এপ্রিল ২৫, ২০২২ ১১:১১ পূর্বাহ্ণ
রাশিয়া আগ্রাসনের দুই মাস পার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ স্থানীয় দুই কর্মকর্তা রাজধানী কিয়েভে যাচ্ছেন।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এ সফর পরিকল্পনার ব্যাপারে এখনও কোনো মন্তব্য করা হয়নি। এর আগে প্রেসিডেন্ট বাইডেনসহ মার্কিন নেতারা প্রতিবেশী পোল্যান্ড সফর করেছেন।
গত আট সপ্তাহের এ যুদ্ধে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহর একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। লাখ লাখ মানুষ দেশ থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। দেশের ভেতরেও উদ্বাস্তু হয়েছেন আরও কয়েক লাখ মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের এ দুই কর্মকর্তার সফরের সময় ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে কিনা তা পরিষ্কার নয়।
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সমর বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মাহমুদ আলী বিবিসিকে বলেন, সামরিক সাহায্য দেওয়া কিছুটা সহজ। কিন্তু অর্থনৈতিক সাহায্য বা যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি সমাজকে পুনর্গঠন করা কঠিন, যা আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া কিংবা সিরিয়া কোথাও করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি মনে করেন ইউক্রেনের এ যুদ্ধে পশ্চিমা নেতারা সামরিক সাহায্য জুগিয়ে যাবেন, কূটনৈতিক সহযোগিতাও দেখাবেন কিন্তু অর্থনৈতিক সাহায্য তারা কতটা দিতে রাজি হবেন এ বিষয়ে বলা সম্ভব নয়।
এর মধ্যেই মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র নেড প্রাইস বিবিসিকে বলেন, এ যুদ্ধে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জয়লাভ করবেন, এ যুদ্ধে ইউক্রেন জয়লাভ করতে যাচ্ছে, রাশিয়ার কৌশলগত পরাজয় হতে যাচ্ছে, বলে মনে করছেন তিনি।
যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো ভারি অস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনকে সাহায্য করবে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে প্রাইস বলেন, রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ইউক্রেনীয়দের যা দরকার আমরা সবই পাঠাচ্ছি।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি শুরু থেকেই দাবি করছেন যে তারা এ যুদ্ধে জিতবেন, রাশিয়া কোনোভাবেই জিততে পারবে না। প্রেসিডেন্ট বাইডেন একাধিকবার বলেছেন— পুতিন এ যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারবেন না।
রাশিয়ার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল নেটো জোটকে এ কথা বুঝিয়ে দেওয়া যে ইউক্রেন এই জোটে অন্তর্ভুক্ত হলে রাশিয়া তার বিরুদ্ধে সম্ভব সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে। দ্বিতীয়ত এটি প্রমাণ করা যে ইউক্রেনে রুশ-ভাষী যত নাগরিক রয়েছেন তাদের ওপর ইউক্রেন সরকারের পক্ষ থেকে গত ছয় থেকে সাত বছরে যে ধরনের চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে সেই চাপ রাশিয়া আর গ্রহণ করবে না।
এতদিন তারা যেভাবে রুশ বাহিনীকে প্রতিহত করে চলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও নেটো জোটের সহযোগিতা নিয়ে তারা যেভাবে রাশিয়ার ক্ষতিসাধন করেছে, তাতে তারা মনে করছেন যে এধরনের সাহায্য পেতে থাকলে তারা হয়তো রাশিয়াকে পরাস্ত করতে পারে।
কিন্তু তার মতে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতার চাইতেও বেশি কিছু চাইছে যুক্তরাষ্ট্র, যেন রাশিয়া বিশ্ব ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রে কোনো দিন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে।
গত দুই মাসের যুদ্ধে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ এবং বেসামরিক লোকজনের বাড়িঘর, হাসপাতাল ও থিয়েটারের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে।
রুশ সৈন্যরা দিনের পর দিন বিভিন্ন শহর অবরোধ করে রেখেছে, রাজধানীর কাছে বুচা শহরে পাওয়া গেছে গণকবর। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বেশ কয়েক দফায় শান্তি আলোচনাও হয়েছে।
এখন পর্যন্ত রাশিয়া রাজধানী কিয়েভের পতন ঘটাতে পারেনি, পারেনি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে। রাজধানীর উপকণ্ঠে ইউক্রেনের সৈন্যদের তীব্র প্রতিরোধের মুখ রুশ বাহিনী সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে।
এর মধ্যেই রাশিয়া তার অভিযানের প্রথম পর্বের সফল সমাপ্তি ঘোষণা করে দ্বিতীয় অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এই পর্বে রুশ বাহিনী জোর দিচ্ছে ইউক্রেনের পূর্ব দিকের ডনবাস অঞ্চল দখলের ওপর।
এই লক্ষ্যে তারা দোনবাসের বিভিন্ন অঞ্চলে আক্রমণ করতেও শুরু করেছে। তা হলে কি এ যুদ্ধ আরও অনেক দিন ধরে চলবে?
সমরবিদ সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, বিভিন্ন খবরাখবর দেখে মনে হচ্ছে ৯ মে প্রেসিডেন্ট পুতিন হয়তো এ যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করতে পারেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এ দিনটিতে রাশিয়ার বিজয় হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
শোনা যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট পুতিন হয়তো সেদিন একটা ভাষণ দিয়ে রাশিয়ার সীমিত লক্ষ্য অর্জনের কথা বলে দেশবাসীকে বোঝাতে চেষ্টা করবেন যে এই যুদ্ধের আর প্রয়োজন নেই, বলেন তিনি।
তিনি মনে করেন মারিউপোল যদি সত্যিকার অর্থে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যায় তা হলে তাকে রাশিয়ার আঞ্চলিক বিজয় বলে মনে করা হতে পারে।
তবে পাশ্চাত্যের সহযোগিতা নিয়ে ইউক্রেন যদি রাশিয়ার আরও ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে, তা হলে তারা যুদ্ধ বন্ধ করতে পারবেন কিনা তা বলা কঠিন।
সূত্র : বিবিসি