এপ্রিল ১৪, ২০২২ ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ
বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মেগা প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে দেশের অর্থনীতির চেহারা বদলে যাবে।
তিনি বলেন, পদ্মাসেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে, কোনো ঋণ নেয়া হয়নি। আমরা দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা অর্থনৈতিক সমীক্ষা চালিয়ে বাকি মেগা প্রকল্পগুলো হাতে নিয়েছি। শুধু ঋণের ভিত্তিতে নয়, বিদেশি অংশীদারিত্বের মাধ্যমেও অনেক মেগা প্রকল্প নেয়া হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) এবং বাংলাদেশ বেতারের পাশাপাশি অন্যান্য বেসরকারি চ্যানেলে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য দেশি ও বিদেশি ঋণ নিয়েছে। তবে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে যেন ঋণগুলো বোঝা হয়ে না যায়।
তিনি বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সম্পদ বৃদ্ধি এবং মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২২ এবং ২০২৩ সাল হবে বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের এক মাইলফলক বছর। কারণ আর কয়েক মাস পরেই চালু হতে যাচ্ছে বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মাসেতু। এ সেতু জিডিপিতে ১ দশমিক ২ শতাংশ হারে অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ বছরের শেষ নাগাদ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে মেট্রোরেল চালু হবে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আশা করা যায়, মেট্রোরেল রাজধানী ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আর আগামী অক্টোবর মাসে চট্টগ্রামে কর্ণফুলির নদীর তলদেশ দিয়ে চালু হবে দেশের প্রথম টানেল।
তিনি বলেন, ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিট আগামী বছরের শেষ নাগাদ চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। গত মাসে পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্ধারিত সময়ের আগেই উদ্বোধন করা হয়েছে। অন্যান্য মেগাপ্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিগত ১৩ বছরে যে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে তা অর্থনীতির সামষ্টিক সূচকগুলো বিবেচনা করলেই স্পষ্ট হয়। ২০০৯ সালে জিডিপি’র আকার ছিল মাত্র ১০২ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে তা ৪১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু আয় ৭০২ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ২ হাজার ৫৯১ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ভাবনা এবং দূরদৃষ্টি-সম্পন্ন অর্থনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে বলে তিনি ভাষণে উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব সঙ্কীর্ণতা, কূপমণ্ডূকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবন-ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পহেলা বৈশাখ আমাদের অনুপ্রাণিত করে। মনের ভেতরের সব ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদ্যমে বাঁচার শক্তি যোগায়, স্বপ্ন দেখায়। আমরা যে বাঙালি, বিশ্বের বুকে এক গর্বিত জাতি, পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে স্বাজাত্যবোধ এবং বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণ পায়, উজ্জীবিত হয়।
করোনাভাইরাসের কারণে বিগত দুই বছর জনসমাগম করে উন্মুক্ত স্থানে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানমালা করা যায়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বছর বহিরাঙ্গনে সীমিত আকারে অনুষ্ঠানের আয়োজন হলেও করোনাভাইরাস একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। নতুনরূপে করোনা আবার যেকোনো সময় যেকোনো দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব অনুষ্ঠানে যোগদানের আহ্বান জানান তিনি।