অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ মিললে কঠোর ব্যবস্থা: রেলপথ সচিব

অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ মিললে কঠোর ব্যবস্থা: রেলপথ সচিব

জাতীয় স্লাইড

আগস্ট ২৬, ২০২৪ ৮:২৩ পূর্বাহ্ণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ৪ দিন ধরে বন্ধ। ৩ দিন বন্ধ থাকার পর ঢাকা-সিলেট রুটে ট্রেন চলছে ধীরে। বন্ধ রয়েছে ওই রুটে চলা পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন। নানা প্রশ্ন নড়বড়ে রেলপথ ও রেলওয়ে ব্রিজ নিয়ে। প্রতিবছরই অতিবৃষ্টি ও বন্যায় রেললাইন ও রেলব্রিজের ক্ষতি হয় এবং প্রতিবারই এগুলো মেরামত বা সংস্কারে প্রকল্প নেওয়া হয়। কাজের কাজ কিছুই হয় না। রেল কর্মকর্তারা বলছেন, সবই লোক দেখানো। এবারও বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠছে রেলের সংস্কার কাজের অনিয়ম-দুর্নীতির ভয়াল চিত্র।

জানা যায়, বন্যা কিংবা অতিবৃষ্টিতে রেললাইন, রেলব্রিজ দেবে যাওয়ার নজির যুগ যুগ ধরে চলছে। পানি নেমে যাওয়ার পর লাইন-ব্রিজ মেরামতে ঝাঁপিয়ে পড়া হয়, নেওয়া হয় একের পর এক প্রকল্প। এই সুযোগে একশ্রেণির কর্মকর্তা নামে লুটপাটে। আলাপ হয় রেলের সাবেক এক কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি জানান, রেলে দুর্নীতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। যে কোনো প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে রেলপথমন্ত্রী, সচিব থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত টাকা লুট করে। এছাড়া অধিকাংশ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে ‘রাজনৈতিক’ ব্যক্তি ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় উদ্দেশ্যমূলকভাবে।

কথা হয় রেলপথ সচিব আবদুল বাকীর সঙ্গে। রোববার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, ‘অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রেলপথ যথাযথ সংস্কার করা না হলে, গতির সঙ্গে সেবাও মিলবে না। শুধু নতুন লাইন নির্মাণ আর প্রকল্প গ্রহণ-বাস্তবায়ন করলেই হয় না, সংস্কার সবচেয়ে জরুরি। সংস্কার কাজে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ আবদুল বাকী বলেন, ‘বন্যার কারণে ঢাকা-সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল চালু করা হয়েছে। কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে এখনো ট্রেন চালানো সম্ভব হচ্ছে না। রেলের ডিজিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে রোববার জরুরি বৈঠক করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ রুটে সংস্কার কাজ শেষ করে ট্রেন চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

রেলওয়ে অবকাঠামো দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিবারই বন্যায় রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিবারই সংস্কারের নামে বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ আদায় করা হয়। অথচ সেই টাকা লুটপাট হয়। সংস্কার কাজ শেষ হতে না হতেই পুনরায় রেলব্রিজ দেবে যাচ্ছে। জরাজীর্ণ ব্রিজের পিলারে সংস্কারের নামে এক ধরনের ‘জ্যাকেট’ প্যাকেট করা হয়। এক্ষেত্রে লাখ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। অতিবৃষ্টি কিংবা বন্যা হলেই এসব ব্রিজের ব্যাপক ক্ষতি হয়। লাইনে এমনিতেই পাথর থাকে না। অল্প স্রোতেই অধিকাংশ পাথর সরে যায়। লাইনের দুপাশে নির্ধারিত উচ্চতার ওয়াল দেওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয় না। রেলস্টেশনগুলোর অবস্থাও খুব খারাপ। প্রতিটি স্টেশন আউটার এবং লেভেলক্রসিংগুলো যুগের পর যুগ ধরে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। এসবের মূলে রয়েছে অনিয়ম-দুর্নীতি। ক্ষত জিইয়ে রাখলেই সংশ্লিষ্টদের লাভ-এমন অভিযোগ খোদ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও। রেলওয়ে পরিবহণ ও অবকাঠামো দপ্তরের দাবি, সংস্কার কাজগুলো অধিকাংশই রাজনৈতিকভাবে হয়। ঠিকাদার থেকে শুরু করে মালামাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাপ থাকে। এতে করে প্রকল্প পরিচালক কিংবা সংশ্লিষ্ট রেল কর্মকর্তাদের কিছুই করার থাকে না।

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে জোনের সাবেক এক মহাব্যবস্থাপক জানান, অতিবৃষ্টি কিংবা বন্যা হলেই বিশেষ করে পূর্বাঞ্চল রেলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এর সমাধানে কোনো সরকারই এগিয়ে আসেনি। নামমাত্র সংস্কার কাজ করা হয়-টাকা লুটপাটের জন্য। এসব সংস্কার কাজের ৯৯ শতাংশই করা হয় রাজনৈতিক দলের ঠিকাদার দিয়ে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার নতুন রেলপথ নির্মাণের ক্ষেত্রেও নানা অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু বিগত সরকার এবং রেলপথমন্ত্রী ও সচিবদের কারণে সৎ রেলওয়ে কর্মকর্তারা অনিয়ম-দুর্নীতির কথা উপস্থাপন করতে পারেননি। কক্সবাজার লাইনটি তৈরির এক বছর না যেতেই গত বছর বন্যা-বৃষ্টির পানিতে মাইলের পর মাইল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাথর সরে যাওয়া থেকে শুরু করে লাইন বাঁকা হয়ে যায়। এবারও বন্যায় লাইনের অনেক ক্ষতি হয়েছে। পাহাড় ধসে লাইন বেঁকে গেছে। অথচ পাহাড়ি এলাকায় নির্ধারিত উচ্চতার ওয়াল দেওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।’

এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের যাত্রীরা টিকিট ফেরত দিয়ে টাকা নিয়ে নিচ্ছেন। এ বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন বলেন, বন্যার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ১০ দিন আগে যেসব যাত্রী অগ্রিম টিকিট কেটেছিল-তাদের টিকিট ফেরত নিয়ে টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। এ রুটে কবে নাগাদ ট্রেন চলাচল করবে-এমনটা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অগ্রিম টিকিটও বিক্রি সম্ভব হচ্ছে না।

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে মহাব্যবস্থাপক জিএম নাজমুল হোসেন বলেন, এখনো বিভিন্ন সেকশনে লাইনের ওপর পানি রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লাইন-ব্রিজগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। লাইন থেকে পুরোপুরি পানি নেমে না গেলে পুরোদমে সংস্কার কাজও শুরু করা যাচ্ছে না। রেলওয়ে মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী জানান, রোববার জরুরি বৈঠক হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেন চালাতে। স্টেশন এবং লাইনে এখনো পানি রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *