যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনে গর্ভবতী নারীদের মানসিক চাপের কারণে সময়ের আগে জন্ম নেওয়া শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। দেশটির বিভিন্ন প্রসূতি হাসপাতালে এখন পর্যন্ত দুইশোর বেশি অপরিণত শিশু জন্ম নিয়েছে। খবর ডয়চে ভেলে
ইউক্রেনে গর্ভবতী নারীদের খুব কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। যুদ্ধের ফলে নির্দিষ্ট সময়ের আগে নারীরা সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে দেশটিতে অপরিণত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে।
লাভিবের এক প্রসূতি হাসপাতালে কিছুদিন আগে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন গ্যালিনা গোলেট নামের এক নারী। তিনি বলেন, নির্ধারিত সময় অনুযায়ী তার সন্তান একমাস পর ভূমিষ্ঠ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাচ্চাকে এখন টিউবের মাধ্যমে খাবার দিতে হচ্ছে, বোতল থেকে খাবার নেওয়ার মতো সামর্থ্য তার নেই। তবে সে নিজে নিজে শ্বাস নিতে পারছে। আশা করছি ধীরে ধীরে শক্তি পাবে সে। গোলেট আরও বলেন, গর্ভকালে শেষ সময়টাতে যুদ্ধের ভয়াবহ মানসিক চাপ বহন করতে হয়েছে তাকে।
শুধু লাভিভের এই হাসপাতালটিতে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ২০০ অপরিণত শিশুর জন্ম হয়েছে বলে জানান সেখানকার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মারিয়া মালাচিনস্কা। নির্ধারিত সময়ের আগে জন্ম নেওয়া এত শিশু এর আগে হাসপাতালটিতে দেখেননি তিনি। যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলগুলোতে এই পরিস্থিতি আরো প্রকট। স্থানীয় চিকিৎসকদের তথ্য অনুযায়ী যুদ্ধের প্রথম সপ্তাহে খারকিভে জন্ম নেওয়া প্রতি দুই শিশুর একটি ছিল অপরিণত।
এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা নানা কথা বলছেন। মারিয়া মালাচিনস্কা নামের এক চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ বলেন, যে কোনো মানসিক চাপই গর্ভাবস্থায় প্রভাব ফেলে। সেখানে যুদ্ধের সূচনা তাদের জন্য বিশাল এক ধাক্কার ব্যাপার এবং এখন ভবিষ্যৎ কোনদিকে যাবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
এমন পরিস্থিতির কারণে অপরিণত শিশু জন্মের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করেন মালাচিনস্কা। পাশাপাশি যুদ্ধ বিধ্বস্ত বিভিন্ন অঞ্চলে জন্ম নেওয়া শিশুদের রোগ সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলেও জানান এই চিকিৎসক।
তবে লাভিভের এই হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জামের তেমন সংকট নেই। কেননা যুদ্ধের আগেই সেখানে প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছে গেছে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকেও সহযোগিতা পেয়েছে দেশটির বিভিন্ন হাসপাতাল। কিছুদিন আগেই সেখানে নতুন তিনটি ইনকিউবেটর এসে পৌঁছেছে। তবে সামনের দিনে কী হবে তা নিয়ে শঙ্কিত চিকিৎসক মালাচিনস্কা।
লাভিবের মতো দেশটির সকল হাসপাতালে পরিস্থিতি একরকম নয়। অনেক হাসপাতালে রয়েছে নানা চিকিৎসা সামগ্রীর অভাব। অনেক জায়গায় হাসপাতালে ইনকিউবেটর সংকট রয়েছে, যা অপরিণত শিশুদের বাঁচাতে অত্যাবশ্যকীয়।
যুদ্ধ-সংঘাতের মধ্যেই ইউক্রেনে কমপক্ষে পাঁচ হাজার শিশুর জন্ম হয়েছে। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থার একজন মুখপাত্র আল-জাজিরাকে এ তথ্য জানান।
এছাড়া হাসপাতালে থাকলেও খুব একটা স্বস্তিতে নেই রোগী আর চিকিৎসকেরা। কেননা দেশটির চিকিৎসা স্থাপনাতেও হরহামেশা হামলার ঘটনা ঘটেছে। বার্তা সংস্থা এপির হিসাবে ৪৯টি হাসপাতালে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে গত মার্চে মারিউপলে একটি প্রসূতি হাসপাতালেও হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী।