আগস্ট ২৫, ২০২৩ ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ
ব্যাপারটা হবে অনেকটা কলকাতা থেকে দুবাই যাওয়ার পথে দিল্লি কিংবা মুম্বাই বিমানবন্দরে কিছুক্ষণের বিশ্রামের মতো। পরবর্তী উড়ালের জন্য অপেক্ষার সময়টুকু কাটিয়ে নেওয়া। আবার লম্বা সফরের ক্লান্তি থেকেও কিছুক্ষণের স্বস্তি।
দূরের মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার জন্য চাঁদকে তেমনি একটি ‘হল্ট স্টেশন’ বা বিশ্রামক্ষেত্র বানানোর চেষ্টায় রয়েছেন দুনিয়ার বিজ্ঞানীরা। বুধবার ইসরো জানাল, চন্দ্রযান-৩ চাঁদের মাটি স্পর্শ করায় ভারত এই লক্ষ্য পূরণে এক ধাপ এগোল।
ইসরোর প্রধান এস সোমানাথ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সাক্ষাৎকারে সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, কেন চন্দ্রযান-৩ চাঁদে অবতরণের জন্য তার দক্ষিণ মেরুকেই বেছে নিল।
সোমানাথ বলেন, ‘আমরা চাঁদের দক্ষিণ মেরুর থেকে ৭০ ডিগ্রি দূরে অবতরণ করেছি। মানছি, দক্ষিণ মেরুতে আলো-আঁধারি পরিবেশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও এখানে নামার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হলো, চাঁদের এই এলাকায় মহাকাশ গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।’
সোমানাথ বলেছেন, ‘যেসব বিজ্ঞানী চাঁদ নিয়ে গবেষণা করছেন, তারা চাঁদের এই এলাকা নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তার কারণ, শেষ পর্যন্ত মানুষ চাঁদে যেতে চায়। সেখানে থাকার মহল্লাও বানাতে চায়। যাতে সেখান থেকে তারা দূরের মহাকাশে পাড়ি জমাতে পারে। তাই আমরা বলতে পারি, আমরা সেই কাজের জন্য সেরা এলাকাটি খুঁজে বের করার চেষ্টায় রয়েছি। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে তেমন জায়গা খুঁজে পাওয়ার অপার সম্ভাবনা আছে।’
ল্যান্ডার বিক্রমের চারটি পেলোড কী করবে?
চন্দ্রযান-৩-এর ল্যন্ডার থেকে বেরিয়ে এসেছে রোভারটি। তবে ল্যান্ডারও তার কাজ চালিয়ে যাবে। এমনভাবেই ডিজাইন করা হয়েছে তাকে। ল্যান্ডারে দেওয়া হয়েছে চারটি পেলোড। কিন্তু তাদের কাজ কী? প্রথমটি, রম্ভা : এটি চাঁদের পৃষ্ঠে সূর্য থেকে আসা প্লাজমা কণার ঘনত্ব, পরিমাণ এবং পরিবর্তনগুলো তদন্ত করবে। দ্বিতীয়টি চ্যাস্টি : এটি চন্দ্রপৃষ্ঠের তাপ অর্থাৎ তাপমাত্রা পরীক্ষা করবে।
তৃতীয়টি ইলসা : এটি ল্যান্ডিং সাইটের চারপাশে ভ‚মিকম্পের ক্রিয়াকলাপ তদন্ত করবে। আর চার নম্বরে রয়েছে এলআরএ : চাঁদের গতিশীলতা বোঝার চেষ্টা করবে।
প্রপালশন সিস্টেমই কি সাফল্যের প্রধান কারণ?
বিরাট সাফল্য পেয়েছে চন্দ্রযান-৩। কিন্তু যখন এটি কক্ষপথে ঘুরছিল, তখনই ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমানাথ ভারতবাসীকে আশ্বস্ত করতে বলেছিলেন, ‘ভারতের তৃতীয় চন্দ্র অভিযান চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার, বিক্রম, সব সেন্সর এবং এর দুটি ইঞ্জিন কাজ না করলেও ২৩ আগস্ট চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করবে যানটি।
ল্যান্ডারের পুরো নকশাটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই এই মিশনটিকে ব্যর্থ হতে দেবে না।’ প্রপালশন সিস্টেম হলো একটি যান্ত্রিক প্রযুক্তি। এটি মহাকাশ যানটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। যখন সেন্সর, ইঞ্জিন সব কিছু কাজ করা ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেয়, তখন প্রপালশন সিস্টেম কাজ করতে শুরু করে। ফলে এই সাফল্যের পেছনে কিছুটা হাত প্রপালশন সিস্টেমই।
ভারতের চন্দ্রজয়ের নেপথ্যে ৫৪ নারী
পৃথিবীর চতুর্থ দেশ হিসাবে চন্দ্রজয় করে বুধবার ইতিহাস গড়েছে ভারত। এর আগে আর কোনো দেশ যা পারেনি, এদিন সেটিও করে দেখিয়েছে তারা।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফল অবতরণ করা প্রথম যান হিসাবে নাম লিখিয়েছে ভারতের চন্দ্রযান-৩। এই সাফল্যের নেপথ্যে ছিলেন ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার একদল উদ্যোমী বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী। আর তাদের মধ্যে ৫৪ জনই ছিলেন নারী।
তারা সহযোগী পরিচালক, উপ-প্রকল্প পরিচালক এবং বিভিন্ন সিস্টেমের প্রকল্প ব্যবস্থাপকের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন।
তবে চন্দ্রযাত্রার প্রথমেই আসবে ইসরো চেয়ারম্যান এস সোমানাথের নাম।
চাঁদে ভারতের উচ্চাভিলাষী মিশনের পেছনে প্রধান মস্তিষ্ক হিসাবে বিবেচনা করা হয় তাকে। এটি ছাড়াও গগনযান (যাত্রীবাহী মিশন)। আদিত্য-এল ১ (সূর্য মিশন)সহ আরও অনেক মিশনে অবদান রয়েছে এস সোমানাথের।
তিনি ছাড়াও এই চন্দ্রাভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা ছিল চন্দ্রযান-৩ প্রকল্পের পরিচালক পি ভিরামুথুভেল, মিশন পরিচালক মোহনা কুমার, বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টারের পরিচালক এস উন্নীকৃষ্ণান নায়ার, ইউ আর রাও স্যাটেলাইট সেন্টারের পরিচালক এম শঙ্করন, লঞ্চ অথরাইজেশন বোর্ডের (ল্যাব) প্রধান এ রাজারাজন এবং সহযোগী প্রকল্প পরিচালক কে কল্পনার।