আজ শুভ মহালয়া

ধর্ম

সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২ ৮:৩৪ পূর্বাহ্ণ

আকাশজুড়ে এখন শরতের শুভ্র মেঘমালা। এরইমাঝে আনন্দধ্বনি চারিদিকে। মা দুর্গার আগমনী সুর বেজে উঠেছে। আজ শুভ মহালয়া। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরুর প্রাক্কালে চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে মর্ত্যলোকে দেবী দুর্গাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। মূলত মহালয়া উদযাপনের মাধ্যমে দেবীর আরাধনা সূচিত হয়। এদিন থেকে দুর্গাপূজার ক্ষণগণনাও শুরু হয়। এদিন প্রত্যুষে মন্দিরে মন্দিরে চণ্ডীপাঠের মধ্যদিয়ে দেবীকে আবাহন করা হবে। ভক্তরা আত্মীয়-পরিজন ও পূর্ব পুরুষের আত্মার সদগতি প্রার্থনা করে তর্পণ করবেন।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি কাজল দেবনাথ যুগান্তরকে বলেন, আজ দেবীপক্ষের সূচনালগ্ন। এ উপলক্ষ্যে ভোরে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে প্রভাতী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এক ঘণ্টার এ আয়োজন ভোর ৬টায় শুরু হয়ে সকাল ৭টায় শেষ হবে। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের বেলতলায় সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত মা দুর্গার আগমনী মহালয়া অনুষ্ঠান হবে। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তর্পণ।

জানা গেছে, দেশের প্রায় সব মণ্ডপে একই ধরনের আয়োজন থাকবে। ১ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হবে। ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্যদিয়ে এ উৎসব শেষ হবে। এবার মা দুর্গার আগমন গজে ও দোলায় গমন। এর ফলাফল শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা।

শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে শনিবার বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। এবারের দুর্গাপূজা শঙ্কামুক্ত নয় বলে সভায় দাবি করা হয়। পরিষদের সভাপতি জেএল ভৌমিক বলেন, গত বছর পূজার সময়ের হামলাগুলোর বিচার হয়নি। আমাদের দাবি, এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হোক। আমরা সরকারের ওপর আস্থা রাখতে চাই।

লিখিত বক্তব্যে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, গত বছর দেশের দুর্গাপূজার সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১১৮টি। এবার এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ১৬৮টিতে। যা গত বছরের চাইতে ৫০টি বেশি। ঢাকা মহানগরে পূজার সংখ্যা ২৪২টি, যা গত বছরের চেয়ে ৭টি বেশি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ধারাবাহিকভাবে পূজার সংখ্যা বাড়ছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও শুভানুধ্যায়ীদের অনুদান নিঃসন্দেহে পূজার সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। পূজার সংখ্যা বৃদ্ধি নিশ্চয়ই আনন্দদায়ক। তবে পূজাকেন্দ্রিক নিরাপত্তার বিষয়টিও সবার বিবেচনায় নেওয়া দরকার। তিনি আরও বলেন, তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি। দুর্গাপূজা চলাকালে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি না দেওয়া, দুর্গাপূজাসহ অন্যসব প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় স্কুল, কলেজ, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা না নেওয়া এবং সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষা না নেওয়া।

সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি দাবি উত্থাপন করা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-অন্যসব জাতীয় উৎসবের মতো দুর্গাপূজা জাতীয় মর্যাদায় পালন; দুর্গাপূজায় ২ দিনের ছুটি ঘোষণা; কারাগার, হাসপাতাল, অনাথ আশ্রমে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন; একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষিত ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি ফেরত প্রদানে প্রশাসনিক জটিলতা নিরসন; সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ও দুষ্কৃতকারীদের দ্রুত বিচার; হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের পরিবর্তে হিন্দু ফাউন্ডেশন গঠন করা; প্রতিটি জেলায় একটি করে মডেল মন্দির কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা; টোল সংস্কার ও টোল শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন ধার্য করা এবং বিভিন্ন সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, মন্দিরে হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনার তদন্ত ও দ্রুত বিচার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *