‘মধুর আমার মায়ের হাসি/চাঁদের মুখে ঝরে/মাকে মনে পড়ে আমার/মাকে মনে পড়ে।’ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অনুভূতির নাম ‘মা’। ভালোবাসার উচ্চারণ ‘মা’। মা সেইজন যিনি শত ব্যথা বেদনায় সন্তানকে আগলে রাখেন। মমতার আঁচলে রেখে সন্তানকে বড় করেন। সে মমতা পরিমাপ করা যায় না।
এ মাকে ভালোবাসার জন্য বিশেষ কোনো দিনের দরকার নেই। তবুও মায়ের মহিমা তুলে ধরতে এবং তার প্রতি ভালোবাসা জানাতে ‘মা দিবসের’ সৃষ্টি হয়েছে। আজ রোববার বিশ্ব মা দিবস।
যাদের মা কাছে আছেন তারা মায়ের প্রতি সরাসরি ভালোবাসা জানাবেন। আর যারা মাকে ছেড়ে দূরে আছেন তারা হয়তো মোবাইল ফোন বা অন্য কেনোভাবে মায়ের আশীর্বাদ নেবেন। কিন্তু যারা মা-হারা তাদের জন্য আজকের দিনটি বেদনার। তাদের মনে বাজবে ‘একটা চাঁদ ছাড়া রাত/আঁধার কালো,/মায়ের মমতা ছাড়া/কে থাকে ভালো?’ তারা হয়তো মায়ের অনেক স্মৃতিতে ভাসতে ভাসতে অজান্তেই চোখের কোণের জল মুছবেন। মা যেখানেই থাক তাকে কৃতজ্ঞতা জানাবেন।
পৃথিবীর কোনো কিছুই মায়ের সঙ্গে তুল্য নয়। মাকে আম্মা, আম্মু যে নামেই ডাকা হোক না কেন- এর চেয়ে মধুর কোনো শব্দ শব্দকোষে নেই। মাকে নিয়ে কত গান, কবিতা, নাটক, গল্প, উপন্যাসের সৃষ্টি। সন্তানের কাছে সবচেয়ে আপন, সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে তার মা। মায়ের গর্ভে সন্তান যেমন নিরাপদে ধীরে ধীরে বড় হয়, তেমনি জন্মের পরও মা-ই কেবল তার নাড়ি ছেঁড়া ধনকে তিলে তিলে বড় করে তোলেন আগামীর সম্ভাবনাময় একজন মানুষ হিসাবে। মাকে ভালোবাসা আর তার প্রতি হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধার বিষয়টি পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলোতে অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইসলামে মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশতের কথা বলা হয়েছে। অন্য সব ধর্মেও মাতৃভক্তি আর তার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞান সবার উপরে স্থান দেওয়া হয়েছে।
মা দিবস সৃষ্টির একটি ইতিহাস আছে। ১৮৬১ থেকে ১৮৬৪ সাল পর্যন্ত মার্কিন গৃহযুদ্ধে লাখো তরুণ-যুবক প্রাণ হারায়। তাই সন্তানহারা মায়েরা কেঁদে ফেরেন টেক্সাসের পথে পথে। যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে তারা রাজপথে নামেন। ১৮৭০ সালে জুলিয়া ওয়ার্ড হোই নামের এক মা ঘোষণা করেন মা দিবসের ঘোষণাপত্র। এর ৩৮ বছর পর মার্কিন নারী আনা জার্ভিস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে পালন করেন মা দিবস হিসাবে। একটা সময় বিশ্বজুড়ে দিবসটি স্বীকৃতি পায়। তবে, একটা সময় মা দিবস বাণিজ্যিক হয়ে পড়ে। এ কারণে আনা জার্ভিস একে ‘হলমার্ক ডে’ বলতেও দ্বিধা করেননি। কারণ, মাকে কার্ড পাঠিয়ে সত্যিকারের ভালোবাসা প্রকাশ পায় না। মাকে প্রতিটি ক্ষণ মনে রাখার মধ্যদিয়ে অনুভব করতে হয়।
আমাদের দেশে মা দিবস পালনের চল খুব বেশি দিনের নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর কল্যাণে এখন সবারই জানা আজ বিশ্ব মা দিবস। ফেসবুকে মাকে নিয়ে ভালোবাসা, স্মৃতি, মায়ের সঙ্গে ছবি পোস্ট দেওয়া চলবে সারাদিন। মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করবেন অনেকেই।