সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২ ৫:৪৪ অপরাহ্ণ
আদম তমিজী হক
২৮ সেপ্টেম্বর ৭৫ পেরিয়ে ৭৬ এ পা দিচ্ছেন ‘এ ট্রু লিজেন্ড’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একটি আদর্শ রাষ্ট্র ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রীর প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা আমাদের অনুপ্রেরণার উৎসস্থল। শেখ হাসিনা গত এক দশকে নিজের দেশকে বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনার আলোকে দাঁড় করিয়েছেন ফলে বাংলাদেশ একটি গ্রহণযোগ্য স্থিতিশীল উন্নয়নকামী দেশ হিসেবে বিশ্ববাসীর নজর কাড়ছে। কেউ কেউ এই ব্যবস্থা নির্মাণের কৌশলকে ‘ম্যাজিক’ বলছেন।
আমরা সবাই জানি, জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশ ইতিহাসের কতগুলো নির্মম বাঁক-প্রতিকূলতায় তার সময় অতিক্রম করেছে। দেশ স্বাধীনের পরে ’৭৫ সালের নির্মম হত্যাকাণ্ডের মধ্যকালে বঙ্গবন্ধু সময় পেয়েছিলেন মাত্র ৪৩ মাস। নবগঠিত দেশের নতুন সরকার একটি মেয়াদও ততদিনে শেষ করতে পারেনি। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা হোঁচট খেল ইতিহাসের এক কদর্য কালিমায়। জনগণের যে সংগঠিত রাজনৈতিক শক্তি ’৭১ সালে যুদ্ধ করেছে সেই শক্তি অপনোদনের চক্রান্তে সুপ্ত হলো সময়ের অবিচারে। এই দেশ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি-না এই নিয়ে দুনিয়াব্যাপী যত আলোচনা হয়েছে সে সবের অযুত প্রমাণ এখনও পাওয়া যায় যা অন্য কোন দেশের ইতিহাসে বিরল। কিন্তু ওই যে ভাষণের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে মুক্ত ও সম্মানজনক জীবনযাপনের অধিকারের জন্য বাঙালী জাতি বহু শতাব্দী ধরে সংগ্রাম চালিয়ে এসেছে- ফলে সেই সংগ্রাম বাংলাদেশের মানুষকে অব্যাহত রাখতেই হলো। আবার সেই সামরিক শাসন, অপশক্তির প্রকাশ্য বিচরণ ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়ে এই দেশের সংগ্রামের ইতিহাস ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হলো। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
যে বাঙালি জাতি কলঙ্কমোচনের দায় মাথায় নিয়ে সময় পার করছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও মুক্তিযুদ্ধ সময়কালে সংঘটিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বিচারের মাধ্যমে তার কলঙ্কমোচনের শুরু হলো। পাশাপাশি দেশের অগ্রযাত্রার সংগ্রাম। শেখ হাসিনা তার জীবন দর্শনে যুক্ত করেছেন এই সংগ্রাম যে কারণে এই অবিচল সংগ্রামী মানুষকেও হত্যার চেষ্টা করেছে সেই একই অপশক্তি যারা বঙ্গবন্ধুকে তাদের প্রধান শত্রু হিসেবে বিবেচনা করত। গত এক দশকে বাংলাদেশের যেসব ক্ষেত্রে উন্নয়ন অগ্রগতি ঘটেছে বৈশ্বিক বিবেচনায় সেসবের সূচক উর্ধমুখী।
বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের চেতনাই বাংলাদেশের উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি যা শেখ হাসিনা শক্তভাবে ধরে রেখেছেন ও এদেশের মানুষকে এই একটি চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস যোগাচ্ছেন। েআমরা যারা রাজনীতি করি তাদের হৃদয়ঙ্গম করা খুব জরুরী যে, মানুষের কল্যাণ ছাড়া রাজনীতিরও কল্যাণ হয় না। মানুষকে নিয়েই রাজনীতি। জননেত্রী শেখ হাসিনা যে দর্শনের কথা বলেন সেটি হচ্ছে সার্বিক উন্নয়ন দর্শন। শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়। ছাত্রদের তিনি সাদামাটা আদর্শিক জীবনযাপন করার লক্ষ্যে অর্থের মোহ ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছেন। কাড়ি কাড়ি টাকা রোজগার করে লাভ হবে না। জ্ঞান অন্বেষণ করতে হবে। জ্ঞান যত বৃদ্ধি পাবে সম্পদও তত বৃদ্ধি পাবে। জ্ঞানভিত্তিক সম্পদই মানুষের কল্যাণে কাজে লাগে। অবৈধ অর্থ মানুষের মধ্যে জিঘাংসার জন্ম দেয়। সেজন্য নেত্রী অবৈধ রোজগার থেকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ তথা সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। এই পরামর্শটিই নেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শন।
এই উন্নয়ন দর্শনকে কেন্দ্র করে আমাদের নিজেদেরই একটি প্রশ্ন করতে হবে- জাতীয় জীবনের কাঠামো আমরা কোন ভিত্তির ওপর গড়ে তুলব? শিক্ষা বিস্তার, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও শিল্পের উন্নতি, প্রতিরক্ষা এবং সমাজকল্যাণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বড় বড় উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে এই পরিকাঠামো সর্বত্র গড়ে উঠেছে। ফলে আগামী বিশ বছরের মধ্যে আমাদের সামাজিক সমস্যাগুলোর অধিকাংশই সমাধান করতে পারব। যে জন্য আমরা বলে আসছি ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশে রূপান্তর হবে।
বাংলাদেশের মানুষ যখন রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হলো তখন থেকেই গণতন্ত্রের ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত হলো। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত ধারণার ওপর চরম আঘাত আসতে শুরু করে অচিরেই। আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে তোলা হলো জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে। এক ঝড়ঝঞ্চাময় সময়কে মোকাবিলা করে শেখ হাসিনা হয়ে উঠেছেন অনবদ্য। একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনার অবদান আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এরইমধ্যে তিনি গণতন্ত্র, স্বাস্থ্য ও শিশু মৃতু্যর হার হ্রাস, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, দারিদ্র্য বিমোচন, উন্নয়ন এবং দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে সৌভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন খেতাব আর সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। মর্যাদাপূর্ণ অসংখ্য পদক, পুরস্কার ও স্বীকৃতির পালক এখন শেখ হাসিনার মুকুটে একের পর এক যুক্ত হচ্ছে।
শেখ হাসিনা জেগে ওঠা বাংলাদেশের এথেনা। পৌরাণিক গ্রিকদের সাহস, প্রজ্ঞা, কৌশল, ধৈর্য, ন্যায়, সংস্কৃতি প্রেরণাপ্রসূত প্রভূত, গুণাগুণের দেবী হলো এথেনা; সে তাদের সব স্পৃহায় যেমন সাহস মনোবলের যোগান দিত, সমসাময়িক বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা সেই দেবী রূপে, নব চেতনায় বাঙালির সৌরভ ও গৌরবকে সমুন্নত করতে আজ আমাদের সামনে আশীর্বাদ হয়ে দন্ডায়মান হয়েছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে এবং প্রাকৃতিক যে কোনো দুর্যোগ দুর্বিপাকে ধীরস্থিরভাবে নিঃশঙ্ক চিত্তে এগিয়ে যাচ্ছেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। আর এভাবেই একটি মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের এই এথেনা।
আদম তমিজী হক : রাজনীতিক ও সমাজকর্মী