ছয় মাসের মাথায় দ্বিতীয়বারের মতো ইসরাইলের অভ্যন্তরে ইরানের হামলার পর একদিকে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন ‘ইরানকে মূল্য দিতে হবে’। অন্যদিকে, ইসরাইল যদি জবাব দেওয়ার চেষ্টা করে, আবারো পাল্টা হামলা চালানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান।

হামাস, হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা ও ইরানের কমান্ডারদের হত্যার জবাব হিসেবেই মিসাইল হামলা চালানো হয়েছে বলে জানায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড।

বিবিসির আন্তর্জাতিক সম্পাদক জেরেমি বোয়েন তার বিশ্লেষণে বলছেন, ইরান ‘সিরিয়াস ড্যামেজ’ (গুরুতর ক্ষতি) ঘটানোর চেষ্টা করেছিল বলেই দেখা যাচ্ছে। ফলে ইসরাইলের জবাব কী হয় সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।

বিবদমান দুই দেশ এবং তাদের মিত্রদের তৎপরতায় মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি কোনদিকে যেতে পারে?

গত এপ্রিলে ইরান যখন ইসরাইলে আক্রমণ করে, তখন দৃশ্যমান কিছু একটা কিছু করে দেখানোর প্রচেষ্টাটা লক্ষণীয় ছিল। কিন্তু সেটা একটা প্রচেষ্টা হিসেবেই থেকে যায়, কারণ সেবার তাদের প্রায় সব ক্ষেপণাস্ত্রই ইসরায়েলি এবং আমেরিকান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কারণে ভূপাতিত হয়।

এবারের ব্যাপারটা ভিন্ন। ইরান গুরুতর ক্ষতি করার চেষ্টাতেই জোরদার আঘাত হেনেছে বলে মনে হচ্ছে। এবার অনেক বেশি আগ্রাসী তাদের প্রচেষ্টা।

ইসরাইলিদের মনোভাব

এপ্রিলে নেতানিয়াহুকে বড় ধরনের পাল্টা হামলা চালাতে বারণ করেছিলেন জো বাইডেন। তাতে ইসরাইলেরই জয় হবে বলে অভিমত ছিল তার। ইসরাইলও সেবার জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

তবে গতবার ইসরাইলের আন্তর্জাতিক সহযোগীরা দেশটিকে যেভাবে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছিলো এবার তেমনটি হওয়ার সম্ভাবনা কম।

এখন ইসরাইলে ভিন্ন হাওয়া বইছে।

দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটের করা টুইটের দিকে তাকালে এর একটা আভাস পাওয়া যায়। বেশ কড়া ভাষা ব্যবহার করেছেন বেনেট।

তিনি লিখেছেন, ৫০ বছরের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় সুযোগ মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা পাল্টে দেয়ার।

ইরানের ‘সন্ত্রাসী সরকারকে মারাত্মকভাবে পঙ্গু করে দিতে’ তাদের পরমাণু অবকাঠামোর দিকে নজর দেয়া উচিত ইসরাইলের, এমনটা মনে করছেন বেনেট।

তিনি যদিও এখন প্রধানমন্ত্রী নন। তবে, ভবিষ্যতে হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে ধারণা করা হয়, নিজেকে কঠোর হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা হয়তো সেজন্যই। কিন্তু তার বক্তব্য নিশ্চিতভাবেই দেশটির নাগরিকদের অন্তত একাংশের মনোভাবের প্রতিফলন।

এই মুহূর্তে ইরানের অর্থনীতির ক্ষতির কারণ হতে পারে এমন যেকোনো কিছুতে ইসরাইলের হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না বলে মনে করেন জেরেমি বোয়েন। হতে পারে সেটি পরমাণু প্রকল্প কিংবা পেট্রোকেমিক্যাল স্থাপনা।

তেহরানের বিরুদ্ধে ইসরাইল যদি কোনও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেয়, তবে ইসরাইলের সমস্ত অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালাবে ইরান।

ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর যুগ্ম প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাকেরি এই ঘোষণা দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন যে ইরানের বিশেষায়িত সামরিক শাখা রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করার জন্য প্রস্তুত।

লেবাননের হিজবুল্লাহ ইরানের একটি প্রতিরক্ষা ঢাল হিসেবে কাজ করে আসছিল। ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো আক্রান্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে, হিজবুল্লাহর ভাণ্ডারে থাকা অত্যাধুনিক অস্ত্রগুলো প্রতিরোধের কাজে লাগানো যেতো।

কিন্তু, মার্কিন এবং ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী, গত দুই সপ্তাহে সশস্ত্র সংগঠনটির অর্ধেক অস্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে। তাদের শীর্ষ নেতৃত্ব শেখ হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন, লেবাননে প্রবেশ করেছে ইসরাইলি সেনারা।

ফলে, হিজবুল্লাহর কারণে ইরানের যে প্রতিরোধটুকু ছিল, সেটি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে।

জেরেমি বোয়েনের বিশ্লেষণ, এর ফলে ইসরাইল আরো অবাধে তৎপরতা চালাতে পারছে।

আর ফ্র্যাংক গার্ডনার বলছেন, ইসরাইলের এখনকার কৌশল হিসেবে দেখা যাচ্ছে এক সাথে দু’ভাবে এগোনোর চেষ্টা। গুপ্ত হামলায় শত্রুকে নিশ্চিহ্ন করা, বিমান হামলা ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা- যার মাধ্যমে ইরান ও ছায়াশক্তিগুলোকে বুঝিয়ে দেয়া যে ইসরাইলে আঘাত করলে আরও বেশি শক্তির মুখোমুখি হতে হবে।

তবে, লেবাননে সম্মুখ যুদ্ধে ইসরাইলি সেনাদের প্রতিহত করার দাবি করেছে হিজবুল্লাহ।

বুধবার দুইবার মুখোমুখি লড়াই হয়েছে বলে জানায় তারা। সংগঠনটির বক্তব্য, এগুলো যুদ্ধের প্রথম পর্যায়।

ইরানে হামলার জন্য দীর্ঘদিনের একটি পরিকল্পনা ইসরাইলের হাতে থেকে থাকবে। অবশ্যম্ভাবী সামরিক লক্ষ্যবস্তু হবে স্থলভাগে যেখান থেকে মঙ্গলবারের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে।

ফায়ারিং এর জন্য ক্ষেপণাস্ত্র যেখানে রাখা হয়েছে সেই জায়গাই শুধু নয়, কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার, এমনকি রিফুয়েলিং সেন্টারগুলোও এর আওতায় থাকার কথা।

বুধবার গাজার খান ইউনিসে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৫১ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

অর্থাৎ, গত বছরের অক্টোবরে শুরু হওয়া ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের ইতি টানার মতো পরিস্থিতি হয়নি এখনো।

অন্যদিকে, জো বাইডেন ভূমধ্যসাগরে আরো সৈন্য পাঠিয়ে ইরানকে ইঙ্গিত করছেন, যদি ইসরায়েলের ওপর আঘাত আসে, সেটি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আঘাত বলেই বিবেচিত হবে।

এসব কারণে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা নিয়ে কথা উঠছে। চলমান ঘটনাপ্রবাহে তৈরি অস্থিতিশীলতা ও অশান্তির পরিপ্রেক্ষিতে কূটনৈতিক সমাধানের সুযোগ একেবারেই ক্ষীণ হয়ে এসেছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে বাড়তে থাকা আগুন দ্রুতই নরকে রূপ নিচ্ছে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এই মন্তব্য করেছেন তিনি।

অবশ্য, গুতেরেসকে নিজেদের দেশে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে ইসরাইল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *